শুধু ভিডিও আপলোড করে রোজগার করছেন অনেকে। আপনি বাদ যাবেন কেন? লিলি সিংহ-কে চেনেন? বা লিন্ডসে স্টারলিং? প্রত্যেকের আয় প্রায় দেড় মিলিয়ন ডলার। কোনো কোম্পানির সিইও নন তাঁরা। শুরু করেননি কোনো ইন্টারনেট স্টার্টআপও। কাজ বলতে ইউটিউবে ভিডিও আপলোড করা!
অবাক হচ্ছেন! নামের তালিকাটা কিন্তু এখানেই থেমে থাকছে না। বিদেশে এখন অনেকের পাকাপাকি কাজ হল ইউটিউবে ভিডিও আপলোড করা। ফিউডাইপাই, স্মুশ, রোমান অ্যাটউড-রা তো শুধু এটা করেই কামাচ্ছেন মিলিয়ন ডলার।
আপনিও পারবেন
‘প্রতি মিনিটে আটচল্লিশ ঘণ্টার ভিডিও আপলোড করা হয় ইউটিউবে। তার মধ্যে হাতে গোনা কয়েকটা ভাইরাল হয়!’ টেড টক-এ বলছিলেন ইউটিউবের ট্রেন্ড ম্যানেজার কেভিন অ্যালোক্কা। ইউটিউবে আপলোড করা ভিডিয়ো ভাইরাল বা জনপ্রিয় হওয়াটা বিশেষ দরকারি। কারণ ইউটিউবে ভিডিয়ো আপলোড করে রোজগারের সবথেকে বড় রাস্তা হল অ্যাডসেন্স, গুগলের নিজস্ব বিজ্ঞাপন ব্যবস্থা। এতে আপনার ভিডিয়োয় যত ‘ক্লিক’ পড়বে, সেই হিসেবে টাকা পাবেন আপনি।
স্বাভাবিক হিসেবে প্রতি এক হাজার ভিউতে পাওয়া যায় আশি থেকে একশ’ টাকা। তার মানে আপনার কোনো ভিডিও এক লাখ লোক দেখলে, আপনি দশ হাজার টাকা পেতেই পারেন। তাই বুঝতেই পারছেন কেন বলছিলাম, ভাল রোজগার করতে হলে ভিডিয়োর ভিউ বেশি হওয়া বা ভাইরাল হওয়াটা খুব জরুরি। আর সেটা কিন্তু তেমন অস্বাভাবিকও নয়।
শুরুর গাইড
• ইউটিউবে অ্যাকাউন্ট খুলুন। গুগল অ্যাকাউন্টেই ভিডিয়ো চ্যানেল থাকবে
• মনে করে ভিডিওতে চোখে ধরার মতো ট্যাগ দিন
• ভিডিও ম্যানেজারে ‘$’ সাইনে ক্লিক করুন। এতে গুগল ভিডিয়োর মধ্যে বিজ্ঞাপন দিতে পারবে
• অ্যাডসেন্সেও অ্যাকাউন্ট তৈরি করুন। এতে বিজ্ঞাপনে ক্লিক করলে টাকা পাবেন
• ইউটিউব পার্টনার পেজ-এ আবেদন করে রাখুন
• নিজের ভিডিও কেমন পারফর্ম করছে, তার জন্য নিয়মিত ‘অ্যানালিটিক্স’য়ে নজর রাখুন
ভাল রোজগারের মন্ত্র
• ভিডিওর কোয়ালিটি যেন ভাল হয়। ভাল একটা মাইক্রোফোন কিনুন
• ভিডিওর টাইটেল, ট্যাগ ঠিক করে দিন। যাতে সার্চ ইঞ্জিনে খুঁজে পাওয়া যায়
• নিজের ব্লগ, ফেসবুক, টুইটারে ভিডিয়োর লিঙ্ক পোস্ট করুন। ট্রাফিক বাড়বে
• শুধু অ্যাডসেন্সের উপর ভরসা নয়, বিভিন্ন প্রোডাক্টের অ্যাড ফিল্ম বানান
• ভিডিওগুলোর মধ্যে যেন একটা ধারাবাহিকতা বা সিরিজের অনুভুতি থাকে
• পোষ্যের ভিডিও বানান। গ্রাম্পি ক্যাট বা লিটিল বাব সিরিজ দেখুন
বাচ্চার ন্যাপি পাল্টানো থেকে রান্না করা
সদ্য সংসারী হওয়া জেনওয়াইয়ের অধিকাংশই তো সংসারের কাজ শিখছে ইউটিউব থেকে। জেন ওয়াইয়ের চাহিদার কথা মাথায় রেখেই টেক বিশেষজ্ঞরা তাই ইউটিউব থেকে টাকা রোজগারের একমাত্র পথ আর শুধুমাত্র অ্যাডসেন্সকে দেখছেন না। অনলাইন টিউটরিং বা ইউটিউবে ভিডিওর মাধ্যমে শেখানোর চ্যানেলও এখন টাকা রোজগারের অন্যতম পথ। এই সব চ্যানেল সাবস্ক্রিপশনের জন্য টাকা নেয়। শেখার জন্য টাকা দিয়ে লোকজন সাবস্ক্রাইবও করছে সেই চ্যানেলগুলো।
বিদেশে যেমন খুব জনপ্রিয় ইন্টারভিউ টিপস আর ফোটোগ্রাফির কোর্স। ভারতে আবার খুব উৎসাহ রান্না শেখার ইউটিউব চ্যানেলের। রোসানা প্যানসিনোর কাপকেক তৈরি শেখানোর ভিডিয়ো যদি দশ লাখ লোক দেখে, তবে মনে রাখবেন ফুড জাংশনের ডিমের কারি তৈরির ভিডিয়োও কিন্তু দেখে ফেলেছে চার লাখ লোক কিংবা বেঙ্গলি হোম কুকিং ইউটিউব চ্যানেলের প্রেশার কুকারে মসুর ডাল রান্নার ভিউয়ারশিপ ছাড়িয়ে গিয়েছে দু’লাখ।
