অ্যাজমা বা হাঁপানি হলো ফুসফুসজনিত একটি রোগ। চাপা উত্তেজনা অনুভব করলে এসব রোগীদের শ্বাস নিতে অনেক কষ্ট হয়।
সাধারণত অ্যালার্জি, ঠাণ্ডা সমস্যা, শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণ এবং চাপের কারণে হাঁপানি রোগীরা শ্বাস নিতে পারেন না। শীতকালে এই রোগের প্রকোপ অনেক বেড়ে যায়। তাই এ সময় অ্যাজমা রোগীদের কিছু বাড়তি সতর্কতা নেওয়া জরুরি।
এক্ষেত্রে স্বাস্থ্যবিষয়ক ওয়েবসাইট ‘এভরিডেহেলথ’ অবলম্বনে জেনে নিন শীতে অ্যাজমা রোগীরা কী করবেন-
হাত ধুয়ে নিন
অ্যাজমা প্রতিরোধের একটি ভালো উপায় হতে পারে হাত ধোয়া। বিশেষজ্ঞরা বলেন, অ্যাজমা প্রতিরোধে সাবান এবং পানি দিয়ে ভালোভাবে হাত পরিষ্কার করুন। অ্যালকোহল-ভিত্তিক স্যানিটাইজার এবং ভেজা তোয়ালা এড়িয়ে চলুন। এ ছাড়া বাড়ির চারপাশে জীবাণু ছড়ানোর উপকরণগুলো একেবারেই সরিয়ে ফেলুন। পাশাপাশি আপনার সন্তানদেরও ভালোভাবে হাত ধোয়ার ওপর গুরুত্ব দিন।
ফ্লু ভ্যাকসিন
ছয় মাস বা তার বেশি বয়সের লোকদের ফ্লু ভাইরাস থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য ফ্লু ভ্যাকসিন নেওয়ার সুপারিশ করেছে রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্র (সিডিসি)। তাহলে শীতেও অ্যাজমা আপনাকে কাহিল করতে পারবে না। অ্যাজমার লক্ষণগুলো নিয়ন্ত্রণে রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে এই ভ্যাকসিন। বিশেষজ্ঞরা বলেন, ফ্লু ভাইরাসকে ধ্বংস করতে সাহায্য করে ফ্লু ভ্যাকসিন। অারও বেশি সুরক্ষায় নিউমোনিয়ার ভ্যাকসিনও নিতে পারেন।
আগুনের পাশে বসবেন না
শীতে শরীর গরম করতে অনেকেই কাঠ-কয়লা জ্বালিয়ে তার পাশে বসে থাকেন। অ্যাজমা রোগীদের এই কাজটি কখনই করা উচিত নয়। বিশেষজ্ঞরা বলেন, আমাদের কাছে এর প্রমাণ আছে এবং আমরা বুঝতে পারি জলন্ত কাঠ তামাক পোড়ার মতোই। তারা বলেন, ধোঁয়া তো ধোঁয়াই এবং আপনি যদি অ্যাজমা রোগী হন তাহলে এই ধোঁয়া আপনার ফুসফুসে জ্বালাপোড়া বাড়াবে।
মুখ বন্ধ রাখুন
ফুসফুস ভালো রাখতে অ্যাজমা রোগীদের বেশিরভাগ সময় মুখ বন্ধ রাখা উচিত। এক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞরা বলেন, অ্যাজমা রোগীরা মুখ নয়, অবশ্যই নাক দিয়ে শ্বাস নিবেন। আবার নাকে মাফরার কিংবা স্কার্ফ পেঁচিয়েও শ্বাস নিতে পারেন। এতে করেও সংক্রমণের আশঙ্কা কমবে।
ফিল্টার পরিবর্তন
ফিল্টারে পানি গরম করার পদ্ধতির কারণে ধুলো উড়তে পারে। কারণ শীতেই আপনি এটা প্রথম ব্যবহার করেন। এক্ষেত্রে ফিল্টার পরিষ্কার এবং পরিবর্তন করাটা অনেক জরুরি। নতুনা অ্যাজমার সমস্যা বাড়বে। একইসঙ্গে আপনার বাড়িতে তাপমাত্রা এবং আর্দ্রতার মাত্রাও একই রাখার চেষ্টা করুন।
ব্যায়াম করুন
শীতের মধ্যে ঠাণ্ডায় বাইরে গিয়ে ব্যায়াম করাটা অনেক কষ্টের। সেক্ষেত্রে ঘরেই কিছু ব্যায়াম করার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। তবে চাইলে জিমেও যেতে পারেন। এক্ষেত্রে ব্যায়াম প্রশিক্ষকের কাছে জেনে নিন, কোন ব্যায়ামগুলো আপনার শরীরের জন্য উপযোগী।
শরীর গরম করে বাইরে যান
ব্যায়াম করার পর শরীরে যে উষ্ণতা আসে তা অ্যাজমা রোগীদের ফুসফুসের কার্যকারিতা আরও বাড়িয়ে দেয়। সাম্প্রতিক এক গবেষণায় এমন তথ্যই পাওয়া গেছে। কাজেই বের হওয়ার আগে কমপক্ষে ২০ মিনিট হাঁটাহাটি করে শরীর গরম করে তবেই বের হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
অ্যাজমা প্রতিরোধে পদক্ষেপ নিন
বাইরে যাওয়ার আগে অ্যাজমা প্রতিরোধে ওষুধের একটি প্রতিরোধী ডোজ নিন। চাইলে ব্যায়াম, হাঁটাহাটি কিংবা গুটিকয়েক কাজও করতে পারেন। এ কাজগুলো ঠাণ্ডায় বের হওয়ার কমপক্ষে আধা ঘণ্টা আগে করার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। আরও বেশি সুরক্ষায় চাইলে সঙ্গে ইনহেলার রাখতে পারেন।
কর্মপরিকল্পনা ঠিক করুন
শুধু শীতকাল নয়, বরং যে কোন ঋতুতে অ্যাজমার সমস্যা হতে পারে। কাজেই সুরক্ষায় ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলে নিজের কর্মপরিকল্পনা ঠিক করুন।
ওষুধ সেবন
অ্যাজমার রোগীদের নিয়মিত ওষুধ সেবন জরুরি। নিয়মিত চেকআপ অব্যাহত রাখুন। এটি আপনার চিকিৎসা পদ্ধতি সামনের দিকে এগিয়ে নিতে সাহায্য করবে। সবসময় ব্যস্ত থাকবে না, এতে আপনার শরীরে মারাত্মক প্রভাব পড়বে। তবে অবস্থা খারাপ হলে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে যান। ছোট্ট এই সচেতনাগুলোই কিন্তু আপনাকে তীব্র শীতেও অ্যাজমা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করবে।