করোনাভাইরাস মহামারির কারণে উচ্চ মাধ্যমিক সার্টিফিকেট (এইচএসসি) ও সমমানের পরীক্ষা স্থগিত রয়েছে পাঁচ মাস ধরে। গুরুত্বপূর্ণ এই পরীক্ষা কবে হবে তা নিয়ে চলছে নানা আলোচনা। এরই মধ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয় চিন্তা-ভাবনা করছে পরিস্থিতি অনুকুলে আসলে নভেম্বরে এইচএসসি পরীক্ষা নেওয়ার।
সে লক্ষ্যে করোনা নিয়ন্ত্রণে গঠিত ‘জাতীয় টেকনিক্যাল পরামর্শক কমিটির’ সঙ্গে আলোচনাও করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। জাতীয় কমিটি সুপারিশ করলে নভেম্বরে পরীক্ষা নেওয়ার প্রস্তুতি নেওয়া হবে। তবে জাতীয় কমিটি এখনও কোনও সিদ্ধান্ত জানায়নি শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে। সব মিলিয়ে এই পরীক্ষা কবে অনুষ্ঠিত হবে তা নির্ভর করছে ‘জাতীয় টেকনিক্যাল পরামর্শক কমিটির ওপর।
জাতীয় টেকনিক্যাল পরামর্শক কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডা. কাজী তারিকুল ইসলাম বলেন, ‘সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে (পরিস্থিতি অনুকুলে থাকলে) নভেম্বরে পরীক্ষা নেওয়ার ইচ্ছা সরকারের রয়েছে। শিক্ষামন্ত্রী এ বিষয়ে আমাদের সঙ্গে আলোচনা করেছেন। আরও এক মাস বা দুই মাসে পরিস্থিতি যদি নিয়ন্ত্রণে আসে, স্বাস্থ্য বিষেষজ্ঞরা যদি পরিস্থিতি অনুকূলে বলেন তবেই নভেম্বরে পরীক্ষা নেওয়া হবে।’
তবে জাতীয় টেকনিক্যাল পরামর্শক কমিটি এখনও এ বিষয়ে কোনও সাড়া দেয়নি বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। ২০২০ সালের উচ্চ মাধ্যমিক সার্টিফিকেট (এইচএসসি) ও সমমানের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিলো ১ এপ্রিল। কিন্তু করোনার প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে ও শিক্ষার্থীদের জীবনের নিরাপত্তায় তা স্থগিত করা হয়। শিক্ষা মন্ত্রণালয় অপেক্ষায় রয়েছে করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসলেই পরীক্ষা নেওয়া হবে। তবে শিক্ষামন্ত্রণালয় চূড়ান্ত কোনও সিদ্ধান্তে যেতে পারেনি কবে নাগাদ পরীক্ষা নেওয়া যাবে। বিষয়টি পুরোপুরি নির্ভর করছে জাতীয় টেকনিক্যাল পরামর্শক কমিটির মতামতের ওপর।
গত ২৭ আগস্ট জেএসসি ও জেডিসি পরীক্ষা বাতিল ঘোষণার পর এইচএসসি বাতিল হচ্ছে কিনা তা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। পরদিন ২৮ আগস্ট শিক্ষা মন্ত্রণালয় বিষয়টি স্পষ্ট করতে জানায় যে, এইচএসসি পরীক্ষা বাতিলের কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি, বাতিলের কোনও সুযোগও নেই। পরিস্থিতি অনুকুলে আসলেই পরীক্ষা নেওয়া হবে।
সম্প্রতি এক অনলাইন সাক্ষাতকারে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, ‘আমি পরিষ্কার করে বলি— বিভিন্ন সময় বিভিন্ন লোক বিভিন্ন কথা বলেন। সেগুলো নিয়ে সংবাদ মাধ্যমগুলোতে নানারকম সম্ভাবনার কথা বলা হয়। আমি কখনও বলিনি যে, পরীক্ষা কমিয়ে ফেলবো। আমি বলেছি—কোনও কোনও দেশে পরীক্ষার সংখ্যা কমিয়েছে। কোথাও পরীক্ষা ছাড়া অটো-প্রমোশনও হয়েছে। একেক দেশে একেকভাবে সমস্যার সমাধান করেছে। আমরা এর কোনওটির কথাই বলছি না। এগুলো নানান রকমের চিন্তা-ভাবনা। কে কী করছে তা দেখছি, কোনটা কত ভালো তা দেখছি। কতটা মন্দ সেটাও খতিয়ে দেখছি।’
দীপু মনি বলেন, ‘সরকার সবদিক তীক্ষ্ণভাবে খেয়াল রাখছে, সবদিক বিবেচনা করছে। অভিভাবক ও পরীক্ষার্থীর উদ্বেগের কথা ভেবেছি। আমরা যারা সিদ্ধান্ত নিচ্ছি তাদেরও অনেক পরিবারে পরীক্ষার্থী রয়েছে। কাজেই এমন নয় যে, বিষয়টি আমাদের কাছে অজানা। তাই আমরা বলছি—অনুকূল একটা পরিবেশ হলে সঙ্গে সঙ্গেই আমাদের সিদ্ধান্ত জানাবো এবং পরীক্ষার্থীদের কাছে আজকেই জানিয়ে বললাম— কাল থেকে বা দুই দিন পর থেকে পরীক্ষা তা নয়। যখন অনুকূল পরিস্থিতি হবে, ঘোষণা করবো তার থেকে অন্তত পক্ষে দুই সপ্তাহ সময় দিয়ে পরীক্ষা নেব। তাতে আশা করি, আমাদের পরীক্ষার্থীদের সমস্যা হবে না।’
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘একইসঙ্গে আমাদের নিজস্ব পরিকল্পনাও একটা আছে। আমাদের এইচএসসির সম্পূর্ণ প্রস্তুতি ছিল, এখনও আছে। কিন্তু আমরা সবাই জানি এখন কি পরীক্ষা নেওয়ার অনুকূল পরিস্থিতি আছে? ১৪ লাখ পরীক্ষার্থী। সমাজটা যেমন, তাতে পরীক্ষার্থী যখন পরীক্ষা দিতে যাবেন, তখন পরিবারের কেউ না কেউ সেখানে যাবেন। বামা-মা, ভাইবোন সব সময় সঙ্গে যান। তারাও লাখ লাখ। যারা পরীক্ষা পরিচালনা করবেন তারাও লক্ষাধিক। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা থাকবেন এবং প্রশাসনের লোকসহ নানা রকম লোকের সম্পৃক্ততা রয়েছে সরাসরি। এত লাখ মানুষ, হয়তো ২০/২৫ লাখ হবে। এই মানুষগুলোকে নিয়ে যে পরীক্ষা হবে, যাদের বেশিরভাগ লোক চলাচল করবেন গণপরিবহনে। এত লোকের সমাগমে যে কর্মযজ্ঞ তা এখন করার মতো আদৌ পরিবেশ আছে?’