কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে পুনরায় বিদ্যালয় খোলার ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যবিধি মেনে কী কী পদক্ষেপ নিতে হবে তার একটি নির্দেশিকা তৈরি করেছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। সেখানে অন্তত ৩৫টি নির্দেশ মানার কথা বলা হয়েছে।
দেশের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো খুলে গেলে শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মচারীদের সরকার নির্দেশিত স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। বিদ্যালয়ের অবকাঠামো ও শিক্ষার্থীর সংখ্যা বিবেচনা করে একাধিক পালা বা সপ্তাহের একেক দিন একেক শ্রেণির পাঠদানের ব্যবস্থা রেখে পরিকল্পনা প্রণয়ন করবে।
মঙ্গলবার গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সব বিদ্যালয়ে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকে কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে জনস্বাস্থ্য ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে বিদ্যালয় পুনরায় চালুর নির্দেশিকা পাঠাতে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকে অনুরোধ করেছে।
বিদ্যালয় খোলার আগেই এই নির্দেশিকা অনুযায়ী প্রস্তুতি নিতে হবে। এ জন্য নির্দেশিকাটি বিদ্যালয় পর্যায়ে পাঠানোর জন্যও সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।
তবে বিদ্যালয় কবে খুলবে সে বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। সর্বশেষ ঘোষণা অনুযায়ী, আগামী ৩ অক্টোবর পর্যন্ত দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে। গত ১৭ মার্চ থেকে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, বিদ্যালয় পুনরায় চালুর সুস্পষ্ট সরকারি নির্দেশনা দেওয়া হবে। এ ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এবং স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের জারি করা নির্দেশনা অনুসরণ করা হবে।
বিদ্যালয় পুনরায় চালুর করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হলে নিরাপদ এলাকা ও পরিস্থিতি বিবেচনায় এলাকাভিত্তিক বিদ্যালয় চালু করা যেতে পারে। করোনা সংক্রমণ বিবেচনায় কোনো এলাকাকে সরকার ‘রেড জোন’ ঘোষণা করলে সেই এলাকায় বিদ্যালয় খোলা রাখা যাবে না। বিদ্যালয় কার্যক্রম পুনরায় চালু করার আগে বিদ্যালয় পরিচালনার জন্য পরিকল্পনা ও প্রয়োজনীয় অর্থায়নের ব্যবস্থা করতে হবে।
বিদ্যালয় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা এবং জীবাণুমুক্তকরণ, শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা, হাতা ধোয়া, হাঁচি-কাশি বিষয়ক শিষ্টাচার, সুরক্ষা সরঞ্জামের ব্যবহার, অসুস্থদের জন্য করণীয় এবং নিরাপদ খাদ্যদ্রব্য প্রস্তুত করার অভ্যাস গড়ে তুলতে নির্দেশনা সংবলিত পোস্টার ও লিফলেট বিতরণ করতে বলা হয়েছে এই নির্দেশনায়। এ ছাড়া শিশুদের বিদ্যালয়ে আনার জন্য বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। হাত ধোয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করতে নিরাপদ পানি সরবরাহের ব্যবস্থা করতে হবে। ছেলে ও মেয়েদের জন্য পৃথক শৌচাগার স্থাপন বা সম্প্রসারণ করতে হবে। মেয়ে শিশুদের ঋতুকালীন স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা রাখতে হবে। বিদ্যালয় খোলার আগে অবশ্যই বিদ্যালয় প্রাঙ্গণসহ শ্রেণিকক্ষ, অফিসকক্ষ ও টয়লেটগুলো স্বাস্থ্যসম্মত ও জীবাণুমুক্ত করতে হবে। এ জন্য প্রয়োজনীয় জীবাণুনাশক, সাবানসহ অন্যান্য পরিচ্ছন্নতা উপকরণ সংগ্রহ করতে হবে। প্রতিদিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চত্বরের আবর্জনা পরিষ্কার ও আবর্জনা সংরক্ষণকারী পাত্র জীবাণুমুক্ত করতে হবে। আর পাঠ পরিকল্পনায় পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের অগ্রাধিকার দিতে হবে।
নির্দেশনায় বলা হয়েছে, অসুস্থ শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মচারী এবং সন্তান সম্ভবা নারী শিক্ষককে বিদ্যালয় আসতে হবে না। বিদ্যালয় কার্যক্রমের শুরু, শেষ এবং মিড ডে মিলের কর্মসূচি এমনভাবে সাজিয়ে নিতে হবে, যাতে শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকদের জটলা তৈরি না হয়। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রবেশপথে শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে শিক্ষক, কর্মচারী ও শিক্ষার্থী এবং বহিরাগতদের তাপমাত্রা মাপতে হবে। এ জন্য বিদ্যালয় খোলার আগেই প্রয়োজনীয়সংখ্যক নন-কন্টাক থার্মোমিটার সংগ্রহ করতে হবে। যাদের তাপমাত্রা বেশি পাওয়া যাবে তাদের বিদ্যালয়ে প্রবেশ থেকে বিরত রাখতে হবে। স্বাভাবিক অবস্থা না আসা পর্যন্ত কোনো ধরনের অভ্যন্তরীণ জমায়েত আয়োজন করা যাবে না। বিদ্যালয় চলাকালীন অত্যাবশ্যক না হলে কেউ বাইরেও যাবে না।
এ ছাড়া কারও মধ্যে কোভিড-১৯ এর সন্দেহভাজন উপসর্গ পাওয়া গেলে তাৎক্ষণিকভাবে স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষকে জানাতে হবে এবং যারা তার সংস্পর্শে এসেছেন তাদের দ্রুত শনাক্ত করে কোয়ারেন্টাইনের ব্যবস্থা করতে হবে। প্রত্যেক উপজেলা শিক্ষা কার্যালয়ে তথ্যকেন্দ্র স্থাপন করতে হবে, যাতে অভিভাবকসহ স্থানীয় মানুষ প্রয়োজনীয় তথ্য পেতে পারে।