বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্র কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত। অসংখ্য ভ্রমণকারীর পদচারণায় সদা মুখরিত এই সৈকত ছাড়া ভাবা যায় না কোনো বর্ষবরণ বা বর্ষ বিদায় অথবা বছরের যেকোনো উৎসব। শুধু বাংলাদেশিদের কাছে নয়, বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘ সৈকতটি বিদেশিদের কাছেও বেশ জনপ্রিয়। এই জনপ্রিয়তাকে ম্লান করে দিচ্ছে কিছু বখাটের দল, যারা নারীদের উত্যক্ত করে যাচ্ছে দিনের পর দিন। ইদানীং অভিযোগ আরও বেড়েছে। মাত্র দুই মাস ধরে কক্সবাজার ট্যুরিজম ও প্রটোকল বিভাগের দায়িত্ব নিয়েছেন জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সাইফুল আশরাফ জয়। ক্রমাগত আসতে থাকা এসব অভিযোগ নির্মূল করতে মাঠে নামেন তিনি। ১৩ জন ইভটিজারকে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে শাস্তির আওতায় নিয়ে আসেন। কিন্তু শাস্তি দিয়ে এতো জনসমাগমের সৈকতে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা কঠিন।
এসব বখাটেরা এত ভয়ংকর যে সমুদ্রের জোয়ারের সময় পানির নিচ থেকে নারী পর্যটকদের গায়ে পর্যন্ত হাত দেয়! সারা বিশ্বেই নারীদের জন্য সৈকতে আলাদা সুইমিং জোন থাকে। সেটি একটি ভালো সমাধান হতে পারে এমন বিব্রতকর অবস্থা থেকে নারী পর্যটকদের রক্ষার জন্য। সাইফুল আশরাফ জয় উদ্যোগী হলেন আলাদা নির্দিষ্ট জোন করার জন্য। কাজটির সার্বিক তত্ত্বাবধানে যোগ দিলেন জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেনও। এরই ধারাবাহিকতায় কক্সবাজারের সুগন্ধা পয়েন্টে হোটেল সিগালের বরাবর ১০০ মিটার সৈকতকে ঘোষণা দেওয়া হয় নারীদের একান্ত জোন হিসেবে। বাংলাদেশে এটাই প্রথম এমন উদ্যোগ। ম্যাজিস্ট্রেট সাইফুল আশরাফ জয় প্রিয়.কমকে জানান বিদেশি পর্যটকদের জন্যও এ ধরনের সংরক্ষিত জোন তৈরির আয়োজন চলছে।
টেকনাফের সাবরাং ও সোনাদিয়ায় ইতোমধ্যেই কাজ শুরু হয়েছে। শৈবাল হোটেলসংলগ্ন সমুদ্র সৈকতকেও সংরক্ষিত করার কথা ভাবা হচ্ছে। কক্সবাজার ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন তাদের প্রস্তাবনা দিয়েছেন। তবে সিদ্ধান্ত এখনো হয়নি। সৈকতের নারী জোনের নিরাপত্তা কতটা জোরদার হবে জানতে চাইলে সাইফুল আশরাফ জয় বলেন, এখানে সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা দিতে উপস্থিত থাকবেন চারজন লাইফ গার্ড, যাদের দুজন নারী ও দুজন পুরুষ।
এ ছাড়াও সিকিউরিটি গার্ড ও বিচকর্মী থাকবেন। প্রশ্ন রাখা হয় নারীরা কি তাহলে সাঁতারের পাশাপাশি চাইলে ক্যাম্পিং করতে পারবেন? নারী বা পুরুষ কারো জন্যই সৈকতে ক্যাম্পিং করার অনুমতি নেই বলে জানান এই তরুণ ম্যাজিস্ট্রেট।
নারীদের পৃথক জোন কি তাদের সৈকত উপভোগ করার পরিধি বেঁধে দিচ্ছে? না, এমন নয়। তারা সমগ্র কক্সবাজার সৈকতেই ঘুরে বেড়াতে পারবে। সব জায়গাতেই বাংলাদেশ ট্যুরিস্ট পুলিশ তাদের যেকোনো সমস্যায় পাশে দাঁড়াবে। তবে ১০০ মিটার ওই জায়গাটি একান্ত তাদের। এখানে বিরক্ত করার কেউ থাকবে না, তাই অভিযোগের প্রশ্নও থাকবে না, বলেন তিনি।
চলতি মাসের ৪ তারিখে নিরাপত্তা জোনটি উদ্বোধন করা হয়। যেসব নারীরা একা ঘুরে বেড়ান বা শুধু নারী বন্ধুরা মিলে ঘুরে বেড়াতে চান তাদেরকে নিরাপত্তা নিয়ে আর ভাবতে হবে না বলে এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন ভ্রমণকারীরা। এভাবেই হয়ত আমাদের সৈকত দিনে দিনে আন্তর্জাতিক পর্যটনস্থলের সমস্ত সুবিধা দিতে সমর্থ হবে।