তারকা হওয়ার প্রথম পদক্ষেপ
কেভিন আলোক্কাই বলছিলেন, তারকা হতে কে না চায়। সত্যিই তাই। আর সে কাজটা এখন অনেক সহজে করে দিয়েছে ইউটিউবের মতো প্ল্যাটফর্ম। জাস্টিন বিবারের জনপ্রিয়তাও কিন্তু ইউটিউব থেকে। এক ট্যালেন্ট ম্যানেজার বিবারকে খুঁজে পান ইউটিউবের ভিডিও দেখে… বাকিটা তো ইতিহাস। ভারতে শ্রদ্ধা শর্মার গল্পটাও অনেকটা একই রকম। বেশ কয়েকটা গানের রিয়্যালিটি শোয়ে ব্যর্থ হওয়ার পর, ‘দম মারো দম’ গানটা নিজের মতো করে গেয়ে ইউটিউবে আপলোড করে দিয়েছিল বছর কুড়ির শ্রদ্ধা। ২০১১তে তাঁর চতুর্থ কভার গান দেখে ফেলে সাত লাখ ইউটিউব দর্শক। মিউজিক প্রোডিউসরদের নজরে আসতে সময় লাগেনি। অফারও পেয়ে গিয়েছে জাস্টিন টিম্বারলেকের মিউজিক প্রোডিউসর জিম বিয়াঞ্জের সঙ্গে অ্যালবাম বানানোর।
ইউটিউব সাফল্য থেকে বলিউড পাড়ির উদাহরণও নেহাত কম নয়। সনম পুরি বা জোনিতা গান্ধীর মতো গায়ক-গায়িকা প্রথমে জনপ্রিয় হয়েছেন ইউটিউবে। ইউটিউব থেকে মিলিয়নেয়র হওয়ার এই নামের তালিকায় উল্লেখযোগ্য সংযোজন লিলি সিংহ। ইয়র্ক ইউনিভার্সিটির সাইকোলজির এই ছাত্রীর গত বছরের রোজগার ছিল প্রায় দু’মিলিয়ন ডলার। যার পুরোটাই তাঁর ‘সুপারউওম্যান’ ইউটিউব ভিডিও সিরিজ দিয়ে। মনস্তত্ত্বের কোনও জটিল বিশ্লেষণ নয়, নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনাকে মজার ছলে ব্যাখ্যা করাই তাঁকে করে তুলেছে ইউটিউব স্টার।
শুধু ইউটিউব না সোশাল মিডিয়া হিসেবে বেছে নিচ্ছে স্ন্যাপচ্যাটকেই। তাই স্বাভাবিকভাবে বিজ্ঞাপনদাতারাও ঝুঁকছে সে দিকে। প্রথমে শুধু ছবি থাকলেও এখন স্ন্যাপচ্যাট ভিডিও শেয়ারিংয়েরও অন্যতম মাধ্যম। ফলে ডিজে খালিদ বা কুয়ামকো-র মতো স্ন্যাপচ্যাট স্টারদের মাসে রোজগার অনায়াসে ছাড়িয়ে যাচ্ছে ২৫ হাজার ডলার। দেরি করবেন না। কে বলতে পারে ইউটিউব-ই হয়তো আপনাকে কোটিপতি বানিয়ে দিল।
 
                             
  
  
                                             
                                        
										
									 
                                        
										
									 
                                        
										
									 
                                        
										
									 
                                        
										
									 
                                        
										
								 
                                                
																					 
                                                
																					 
                                                
																					 
                                                
																					 
                                                
																					 
                                                
																					 
                                                
																					 
                                                
																					