শীতপ্রধান অঞ্চল থেকে আসা অতিথি পাখির কলকাকলিতে মুখর ভোলার উপকূলীয় চরাঞ্চলগুলো। শীতের হিমেল হাওয়া শুরুর সাথে সাথে নিজেদের জীবন বাঁচাতে অতিথি দল ঝাঁক বেঁধে হাজির হয় এ অঞ্চলে। সাগরকূলের ডুবোচরগুলো পরিণত হয়েছে অতিথি পাখির অভয়ারণ্যে। প্রায়ই দুর্বৃত্তদের দেয়া বিষটোপ ও মরণফাঁদে প্রাণ হারায় এসব অতিথি পাখি । তাই শৃঙ্খলারক্ষা বাহিনীর সহায়তায় অতিথি পাখি রক্ষায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানিয়েছে বন বিভাগ ।
চরকুকরি মুকরি ম্যানগ্রোভ বাগান পেরিয়ে সাগরের দিকে এগুলে রং বেরঙয়ের পাখির ঝাঁকে ঝাঁকে এমন ছুটোছুটি, মন কেড়ে নিবে যে কোন মানুষের। পাখিদের কিচির মিচির শব্দ খানিকের জন্য হলেও ভুলিয়ে দিবে ইট পাথরের জীবনের কথা। অন্যান্য বছরের মত এবারো ভোলার দক্ষিণে বঙ্গোপসাগরের কোলঘেঁষা চরকুকরি মুকরি, চর শাহজালাল, চরশাজাহান, চর পিয়াল, আইলউদ্দিন চর, চরনিজাম, আন্ডার চর, দমার চর, ডেগরারচরসহ শতাধিক ডুবোচরে সকাল বিকাল হাজার হাজার পাখির দেখা মিলছে। এসব চরে খাবার সংগ্রহ শেষে বিপদে আশ্রয় নেয় পার্শ্ববর্তী ম্যানগ্রোভ বাগানে।
চরাঞ্চালগুলো মানুষের দখলে চলে যাওয়ায় চলাচলে কিছুটা বাধা হলেও কমেনি অতিথি পাখি আসার সংখ্যা । চরবাসীরা জানান, ‘এই পাখিগুলোকে আমরা মারতে দিই না। আমরা পাখিগুলোকে দেখে রাখি। গত বছরের চেয়ে এই বছর পাখি বেশি এসেছে। আবার গরম আসলে চলে যাবে। এক মাঝি জানান, চরকুকরি মুকরিতে অনেক পর্যটকও আসে। তারা পাখি দেখে অনেক আনন্দ পান। শীত থেকে প্রাণ বাঁচাতে আসা পাখিরাই এখন সাগর-সবুজ দেখতে আসা পর্যটকদের প্রধান আকর্ষণ হয়ে উঠেছে। তাই এদের রক্ষায় বিশেষ ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানালেন এ জনপ্রতিনিধি
ভোলা চর কুকরি-মুকরির চেয়ারম্যান আবুল হাসেম মহাজন বলেন, 'অতিথি পাখি রক্ষায় এলাকার সমস্ত মানুষকে মাইকিং করে দিই। যাতে তারা পাখিদের নিধন না করে। এছাড়াও আমাদের গ্রাম পুলিশসহ সব সময় টহল দেন। অতিথি পাখির অবাধ বিচরণ ও শিকার বন্ধে এলাকা ভিত্তিক টহল দল গঠন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তা নেয়ার কথা জানালেন বন বিভাগের কর্মকর্তা । ভোলা উপকূলীয় বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা উপকূলীয় বন মো.ফরিদ উদ্দিন মিঞা বলেন, ‘বাংলাদেশ পুলিশ ও কোস্ট গার্ডের সঙ্গে সমন্বয় করে এবং তাদের সহযোগিতা নিয়ে অতিথিদের পাখিদের কেউ নিধন না করে, সেই জন্য আমাদের টহল অব্যাহত থাকবে। শীত মৌসুমে বাংলাদেশে আসা অতিথি পাখির প্রায় অর্ধেক আসে ভোলা উপকুলে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চলতি মৌসুমে ৬৫ প্রজাতির প্রায় ৫০ হাজার পাখি দেখা গেছে চরাঞ্চালগুলোতে।