চাঁচড়া শিবমন্দির, যশোর

চাঁচড়া শিবমন্দির, যশোর

যশোর শহর থেকে খুলনার পথে, অর্থাৎ যশোর-বেনাপোল হাইওয়েতে আসা যাওয়া করবার সময় বেশ ক’বার চোখে পড়েছিল এই টেরাকোটার কারুকাজসমৃদ্ধ মন্দিরটা, কিন্তু থেমে এবং নেমে দেখবার সুযোগ মিললো মাত্র একবারই।

জায়গাটার নাম নিয়ে কনফিউশন আছে। কেউ বলে চাঁচড়া রাজবাড়ী, আবার কেউ বলে চাঁচড়া মন্দির। ইতিহাস আর কিংবদন্তী অনুসারে, বারো ভুঁইয়াদের অন্যতম যশোরের রাজা প্রতাপাদিত্য মুঘল সাম্রাজ্যের হাতে পরাজিত হবার পর এই রাজ্যটি  বেশ ক’জন জমিদারের হাতে শাসিত হয়, যারা নিজেরাই ‘রাজা’ উপাধি ধারণ করে শাসন করতেন। এদের মধ্যে শ্রী মনোহর রায় (১৬৪০-১৭০৫ খ্রিঃ) ছিলেন অন্যতম, যিনি নাকি তাঁর রাজ্যাভিষেক উপলক্ষে এ মন্দিরটি নির্মাণ করেন। এই মন্দিরের পাশেই নাকি রাজপ্রাসাদ ছিল, এখন অবশ্য পুকুর, ধানক্ষেত আর সামনে ন্যাশনাল হাইওয়ে ছাড়া আর কোন কিছুর চিহ্ন নেই।

৩২১ বছরের পুরনো এই মন্দিরের ইতিহাস সম্পর্কে জানা যায় এর সংলগ্ন একটা শিলালিপি থেকে। সেটা বলছে, রাজা শ্রী মনোহর রায় ১৬১৮ শকাব্দে (শতাব্দী নয় কিন্তু, খেয়াল করবার বিষয়, ইংরেজী সাল হিসেবে সেটা হবে ১৬৯৬ সালে) এই মন্দিরটি নির্মাণ করেন।

চাঁচড়া মন্দিরের স্থাপত্যরীতি আর টেরাকোটার কারুকাজটা দুর্দান্ত। দোচালা বা চারচালা ছাঁদের স্ট্রাকচার পরিচিত থাকলেও ‘আট-চালা’ স্টাইলটা নতুন, এটা নাকি সচরাচর দেখা যায় না। মূল চারচালা ছাদের মাঝে কিছুটা উঁচুতে আরেকটি ছোট চারচালা ছাউনি নির্মিত হয়, এভাবেই এটা আটচালা। তবে যে টেরাকোটার ব্যবহারের কারণে মন্দিরটির বাইরের দিকের নান্দনিকতাটুকু পূর্ণতা পেয়েছে, সেগুলো নাকি বেশ নতুন, বছর বারো আগে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের মাধ্যমে লাগানো। অরিজিনাল কাজগুলো ধ্বংস বা নষ্ট হয়ে গিয়েছিল।

যশোর-বেনাপোল-খুলনা রুটে যাতায়াতকারী মানুষেরা প্রতিনিয়তই এটা দেখে থাকেন। আর যশোর শহরের মনিহার সিনেমা হল থেকে রিকশা বা ভ্যান নিয়ে এটা দেখতে আসা যায়।

-মাহদি