নতুন বছরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নবম শ্রেণির ভর্তিতে পরীক্ষা নেওয়ার চিন্তা করছে শিক্ষা প্রশাসন। আবেদন ফি ১৫০ টাকার স্থলে আরও ২০ টাকা বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হচ্ছে সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ভর্তির নীতিমালা-২০১৭-এ।
শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ ও মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. সোহরাব হোসাইন বিদেশ সফরে থাকায় নীতিমালা চূড়ান্ত করতে দেরি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) কর্মকর্তারা।
জানা গেছে, শিক্ষা মন্ত্রণালয় গত বছরের ভর্তি নীতিমালা জারি করে ৬ নভেম্বর ২০১৬। আজ ৬ নভেম্বর হলেও আরও ১০-১২ দিন বিলম্ব হতে পারে সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ভর্তির নীতিমালা-২০১৭ জারি করতে।
মাউশির সহকারী পরিচালক (মাধ্যমিক-১) সাখায়েত হোসেন বিশ্বাস গতকাল আমাদের সময়কে জানান, নতুন বছরের ভর্তি নীতিমালায় তেমন পরিবর্তন আসবে না। দুয়েকটি বিষয়ে পরিবর্তনের জন্য অধিদপ্তর থেকে খসড়ায় প্রস্তাব থাকবে। এর মধ্যে প্রথমত নবম শ্রেণিতে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া এবং দ্বিতীয়ত আবেদন ফি আগের ১৫০ টাকা থেকে ২০ বৃদ্ধি করে ১৭০ টাকা নির্ধারণ করা।
আবেদন ফি বৃদ্ধির যৌক্তিক কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ২০১০ সাল থেকে ১৫০ টাকা করে আবেদন ফি নেওয়া হচ্ছে। সময়ের প্রেক্ষাপটে ২০ টাকা বৃদ্ধি হলে অভিভাবকদের জন্য সমস্যা হওয়ার কথা নয়।
কারণ ভর্তির আবেদন ফি বাবদ বিদ্যালয়প্রাপ্ত অর্থের ৫০ শতাংশ অর্থ দিয়ে বিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষাসংক্রান্ত যাবতীয় খরচ যেমনÑ বিজ্ঞপ্তি প্রচার, আবেদন ফরম প্রস্তুত ও উত্তরপত্র মুদ্রণ, যাতায়াত, ফরম বিতরণ, আসন বিন্যাস, পরীক্ষা গ্রহণ, আপ্যায়নসহ বিদ্যালয়ের কর্মরত সবার সম্মানী/পারিশ্রমিক, বিবিধ খচর ইত্যাদি ব্যয় নির্বাহ করতে হয়। বাকি ৫০ শতাংশ অর্থ ভর্তি কমিটির কাছে জমা দিতে হয়। এ অর্থ দিয়ে কমিটি ভর্তিসংক্রান্ত সভার খরচ, প্রশ্নপত্র প্রণয়ন, মডারেশন ও মুদ্রণ, প্রশ্নপত্র ভেন্যুতে প্রেরণ, কোড নম্বর প্রদান, উত্তরপত্র মূল্যায়নের সম্মানী ও আপ্যায়ন, ডিকোডিংসহ ফল তৈরি, যাতায়াত, কমিটির সদস্য ও সংশিষ্ট সবার সম্মানী এবং বিবিধ খরচ ইত্যাদি কাজে ব্যয় হয়।
আগের নিয়ম : প্রথম শ্রেণির ভর্তির জন্য লটারির মাধ্যমে প্রার্থী নির্বাচন করতে হয়। তবে ২য় থেকে ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত নেওয়া হয় ভর্তি পরীক্ষা। অষ্টম শ্রেণির ফলের মেধাতালিকা অনুযায়ী ভর্তি হতো নবম শ্রেণিতে। আবেদন ফি ১৫০ টাকা।
এ ছাড়া ঢাকা মহানগরীর সরকারি ও বেসরকারি স্কুলগুলোয় এলাকার শিক্ষার্থীদের ৪০ শতাংশ কোটা রেখে বাকি ৬০ শতাংশ উন্মুক্ত। ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তির ক্ষেত্রে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ৫ম শ্রেণি উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের জন্য সংরক্ষিত মোট আসনের ১০ শতাংশ। ৫ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা, ২ শতাংশ প্রতিবন্ধী কোটা, আরও ২ শতাংশ কোটা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সন্তানদের জন্য সংরক্ষিত।
প্রথম শ্রেণিতে ভর্তির ক্ষেত্রে ১ জানুয়ারি তারিখে বয়স ৬ প্লাস হওয়া লাগবে। বয়সের ঊর্ধ্বসীমা বিদ্যালয়গুলো নির্ধারণ করবে। বয়স প্রমাণের জন্য নিবন্ধন সনদ লাগবে। এ ছাড়া দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণিতে গত বছরের মতোই ৫০ নম্বরের এক ঘণ্টার ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া হবে। চতুর্থ থেকে নবম শ্রেণিতে ১০০ নম্বরের ২ ঘণ্টার পরীক্ষা নেওয়া হতে পারে।
দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণিতে বাংলা ১৫, ইংরেজি ১৫ ও গণিতে ২০ নম্বর করে মোট ৫০ নম্বরের এক ঘণ্টার এবং অন্যান্য শ্রেণিতে বাংলা ৩০, ইংরেজি ৩০ ও গণিতে ৪০ নম্বর করে মোট ১০০ নম্বরের ২ ঘণ্টার পরীক্ষা থাকবে।
ঢাকা মহানগরী ও জেলা শহরের সরকারি স্কুলে আবেদন করতে হবে অনলাইনে। আর বেসরকারি বিদ্যালয়, যাদের সক্ষমতা রয়েছে, তাদের অনলাইনে আবেদন গ্রহণের নির্দেশনা দেওয়া হবে। যদিও বেশ কয়েকটি বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সরকারের নীতিমালা জারির আগেই ভর্তি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে ফরম বিতরণ শুরু করেছে।
এ বছর রাজধানীর ৩৫টি সরকারি স্কুলে আবেদন করতে পারবেন অভিভাবকরা। তবে এর মধ্যে ১৪টিতে প্রথম শ্রেণি রয়েছে। প্রায় এক হাজার ৬০০ মতো আসনে ভর্তি হবে প্রথম শ্রেণি। ২য় শ্রেণি থেকে নবম শ্রেণির আসন শূন্যের পরিসংখ্যান জানা যাবে বার্ষিক পরীক্ষার ফল প্রকাশের পর।