সহজ এবং স্বাচ্ছন্দ্যে ইন্টারনেট ব্যবহারের জন্য ওয়াইফাই’র জুড়ি নেই। তবে মাঝে মাঝেই ওয়াইফাই অনেকের বিরক্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এর কারণ হলো ধীরগতি। বিভিন্ন কারণে উচ্চগতির ইন্টারনেট থাকা সত্ত্বেও ওয়াইফাই ব্যবহারে ধীরগতি দেখা যায়। সম্ভাব্য এমন কিছু কারণ ও এর সমাধান তুলে ধরা হলো-
১. রাউটারের অবস্থান
রাউটার কোথায় স্থাপন করেছেন, তার উপর অনেকটাই নির্ভর করে রাউটারের অবস্থানের উপর। সাধারণত নিচু কোনো জায়গায় এবং অন্য কোনো ইলেক্ট্রনিকস যন্ত্রের পাশে রাখলে ওয়াইফাই সিগন্যালে সমস্যা হয়।
তাই যতটা সম্ভব কোনো উঁচু স্থানে রাউটার স্থাপন করা ভালো। এর ফলে ওয়াইফাই সিগন্যাল কোনো বাধা ছাড়াই চারিদিকে পৌঁছাতে পারে।
২. রাউটার অন্যান্য বস্তু থেকে দূরে রাখা
কনক্রিটের দেয়াল কিংবা অন্যান্য ধাতব বস্তু রাউটারের তরঙ্গ চলাচলে বাধা প্রদান করে। ছোট হোক বা বড় হোক, কমবেশি প্রায় সব কিছুই রাউটারের সিগন্যাল আটকে গতি কমিয়ে দেয়। আর তাই রাউটারটি এমনভাবে রাখতে হবে যেন এর আশেপাশে অন্যান্য কিছু না থাকে।
৩. বিভিন্ন ডিভাইস থেকে রাউটারের দূরত্ব
ল্যাপটপ বা অন্যান্য ব্যবহার্য ডিভাইস থেকে রাউটারের দূরত্ব যত বেশি, এর সিগন্যালও তত দুর্বল। আর তাই সম্ভব হলে ডিভাইসের কাছাকাছি রাউটার স্থাপন করতে হবে।
তবে যদি ওয়াইফাই ব্যবহার একটি নির্দিষ্ট স্থানের পরিবর্তে ছড়ানো হয় অর্থাৎ বিভিন্ন কক্ষে ব্যবহার হয়ে থাকে, সেক্ষেত্রে রাউটারটি একেবারে কেন্দ্রে স্থাপন করলে বেশ ভালোভাবে সবাই ব্যবহার করতে পারবে।
অন্যদিকে বাসা বা অফিস যদি খুব বড় হয়ে থাকে এবং রাউটারের রেঞ্জ যদি খুব বেশি না হয়, তাহলে রাউটারে রেঞ্জ এক্সটেন্ডার বা ওয়াইফাই রিপিটার ব্যবহার করা যেতে পারে।
৪. মাইক্রোওয়েভ ওভেন
ওয়াইফাই সিগন্যাল বিঘ্নিত হওয়ার একটি অন্যতম কারণ হতে পারে মাইক্রোওয়েভ ওভেন। সাধারণত মাইক্রোওয়েভ ওভেন ২.৪৫ গিগাহার্টজ তরঙ্গদৈর্ঘ্যে কাজ করে। অন্যদিকে রাউটারের তরঙ্গদৈর্ঘ্য সাধারণত ২.৪ গিগাহার্টজ যা ২.৪১২ থেকে ২.৪৭২ গিগাহার্টজের মধ্যে কাজ করে। আর তাই অনেকসময় দুটি যন্ত্রের তরঙ্গদৈর্ঘ্যের মধ্যে ব্যতিচারের ঘটনা ঘটে।
অধিকাংশ মাইক্রোওয়েভ ওভেনই এমনভাবে তৈরি করা হয় যাতে এর তরঙ্গদৈর্ঘ্য বাইরে না আসে। তবে কিছু ত্রুটিপূর্ণ ওভেনের ক্ষেত্রে এমনটা ঘটতেই পারে। এজন্য রাউটার মাইক্রোওয়েভ ওভেন থেকে দূরে স্থাপন করতে হবে।ওয়াইফাই ইন্টারনেট
৫. ব্লুটুথ ডিভাইস
ডাটা ট্রান্সফারের জন্য আরও একটি জনপ্রিয় মাধ্যম হলো ব্লুটুথ। সাধারণত ব্লুটুথও ২.৪ গিগাহার্জ তরঙ্গদৈর্ঘ্যে কাজ করে থাকে। আর তাই ওয়াইফাই সিগন্যালের সাথে ব্যতিচারের সম্ভাবনা থাকে সবচেয়ে বেশি। যদিও বর্তমানে ব্লুটুথ সিগন্যাল একই ফ্রিকোয়েন্সির অন্য কোনো সিগন্যালের সাথে যেন ওভারল্যাপ না করে সেজন্য ৭০টি আলাদা চ্যানেল ব্যবহার করা হয় যেখানে সিগন্যাল প্রতি সেকেন্ডে ১৬০০ বার পর্যন্ত এর চ্যানেল পরিবর্তন করে।
এছাড়া বর্তমানে ব্লুটুথে আছে ব্যবহৃত চ্যানেল এড়িয়ে যাওয়ার প্রযুক্তিও। তবে এরপরও ইন্টারফারেন্স বা ব্যতিচারের সম্ভাবনা থেকেই যায়। এজন্য ব্লুটুথ ডিভাইস রাউটার থেকে কিছুটা দূরে রাখা উচিত।
৬. চ্যানেল ওভারলুপ
বর্তমানে প্রায় সব অফিসে তো বটেই, ওয়াইফাই রাউটার আছে ঘরে ঘরে। আর এ কারণে একাধিক রাউটারের মধ্যে চ্যানেল ওভারলুপ হওয়া খুবই স্বাভাবিক। তবে ২.৪ গিগাহার্টজ ফ্রিকোয়েন্সিতে ব্রডকাস্ট হয় কিংবা কেবলমাত্র এই ফ্রিকোয়েন্সির সিগন্যাল রিসিভ করে, এমন ডিভাইসের ক্ষেত্রেই এই ওভারলুপের সমস্যা বেশি হতে পারে।
বর্তমান সময়ে বাজারে থাকা প্রায় সব রাউটারেই অবশ্য এই সমস্যা এড়াতে স্বয়ংক্রিয়ভাবে চ্যানেল পরিবর্তনের সুবিধা রয়েছে। তবে কোনো কারণে সমস্যা হচ্ছে মনে হলে ম্যানুয়ালিও চ্যানেল পরিবর্তন করে নেওয়া যাবে।