অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে এসে ঘরের পরিবেশ না পেলে শিশুর অন্য আরও কিছু সমস্যা দেখা দিতে পারে এমন শঙ্কায় তাদের মানসিক স্বাস্থ্যর দিকে খেয়াল রাখার কথা বলা হয়ে থাকে। অনেক না-পাওয়া ও প্রতিকূলতার মধ্যেই রাজধানীতে একমাত্র সরকারি শিশু হাসপাতালটি হয়ে উঠছে শিশুবান্ধব।
পরিচ্ছন্ন মেঝে, খেলার জায়গা, খোলামেলা থাকার জায়গা করে দেওয়ার চেষ্টা দৃশ্যমান। অভিভাবকরা বলছেন, একটু স্বস্তিদায়ক জায়গা না হলে বাচ্চাদের রাখাটাই মুশকিল হয়ে যায়। ওরা হুট-হাট যেখানে সেখানে বসে পড়ে, এটা ওটা মুখে তোলে। এখানে বেশ পরিচ্ছন্ন থাকায় চিন্তামুক্ত থাকতে পারছি। আর কর্তৃপক্ষ বলছে, হাসপাতালে অবকাঠামোগত সমস্যা আছে, টয়লেট ফিটিংস প্রায় ভাঙা পাওয়া যায়। নিয়মিত পরিদর্শন করে সেগুলো ঠিক রাখার চেষ্টা করা হয় কিন্তু শতভাগ সফলতা আসেনি।
বুধবার (১৬ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর শ্যামলীতে অবস্থিত ঢাকা শিশু হাসপাতাল সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, হাসপাতালের প্রতিটি ফ্লোরই পরিষ্কার, করিডোরগুলোতে নেই কোনও ময়লা বা দুর্গন্ধ। তবে সাধারণ ওয়ার্ড কিছুটা পরিষ্কার থাকলেও কয়েকটি ওয়াশরুম অপরিষ্কার পাওয়া গেছে। কয়েকটির ফিটিংস নষ্ট রয়েছে। এছাড়া অন্যসব শয্যা যথেষ্ট পরিষ্কার পাওয়া গেছে। অন্যদিকে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা রোগীদের কাছ থেকে তেমন কোনও অভিযোগ পাওয়া যায়নি।
হাসপাতালটির মধ্য অংশে রয়েছে শিশুদের একটি পার্ক। পার্কটিও যথেষ্ট পরিষ্কার পাওয়া গেছে। সেখানে শিশুদের খেলতেও দেখা গেছে। এছাড়াও হাসপাতালটির কয়েকটি ওয়ার্ডে রয়েছে শিশুদের জন্য আলাদা খেলার জায়গা। ওয়ার্ডগুলোতে শিশুদের সঙ্গে অভিভাবকদের খেলাধুলা করতেও দেখা গেছে। বলা যেতে পারে, হাসপাতালটিতে শিশুদের জন্য অনেকটা সুন্দর পরিবেশ রয়েছে ।
ঢাকা শিশু হাসপাতাল বাংলাদেশের একমাত্র এবং সর্ববৃহৎ শিশু স্বাস্থ্য প্রদানকারী সরকারি প্রতিষ্ঠান। শিশু স্বাস্থ্যসেবা দেশের সর্বস্তরে পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্য নিয়ে এই হাসপাতালটি প্রতিষ্ঠিত হয়। বর্তমানে হাসপাতালটিতে সর্বমোট শয্যা রয়েছে ৬৬৪টি। সঙ্গে আছে শতাধিক শয্যার ৪টি আইসিইউ ইউনিট।
হাসপাতালটির বর্তমান অবস্থা ও পরিকল্পনা নিয়ে কথা হয় ঢাকা শিশু হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. প্রবীর কুমার সরকারের সঙ্গে। তিনি বলেন, আমাদের সবচেয়ে বড় সমস্যা অবকাঠামোগত। আমাদের একটি বড় স্থাপনা দরকার। বর্তমান অবস্থা থেকে যদি বড় ও আধুনিক স্থাপনা তৈরি করা যায় তাহলে শিশুদের চিকিৎসার জায়গাটি আরও এগিয়ে যাবে। আমরা চেষ্টা করছি সিটি-এমআরআই মেশিন স্থাপনের, ওয়ান স্টপ সার্ভিস চালু এবং সম্পূর্ণ কম্পিউটারাইজড ডিজিটাল বিল্ডিং ম্যানেজমেন্টের ব্যবস্থা করার। আমাদের অর্থনৈতিক লিমিটেশন থাকলেও একটু একটু করে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছি’।
নষ্ট ও সংস্কার যোগ্য অবকাঠামোর বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমি ফ্রিকোয়েন্টলি ওয়াশরুমগুলোতে ঢুকি। আমার কাছে মনে হয়, কিছু চক্র একটা সুযোগ নেয়। তাদের হসপিটালে কিছু জিনিসপত্র নষ্ট করার প্রবণতা রয়েছে। বাকিটুকু আমাদের দেশের মানুষ বেশি সচেতন না। আমরা প্রতিনিয়ত পরিষ্কার করছি, কিন্তু ধরে রাখতে পারছি না। এটার জন্য আমাদের দোষটা সর্বোচ্চ, আমরা স্বীকার করি। তুলনামূলক কম শিক্ষিতদের প্রতিনিয়ত মোটিভেট করার যে প্রক্রিয়া, সেটাতে আমাদের কিছু ঘাটতি আছে। যদি মাইকিং করার ব্যবস্থা থাকতো এবং এক্সট্রা ম্যান-পাওয়ার থাকতো, তাহলে এটা হয়তো সমাধান করতে পারতাম। আশা করছি, আমাদের হসপিটালের এমন পরিস্থিতি একটু একটু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ঠিকঠাক হয়ে যাবে’।
পরিকল্পনার কথা জানাতে গিয়ে এই চিকিৎসক বলেন, আমরা একটি রূফটপের কথা ভাবছি। যেখানে শিশুবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত হবে। ওখানে গেলে একটা শিশু তার অসুস্থতার কথা অর্ধেকটা ভুলে যাবে। এটা আমাদের প্ল্যানিং এর মধ্যে আছে। আমরা সব কিছুই শুরু করি কিন্তু পরে সেটা এগিয়ে নিতে পারি না। বড় স্থাপনাটি হলে শিশুদের মনোবিকাশ ও উন্নতি সাধনের জন্য ভালো একটা কাজ হবে।