ধূমপান ছেড়ে দেওয়ার পর শরীরের পরিবর্তন!

ধূমপান ছেড়ে দেওয়ার পর শরীরের পরিবর্তন!

নিয়মিত ধূমপান করলে হয় রক্তচাপ, স্ট্রোক, হার্ট অ্যাটাক এর মত হাজার খানেক রোগ । আর এই সব থেকে রক্ষা পেতে হলে সবার প্রথমে ধূমপান ছাড়তে হবে। সিগারেট ছেড়ে দেওয়ার মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই শরীরে পরিবর্তন হতে শুরু করে । ধূমপান ছেড়ে দেওয়ার পর থেকে একজন ধূমপায়ীর শরীরে কী কী পরিবর্তন আসতে পারে, চলুন জেনে নিই।

ধূমপানের সময় দেহে প্রবেশ করা নিকোটিন শরীরে এপিনেফ্রিন ও নরএপিনেফ্রিন তৈরি করে। যার ফলে রক্তনালি সরু হয়ে আসে এবং হৃদ্‌যন্ত্রের স্পন্দন বাড়িয়ে দেয়। ধূমপান ত্যাগের ২০ মিনিটের মাথায় আমাদের শরীরের রক্তচাপ ও হৃৎস্পন্দন স্বাভাবিক হয়ে আসে। হাত ও পায়ের তাপমাত্রাও স্বাভাবিক হয়ে যায়। ধূমপান ছেড়ে দিলে ডোপামিন ক্ষরণ আগের চেয়ে কমে যায় ফলে ফলে মুড সুইং, ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে।

ধূমপান ছাড়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে রক্তচাপ স্বাভাবিক হয়ে শরীরে জমে থাকা কার্বন মনোক্সাইড গ্যাস বেরিয়ে গিয়ে শরীরের ‘টক্সিন’ দূর হয়। রক্তে অক্সিজেন প্রবেশ করে কার্বনের মাত্রা স্বাভাবিক করে তোলে। ২৪ ঘণ্টা পর কাশির মাধ্যমে ফুসফুসে থাকা বিষাক্ত পদার্থ দূর হয়। এ ছাড়া করোনারি রক্তনালির রোগের ঝুঁকি কমে যায়।

৪৮ ঘণ্টার মধ্যে শরীর থেকে নিকোটিনসহ সব ক্ষতিকর রাসায়নিক দূর হয়। ক্ষতিগ্রস্ত স্নায়ু সুস্থ হতে শুরু করে। ফুসফুসের, জিহ্বার ক্ষতিগ্রস্ত কোষগুলি পুনরুজ্জীবিত হতে শুরু করে। শরীরে অক্সিজেন প্রবাহের মাত্রাও বাড়ে।

ধূমপান ছেড়ে দেবার পর ফুসফুসের কর্মক্ষমতা প্রায় ৩০ শতাংশ বেড়ে যাবে। ফলে অল্পেই হাঁপিয়ে ওঠা, ঘন ঘন সর্দি-কাশি হওয়ার সমস্যাও দূর হবে। সিগারেট ছেড়ে দেওয়ার ৫ বছরের মধ্যে স্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কমে যাবে। ধূমপানের কারণে অক্সিজেনের প্রবাহ কমে গিয়ে হার্টের যে ক্ষতি হয়েছিল তা-ও সারতে থাকবে ধীরে ধীরে। ফলে হার্ট অ্যাটাক হওয়ার আশঙ্কাও কমে যাবে। ১০ -১৫ বছর পর ফুসফুস ক্যানসার, হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকিও দূর হয়ে যায় অনেকটা একজন অধূমপায়ীর মতোই ঝুঁকিমুক্ত হয়ে ওঠে ।

ধূমপানের ফলে স্পার্ম কাউন্ট কমে, হরমোনের সমস্যা দেখা দেয়। ‘স্পার্ম মোবিলিটি’, ‘ইরেকটাইল ডিসফাংশন’-এর মতো সমস্যা দেখা দেয়। মহিলাদের মধ্যেও ধূমপানের কারণে বন্ধ্যত্বের সমস্যা দেখা দিতে পারে। হরমোনের ভারসাম্য বিগড়ে যায়। ধূমপান ছেড়ে দিলে এই সব সমস্যা থেকে রেহাই মিলতে পারে।

চিকিৎসকদের মতে, সুস্থ জীবনযাপন করতে ধূমপানের অভ্যাস জীবন থেকে বাদ দেওয়া একান্তই জরুরি। তবে আজকে ধূমপান বন্ধ করে দিলে কাল থেকে সব ঠিক হয়ে যাবে না। গবেষণায় দেখা গিয়েছে, ধূমপানের সঙ্গে মানসিক স্বাস্থ্যের যোগাযোগ নিবিড়। সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, যাঁরা ধূমপান করেন, তাঁদের মানসিক স্বাস্থ্যের হাল অধূমপায়ীদের তুলনায় খারাপ। আর যাঁদের মানসিক স্বাস্থ্যের হাল ভাল নয়, অর্থাৎ মানসিক চাপ, উদ্বেগে ভোগেন, তাঁরা চাইলেই সহজে ধূমপান ছেড়ে দিতে পারেন না। ধূমপান ছাড়তে হলে সবার আগে জীবনধারায় বদল আনতে হবে। ধূমপান ছাড়তে চাইলে ডায়েটে বেশি করে ফলমূল ও শাকসব্জি খেতে পারেন। নিয়মিত শরীরচর্চা করুন। নিয়মিত শরীরচর্চার অভ্যাস ধূমপান করা থেকে আপনাকে বিরত রাখবে।