সাইবার জগতে বর্তমানে ফেসবুকের নাম জানেন না এমন মানুষের সংখ্যা খুব কমই। আর ফেসবুকের পাশাপাশি ফেসবুকে সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবেও মার্ক জাকারবার্গ এখন সারাবিশ্বের ফেসবুক ব্যবহারকারীদের পাশাপাশি সবারই পরিচিত। যুক্তরাষ্ট্রের এ কম্পিউটার বিজ্ঞানী ও সফটওয়্যার ডেভলপারের পুরো নাম মার্ক এলিয়ট জাকারবার্গ। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী থাকাকালীন সময়েই তৈরি করেন ফেসবুক। আর মাত্র ২৬ বছর বয়সেই জাকারবার্গ বিশ্বখ্যাত ম্যাগাজিনে টাইমের দৃষ্টিতে বছরের সেরা ব্যক্তিত্ব নির্বাচিত হন। বর্তমানে বিলিয়নিয়ার মার্ক জাকারবার্গকে নিয়ে রয়েছে নানা ধরনের কাল্পনিক কাহিনী। তরুন বয়সেই বিশ্বসেরা ধনী ব্যক্তিদের তালিকায় যুক্ত হওয়া মার্কের জীবনী নিয়ে ‘দি সোশ্যাল নেটওয়ার্কে’ও বেশ কিছু বিষয় দেখানো হয়েছে যদিও সেটি একটি সিনেমা হিসেবেই পরিচিত। ইন্টারনেটে হাজার ওয়েবসাইট আর বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগের সাইটগুলোর পাশাপাশি এসবের সঙ্গে যুক্ত শীর্ষ ব্যক্তিদের নিয়ে নানা ধরনের মিথ। মার্ক লোকেশন শেয়ারিং অ্যাপ গ্ল্যান্সি যেমন অধিগ্রহণ করেছেন তেমনি হোয়াটসঅ্যাপও অধিগ্রহণ করেছেন। ১৯৮৪ সালে জন্মগ্রহণ করেন মার্ক।
একক সিদ্ধান্ত!
নিজের এক সিদ্ধান্তে সব সময়েই অটল মার্ক জাকারবার্গ! যখন কোন একটি বিষয়ে তিনি কিছু করার চিন্তা করেন সে সময়ে কেউ এর বিরুদ্ধে বললে সেটি ভালো ভাবে নেন না তিনি! এমনই দেখানো হয়েছে ‘দি সোশ্যাল নেটওয়ার্ক’ ছবিতে। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকাকালীন সময়ে তার বন্ধু এবং সহযোগী এডুয়ার্ডো সেভেরিন মার্কের একটি উদ্যোগে দ্বিমত করায় তাকে ছাড়াই তিনি সে কাজ শুরু করে দিয়েছিলেন। তবে পরবর্তীতে এ বিষয়টি পুরো সত্য নয় বরং একটি মিথ হিসেবেই প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। জাকারবার্গের ব্যক্তিত্বের ক্ষেত্রে এটি একটি গুণ ছিলো বলে উল্লেখ করা হয় ডেভিড ক্রিকপ্রেট্রিকের ‘দি ফেসবুক ইফেক্ট’ বইতে। জাকারবার্গের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে খুব কাছাকাছি থেকে কাজ করা নিজের সিদ্ধান্ত নিজে নিলেও একক ভাবেই সব হবে এমন কিছু কখনোই ভাবেন না মার্ক।
সামাজিক ভাবে বেমানান মার্ক!
মার্ক জাকারবার্গ সামাজিক সাইট তৈরি করে নিজেই সামাজিক ভাবে বেমানান! ফেসবুক নিয়ে নির্মিত ছবিতে এমন কিছু দৃশ্য দেখালেও বাস্তবের ঘটনা ভিন্ন। হার্ভার্ডে থাকাকালীন সময়ে তার রুমের সহযোগী জয়ী গ্রীণ তাকে বেশ বিশ্বস্ত বন্ধু হিসেবে উল্লেখ করেছেন। ‘দি ফেসবুক ইফেক্ট’ বইতে উল্লেখ করা হয়েছে, মার্ক দারুন মানুষ, তিনি শুধু সামাজিকই নন বরং অত্যন্ত সামাজিক! আরেক লেখক যিনি ফেসবুকে দীর্ঘদিন কাজ করেছেন ক্যারল ব্যলোন। তিনি বলেছেন, মার্ক সত্যিকার ভাবেই একজন কঠিন পরিশ্রমী মানুষ। ধীরে ধীরে কাজ করে তিনি এখন বেশ ব্যক্তিত্বসম্পন্ন একজন সামাজিক মানুষ। সুতরাং এটা বলার অপেক্ষা রাখে না মার্কের বিরুদ্ধে যে সামাজিক ভাবে বেমানান বলা হয়েছে তা একটি মিথ।
ব্যবসায়িক ভাবে দ্রুত এগিয়ে যাওয়ার ক্ষমতা কম!
