মোবাইল ইন্টারনেট ব্যাবহারে এখনো পিছিয়ে বাংলাদেশ

মোবাইল ইন্টারনেট ব্যাবহারে এখনো পিছিয়ে বাংলাদেশ

বাংলাদেশে মোট জনসংখ্যার এক-তৃতীয়াংশ বা ৩৩ শতাংশ মোবাইলে ইন্টারনেট ব্যবহার করেন। সেই হিসাবে ১৬ কোটি জনসংখ্যার বাংলাদেশে মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা এখন পাঁচ কোটির বেশি। মোবাইল ফোন অপারেটরদের বৈশ্বিক সংগঠন জিএসএমএ এমন হিসাব দিয়ে বলছে, মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যায় দক্ষিণ এশিয়ার গড় মান থেকে পিছিয়ে আছে বাংলাদেশ। সংগঠনটির হিসাবে, দক্ষিণ এশিয়ায় মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহারের গড় হার বর্তমানে ৩৮ শতাংশ।

বাংলাদেশের টেলিযোগাযোগ খাতের সার্বিক অবস্থা নিয়ে জিএসএমএর করা এক গবেষণায় এসব তথ্য পাওয়া গেছে। সম্প্রতি প্রকাশিত এ প্রতিবেদনটির নাম ‘বাংলাদেশ: ড্রাইভিং মোবাইল এনঅ্যাবেলড ডিজিটাল ট্রান্সফরমেশন’। প্রতিবেদনে জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য (এসডিজি) অর্জনে টেলিযোগাযোগ খাত বাংলাদেশে কী ভূমিকা রাখতে পারে, সেসব বিষয় নিয়েও আলোচনা করা হয়েছে।

বাংলাদেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা নির্ধারণে জিএসএমএ নিজস্ব পদ্ধতি ব্যবহার করেছে। প্রতিষ্ঠানটির হিসাবে গত জুন পর্যন্ত ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা পাঁচ কোটির বেশি। যদিও বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) হিসাব অনুযায়ী, দেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা প্রায় আট কোটি। এর মধ্যে মোবাইল ফোনে ইন্টারনেট ব্যবহার করেন ৭ কোটি ৪৩ লাখ।

জিএসএমএর প্রতিবেদনে বাংলাদেশে মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহারে পাঁচটি বিষয়কে মূল সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এগুলো হলো নেটওয়ার্কের মান, তরঙ্গের স্বল্পতা, উচ্চ করহার, সেবা কেনার সক্ষমতা, মৌলিক জ্ঞান ও স্থানীয় বিষয়বস্তুর অভাব। নেটওয়ার্কের মান ও তরঙ্গস্বল্পতার বিষয়ে বলা হয়েছে, তৃতীয় প্রজন্মের (থ্রিজি) টেলিযোগাযোগ সেবা দেওয়ার জন্য বাংলাদেশে মোবাইল ফোন অপারেটরদের হাতে রয়েছে মাত্র ৩৫ মেগাহার্টজ তরঙ্গ। সমপরিমাণ গ্রাহককে সেবা দেওয়ার জন্য ইন্দোনেশিয়ার অপারেটরদের কাছে আছে ১৫০ মেগাহার্টজ। কম তরঙ্গের পাশাপাশি ডিজিটাল সেবার জন্য সবচেয়ে উপযোগী ৭০০ মেগাহার্টজ ব্যান্ডের তরঙ্গ বাংলাদেশে এখনো ব্যবহার করা হয় না। আবার যেকোনো ব্যান্ডের তরঙ্গে যেকোনো প্রযুক্তির সেবা দেওয়ার সুবিধাও বাংলাদেশে নেই।

বাংলাদেশে টেলিযোগাযোগ সেবায় তরঙ্গস্বল্পতার বিষয়টি নিয়ে মোবাইল ফোন অপারেটররা দীর্ঘদিন ধরে বলে আসছে। সম্প্রতি বিটিআরসিকে দেওয়া গ্রামীণফোন, রবি ও বাংলালিংকের এক যৌথ চিঠিতে এ বিষয়ে বলা হয়, এখন সব মিলিয়ে দেশে যে পরিমাণ তরঙ্গ আছে, তার সব ব্যবহার করেও ২০ এমবিপিএস (মেগা বিটস পার সেকেন্ড) গতির ফোরজি দেওয়া সম্ভব নয়। উল্লেখ্য, বিটিআরসি প্রকাশিত নীতিমালায় দেশে ফোরজি প্রযুক্তির ইন্টারনেটের ন্যূনতম গতি নির্ধারণ করা হয়েছে ২০ এমবিপিএস।

বাংলাদেশে উচ্চ কর হারের বিষয়ে জিএসএমএর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৬ সালে কর বাবদ মোবাইল ফোন অপারেটররা সরকারকে দিয়েছে ১০০ কোটি ডলার বা ৮ হাজার কোটি টাকা। টেলিযোগাযোগ খাতের করের পরিমাণ অন্যান্য খাতের তুলনায় বেশি হওয়ায় অবকাঠামো উন্নয়নে মোবাইল ফোন অপারেটররা যথেষ্ট বিনিয়োগ করতে পারে না। বাংলাদেশে মোবাইল ফোনভিত্তিক সেবা তুলনামূলক কম ব্যবহার করেন এমন একজনকে গড়ে ১০০ টাকা ব্যবহারের জন্য ৩০ টাকা কর দিতে হয়। যাঁরা তুলনামূলকভাবে বেশি ব্যবহার করেন, তাঁদের গড়ে কর দিতে হয় ২০ টাকা।

টেলিযোগাযোগ সেবা সহজলভ্য করতে বাংলাদেশের জন্য কিছু পরামর্শও দিয়েছে জিএসএমএ। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো তরঙ্গের দাম কমানো, মোবাইল ফোন সেবা ব্যবহারে গ্রাহকের ওপর থেকে কর তুলে নেওয়া, মোবাইল ফোন আমদানিতে শুল্ক কমানো এবং বাংলা ভাষায় ডিজিটাল বিষয়বস্তু বাড়ানো।