একসময় উন্নত বিশ্বের রোগ হিসেবে পরিচিত ক্যানসার বিষাক্ত ছোবল এনেছে আমাদের দেশেও। এর পরিধিও ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। ক্রমবর্ধমান ক্যানসার রোগী পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের জন্য তৈরি করছে নানামুখী চাপ ও সংকট।
বাংলাদেশে প্রায় ১৫ লাখ মানুষ ক্যানসার রোগে আক্রান্ত। প্রতিবছর ১ লাখ ৫০ হাজার ৭৮১ জন নতুন ক্যানসার রোগী শনাক্ত হয়। এর মধ্যে প্রায় ১ লাখ ৮ হাজার ১৩৭ জন রোগী মারা যায়। (সূত্র: বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, গ্লোবেক্যান, ২০১৮)
আমাদের দেশে বিলম্বে ক্যানসার নির্ণয় হয় বলে পুরোপুরিভাবে রোগ নিরাময় করা সম্ভব হয়ে ওঠে না। কারণ, এটি শরীরের এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় ছড়িয়ে পড়ে এবং বিভিন্ন উপসর্গ তৈরি করে। ক্যানসারের ব্যথা (ক্যানসার পেইন) একটি মারাত্মক ও যন্ত্রনাদায়ক উপসর্গ। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ব্যথা উপশমের লক্ষ্যে চিকিৎসা দেওয়া হয়ে থাকে। ওয়ার্ল্ড হসপিস অ্যান্ড প্যালিয়েটিভ কেয়ার ডে পালিত হয় অক্টোবরের দ্বিতীয় শনিবার। সে হিসাবে এবার ১০ অক্টোবর এ দিবস পালন করা হয়। এবারের প্রতিপাদ্য-মাই কেয়ার, মাই কমফোর্ট (আমার যত্ন, আমার আরাম) ।
প্যালিয়েটিভ কেয়ারের মূল লক্ষ্য ক্যানসারের ব্যথায়ন চিকিৎসা প্রদানের মাধ্যমে উপশম করা। প্রায় ৮০ শতাংশ উন্নয়নশীল দেশের লোকের হসপিস ও প্যালিয়েটিভ কেয়ারের প্রয়োজন জীবনের শেষ দিনগুলোর জন্য।
ব্যথার কারণগুলো নির্ণয় করে চিকিৎসা দিলে উপশম করা যায়।
যেমন-
- ক্যানসার নিজেই ব্যথার সৃষ্টি করে।
- ক্যানসারের সঙ্গে সম্পৃক্ত মাংসপেশির খিঁচুনি, হাত-পা ফুলে যাওয়া, লিম্ফোডিমা, কোষ্ঠকাঠিন্য, বেডসোর ইত্যাদি।
- শল্যচিকিৎসাত্তোর ক্ষতের কারণে।
- রেডিওথেরাপি ও কেমোথেরাপির পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় মুখে ও খাদ্যনালিতে ঘা হওয়া।
- নার্ভ কমপ্রেশন, নার্ভ ইনজুরি, ক্যানসারের কারণে মাথার ভেতরের সেরিব্রোস্পাইনাল ফ্লুইডের চাপ বেড়ে গেলে ব্যথা হয়।
- হাড় ও জোড়া ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়া, ক্ষয় হওয়া ও আর্থ্রাইটিসের জন্য।
এ ছাড়া রোগীর মানসিক অবস্থার পরিবর্তনের কারণে ব্যথার তীব্রতা বেড়ে যায়। দুশ্চিন্তা, ভয়ভীতি, বিষণ্নতা, হতাশাও ব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এসব দিক বিবেচনা করে ব্যথাকে নিরাময় করাই প্রধান লক্ষ্য হওয়া উচিত, যাতে রোগীরা ব্যথামুক্ত অবস্থায় স্বাচ্ছন্দ্যে বেঁচে থাকতে পারে।
ক্যানসারের ব্যথা নিরাময়ের জন্য করণীয়
- রোগীর সঙ্গে ভালো সম্পর্ক গড়ে তোলা।
- ব্যথার নির্দিষ্ট কারণ অনুযায়ী চিকিৎসা দেওয়া।
- মানসিক চিকিৎসা প্রদানের সঙ্গে ব্যথার কারণ বিশ্লেষণ করা।
- প্রথমে সাধারণ ব্যথার ওষুধ ব্যবহার করা।
- এর পরের ধাপে এনএসআইডি যোগ করা।
- সবশেষে প্রয়োজনে মরফিন ও প্যাথেড্রিন জাতীয় ওষুধ দেওয়া।
- নির্দিষ্ট কারণের জন্য যথাযথ চিকিৎসা দেওয়া।