গোড়ালির ব্যথাকে ইংরেজিতে ‘হিল পেইন’ (Heel Pain) বলে। গোড়ালির ব্যথা সাধারণত গোড়ালির নিচের দিকে অথবা গোড়ালির পেছন দিকে হয়। যদি আপনার গোড়ালির ব্যথা নিচের দিকে হয় তাহলে বুঝতে হবে এটার কারণ হলো প্লান্টার ফাসাইটিস। এ ক্ষেত্রে হাঁটলে পায়ের গোড়ালিতে ব্যথা বাড়ে, সকালবেলা ব্যথা বেশি থাকে এবং বেলা বাড়ার সাথে সাথে ব্যথা কিছুটা কমে; কখনও কখনও গোড়ালি শক্ত বলে মনে হয় এবং শক্ত জুতা ব্যবহার করলে ব্যথা বেড়ে যায়; গোড়ালি কখনও কখনও ফুলে যায়। আর পায়ের গোড়ালির পেছনের দিকে ব্যথা হয় সাধারণত অ্যাকিলিস টেনডিনাইটিস হলে- এই ব্যথা গোড়ালির হাড়ের সাথে যেখানে অ্যাকিলিস টেনডন মিশেছে সেখানে হয়। গোড়ালির ব্যথা বেশ সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে এবং অনেকে এই ব্যথায় চলাফেরা করতে পারেন না।
গোড়ালিতে ব্যথা কেন হয়
ক্যালকেনিয়াম বা গোড়ালির হাড়ে এবং পায়ের তলার মাংসপেশিতে সমস্যা হলে সামান্য থেকে মারাত্মক ধরণের ব্যথা হয়। যেহেতু শরীরের সব চাপ পড়ে গোড়ালি ও পায়ের পাতার ওপর, তাই গোড়ালিতে ব্যথা হলে গোড়ালিতে ভর দিয়ে হাঁটাচলা করতে কিংবা কোনো কাজকর্ম করতে রোগী অসমর্থ হন। বিভিন্ন কারণে গোড়ালিতে ব্যথা হতে পারে।
তবে গোড়ালিতে ব্যথার সাধারণ কারণগুলো হলো-
১. অ্যাকিলিস টেনডিনাইটিস। এ ক্ষেত্রে অ্যাকিলিস টেনডনে প্রদাহজনিত কারণে ব্যথা হয়। ব্যথা বেশ তীব্র হয়।
২. অ্যাকিলিস টেনডন রাপচার। এ ক্ষেত্রে অ্যাকিলিস টেনডেন ছিঁড়ে যায়।
৩. আঘাতজনিত কারণ। এ ক্ষেত্রে গোড়ালিতে আঘাত লাগলে ব্যথা অনুভূত হয়। হাড় ভাঙলে অথবা চাপ পড়লে ব্যথার সৃষ্টি হয়।
৪. হাড়ের টিউমার, বার্সাইটিস।
৫ . ফাইব্রোমায়ালজিয়া।
৬. গোড়ালির হাড় ভাঙা, গাউট।
৭. গোড়ালির প্যাড ছিঁড়ে যাওয়া।
৮. হিল স্পার। দীর্ঘ দিন প্লান্টার ফাসাইটিস থাকলে ফাসা টিস্যু ব্যান্ড যেখানে আপনার হিল বোনের বা গোড়ালির হাড়ের সাথে সংযুক্ত হয়, সেখানে হিলস্পার (ক্যালসিয়াম জমা হওয়া) গঠন হতে পারে। আপনার হাড়ের উদ্ভেদ দেখার জন্য এক্স-রে করা যেতে পারে। উদ্ভেদ বা প্রকটন বিভিন্ন মাপের হতে পারে।
৯. অস্টিওমাইলাইটিস। এটি হাড়ের সংক্রমণ।
১০. প্রান্তিক স্নায়ুর সমস্যা।
১১. প্লান্টার ফাসাইটিস। এটি গোড়ালির বিশেষ ধরণের বাত। বেশি দৌড়ালে বা লাফঝাঁপ দিলে টিস্যু ব্যান্ড বা ফাসার (এটি গোড়ালির হাড় থেকে পায়ের আঙুলের গোড়া পর্যন্ত বিস্তৃত) প্রদাহ হতে পারে।
১২. রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস।
১৩. স্ট্রেস ফ্রাকচার।
১৪. টারসাল টানেল সিনড্রোম।
কখন ডাক্তার দেখাবেন
যদি নিচের উপসর্গগুলো থাকে তাহলে দ্রুত ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়া উচিত।
গোড়ালির আশপাশে তীব্র ব্যথা হলে ও ফুলে গেলে।
যদি পায়ের পাতা বাঁকা করে নিচের দিকে নামাতে না পারে, পায়ের আঙুল ওঠাতে না পারে কিংবা ভালোভাবে হাঁটতে না পারে।
যদি গোড়ালির ব্যথার সাথে জ্বর থাকে, গোড়ালি অবশ হয়ে যায় কিংবা ঝিনঝিন করে।
আঘাতের সাথে সাথে যদি গোড়ালিতে তীব্র ব্যথা হয়।
গোড়ালির ব্যথা খারাপ কি না বুঝব কিভাবে
আপনি না হাঁটলেও কিংবা দাঁড়িয়ে না থাকা সত্ত্বেও যদি আপনার গোড়ালিতে অবিরাম ব্যথা থাকে।
আপনি বিশ্রাম নেয়া, বরফ দেয়া ও অন্যান্য ঘরোয়া চিকিত্সা নেয়ার পরও যদি গোড়ালির ব্যথা কয়েক সপ্তাহ ধরে স্থায়ী থাকে।
চিকিৎসা
পূর্ণ বিশ্রামে থাকবেন এবং কিছু ব্যায়াম করবেন
ব্যথানাশক শুধু খাবেন।
পেছনে খোলা- এমন জুতা পরবেন।
নিচু হিলের (৩/র্৮র্ অথবা ১/র্২র্ ) জুতা পরবেন।
প্রদাহ কমাতে আপনার গোড়ালির পেছনে বরফ দেবেন।