বিদেশি শ্রমিক নিয়োগে নিষেধাজ্ঞা শিথিল করতে যাচ্ছে মালয়েশিয়া। এক বিবৃতিতে দেশটি জানায়, শর্তসাপেক্ষে বিদেশি শ্রমিক নিয়োগে নিষেধাজ্ঞা আংশিক ভাবে প্রত্যাহার করা হবে। এশিয়া নিউজ নেটওয়ার্কের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, স্বল্প দক্ষ বিদেশি শ্রমিক নিয়োগে গত দুমাস আগে দেয়া নিষেধাজ্ঞা আংশিকভাবে শিথিল করা হবে। নিয়োগদাতারা আগামী জুন মাসের পর থেকে বিদেশি শ্রমিক নিয়োগ দিতে পারবে। তবে এক্ষেত্রে শর্ত হচ্ছে- যেসব কাজে মালয়েশিয়ার নাগরিক পাওয়া যাচ্ছে না সেইসব কর্মক্ষেত্রেই বিদেশি শ্রমিক নিয়োগ দেয়া যাবে। এ বিষয়টি নিয়োগদাতাদের প্রমাণ দিতে হবে। অর্থাৎ মালয়েশিয়ার নাগরিকরা যেসব কাজ এড়িয়ে যাবেন, সেটিই করতে হবে বিদেশি শ্রমিকদের।
মালয়েশিয়ার অভিবাসন বিভাগের মহাপরিচালক দাতুক সেরি সাকিব কুসমি বলেন, ‘নির্মাণ খাতের মতো বিশেষ কিছু প্রতিষ্ঠান থেকে আমরা নিয়মিত বিদেশি কর্মী নিয়োগের অনুরোধ পাচ্ছি। আমরা যদি প্রয়োজন মনে করি তাহলেই বিদেশি শ্রমিকদের নিয়োগ দিতে পারি। এছাড়া যেসব প্রতিষ্ঠান বিদেশি শ্রমিকদের নিয়োগ দেবে তাদের প্রমাণ করতে হবে যে, এটি সত্যি প্রয়োজন।’
দাতুর সেরির মন্তব্য থেকে এটি স্পষ্ট যে, নির্মাণ খাতের মতো প্রতিষ্ঠানগুলোতে বিদেশি কম দক্ষ শ্রমিক নিয়োগের দুয়ার খুলছে।
উল্লেখ্য, গত ফেব্রুয়ারি মাসে বাংলাদেশ থেকে ১৫ লাখ শ্রমিক নেয়ার ঘোষণা দিয়েছিল মালয়েশিয়া। এরপরেই আসে সেই নিষেধাজ্ঞা। যেকারণে স্থগিত হয়ে যায় ১৫ লাখ শ্রমিকের ভাগ্য।
২০১৫ সালে বিশ^ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, পূর্ব এশিয়া প্যাসিফিকের দেশগুলোর মধ্যে বিদেশি শ্রমিক নিয়োগের ক্ষেত্রে মালয়েশিয়া চতুর্থ অবস্থানে।
মালয়েশিয়া সাধারণত ইলেকট্রিক যন্ত্রাংশ একত্রিকরণ, পাম অয়েল চাষ, রেস্তোরা এবং নির্মাণ খাতে বিদেশি শ্রমিকদের নিয়োগ দেয়। সরকারি হিসাব মতে, দেশটিতে ২১ লাখ বৈধ বিদেশি শ্রমিক রয়েছে। তবে সারা দেশে ছড়িয়ে রয়েছে প্রায় ২০ লাখ অবৈধ শ্রমিক। বিদেশি শ্রমিকদের একটি বড় অংশ ইন্দোনেশিয়া, মিয়ানমার, বাংলাদেশ এবং নেপালের।
জানা যায়, নিয়োগদাতারা এসব শ্রমিকদের ইচ্ছামতো ব্যবহার করে। এদের দিয়ে সাধারণত ‘থ্রি-ডি জবস’ করানো হয়। থ্রি-ডি বলতে বোঝায় নোংরা (ডার্টি), কঠিন (ডিফিকাল্ট) এবং বিপজ্জনক (ডেনজারাস)।
দেশটির নাগরিকদের প্রতি অনেকটা অভিযোগের সুরে মালয়েশিয়ান মুসলিম রেস্টুরেন্ট ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রধান নুরুল হাসান বলেন, ‘আমরা এসব কাজে বিদেশি শ্রমিকের চেয়ে স্থানীয়দের নিয়োগ দিতে বেশি আগ্রহী। কিন্তু মালয়েশিয়ার নাগরিকরা এ ধরনের কাজে আসতে চায় না।’
ফেডারেশসন অব মালয়েশিয়া ম্যানুফেকচারার্সের এক জরিপের বরাত দিয়ে মালয়েশিয়ান স্টার ডেইলি জানায়, গত মাসে দেশটির নির্মাণ শিল্প খাতের ৮৪ শতাংশ প্রতিষ্ঠানে জনবল সংকট ছিল। এদের মধ্যে অর্ধেক প্রতিষ্ঠান তাদের অর্ডার সরবরাহ জটিলতায় পড়েছে। এসব খাতের বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠান পণ্য সরবরাহের জন্য বিদেশি শ্রমিকদের উপর নির্ভরশীল।
তবে নিয়োগদাতাদের বিদেশি শ্রমিকের প্রতি আগ্রহকে সাধুবাদ জানালেও তাদের কম মজুরি দেয়ার প্রবণতা দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতিকর বলে সতর্ক করেছে অর্থনীতিবিদরা।
মালয়েশিয়ার উপ-স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী নূর জাযলান মুহাম্মেদ বলেন, ‘উৎপাদনমূলক খাতের ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ বিদেশি শ্রমিকের ওপর নির্ভরশীল। আমরা যদি আরো বিদেশি শ্রমিক নিয়োগ দেই, তাহলে কি অর্থনীতিতে কোন মূল্য যুক্ত হবে?’
গত দুমাস আগে মালয়েশিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংক নিগারা মালয়েশিয়া দেশটির মন্ত্রিসভার এক বৈঠকে বিদেশি শ্রমিকদের উপর নির্ভরতার বিষয়ে উদ্বেগ জানায়।