মার্ক জাকারবার্গ। ছবি: ডেভিল এল. রায়ান/দ্য বোস্টন গ্লোব
সাধারণত ব্যবসায়ীরা ব্যবসার উন্নতির জন্য যেমন দ্রুত কাজ করেন মার্ক তেমন নন! ২০০ কোটি ব্যবহারকারী নিয়ে বর্তমানে বিলিয়নিয়ার প্রতিষ্ঠানের মধ্যে অন্যতম ফেসবুকের প্রধান নির্বাহী ব্যবসার ক্ষেত্রে দ্রুত সিদ্ধান্ত কিংবা কাজ করতে পারেন না! তিনি শিক্ষার্থী অবস্থায় এমন করেছেন যেখানে একটি টি-শার্ট আর জিন্স পরেই কাজ করে গেছেন তিনি এবং এখনও মাঝে মাঝেই এমন পোষাকে গুরুত্বপূর্ণ জায়গায়ও তাকে দেখা যায়! তবে ব্যবসায়ীক দিক দিয়ে এমন দ্রুত গতির কথা স্বীকার না করলেও প্রযুক্তির দিক দিয়ে দ্রুত হিসেবে মার্কে সফলতার কথা অনেকেই জানেন। তবে এর পাশাপাশি ব্যবসাটাও যে ভালো বোঝেন তিনি সেটিও প্রমানিত। তাই ব্যবসায়িক ভাবে দ্রুত এগিয়ে যাওয়ার ক্ষমতা কম বলে যে কথা শোনা যায় তা পুরোটাই মিথ। বলা হয় তিনি যদি ব্যবসা দ্রুত করাটা না বুঝতেন তা হলে ফেসবুক শেয়ার থেকে এত দ্রুত অর্থ তুলতে পারতেন না। এছাড়া ফেসবুকের দুই বছর পূরণ হওয়ার পর ইয়াহু থেকে ১০০ কোটি ডলারে ফেসবুক কেনার অফার ফিরিয়ে দিয়ে ব্যবসায়িক বিষয়টিকেই আবার প্রমান করেছেন তিনি।
উদ্ধত মার্ক!
‘দি সোশ্যাল নেটওয়ার্ক’ যারা দেখেছেন তারা জানেন এতে মার্কের চরিত্রটিকে উদ্ধত হিসেবেই দেখানো হয়েছে। শুধু উদ্ধতই নয় বরং বেশ অহংবোধ ব্যক্তি হিসেবেই ক্যামেরায় দেখা গেছে মার্ককে। এছাড়া বিনিযোগকারীদের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ মিটিং এমনটি ফেসবুকে আইপিও ঘোষনার সময়ই যখন সারাবিশ্ব তাকিয়ে ছিলো টেলিভিশনের দিকেও তখনও তিনি ছিলেন সাধারণ একটি টি-শার্ট এবং জিন্স পরিহিত। এ জন্য মার্ককে উদ্ধত কিংবা অহংবোধ ব্যক্তি বলা হয়। তবে যারা মার্কের সঙ্গে কাজ করেছেন কিংবা তার সঙ্গে থেকেছেন তারা এটিকে এক বাক্যে না বলে দিয়েছেন। তাদের মতে, মার্ক অনেক বেশি ব্যক্তিত্বসম্পন্ন। তিনি বন্ধুত্বপূর্ণ এবং তার অনেক বন্ধু রয়েছে। তার সঙ্গে যারা মিশেছেন তারা জানেন মার্ক কখনও উদ্ধত আচরন দেখাননি। বরং তার পছন্দের পোষাক হিসেবেই তিনি টি-শার্ট পরেন। তাই বলা যায় মার্ক উদ্ধত এবং অহংবোধ সম্পন্ন ব্যক্তি এটি সত্যি নয়। বরং একটি মিথ।
মার্ক ব্যক্তি হিসেবে সস্তা!
এত বড় এবং জনপ্রিয় একটি প্রতিষ্ঠানের প্রধান হিসেবে যেমন থাকার কথা তেমন নন মার্ক জাকারবার্গ। ব্যক্তি হিসেবে তিনি অনেক সস্তা যিনি হরহামেশাই পোষাক হিসেবে টি-শার্ট আর জিন্স পরে থাকেন! তিনি যখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছেন তখনও ছিলেন এমন পোষাকে। বিয়ের সময়েও যেমন আশা করা যায় সেটিও মার্কের সঙ্গে মানানসই নয়! তবে এসবের জন্য যে তিনি ব্যক্তি হিসেবে সস্তা এমন মন্তব্যের সঙ্গে একমত নন মার্কের বন্ধু কিংবা সহকর্মীরা। তাদের মতে, হতে পারে তার টি-শার্ট খুবই পছন্দের কিংবা হতে পারে বিয়েতে তিনি এবং তার স্ত্রী চাননি খুবই জাকজমক হোক। এটি ব্যক্তিগত বিষয় থাকতে পারে তবে সেটি প্রমান করে না তিনি খুব সস্তা। বরং এসবের চেয়ে উন্নয়ন মূলক কাজে সাহায্য করতেই বেশি পছন্দ করেন মার্ক। তাই বলা যায় ব্যক্তি মার্ক একজন সস্তা ব্যক্তি এটিও পুরোই এইট মিথ।