অনেকেই মনে করেন পেশীবহুল শরীর থাকা মানেই ফিট থাকা। এই ধারণা কিন্তু একেবারেই ঠিক নয়।
কারণ বিশেষজ্ঞদের মতে সুঠাম শরীর নয়, বরং প্রতিদিনের কাজ কে কতটা অনায়াসে করতে পারেন, তা দেখেই মূলত বোঝা সম্ভব কে কতটা ফিট। যেমন ধরুন আপনি যদি এই কাজগুলি ঠিক মতো করতে পারেন, তাহলে শরীর নিয়ে আর কোনও চিন্তা করার প্রয়োজন থাকবে না। কী কী কাজের কথা বলছেন? আসুন জেনে নেওয়া যাক…
১. অফিসের ব্যাগ বইতে পারেন তো?
আজকাল সবার অফিসের ব্যাগেই ল্যাপটপ থাকে। সেই সঙ্গে মাঝে মাঝে টিফন বক্স সহ আরও অনেক কিছু জুটে যায়। ফলে ব্যাগের ওজন বাড়তে বাড়তে কয়েক কেজি হয়ে যায়। এমন ভারি ব্যাগ নিয়ে সিঁড়ি দিয়ে যদি তরতর করে উঠতে পারেন বা কয়েক পা হাঁটতে পারেন, তাহলে জানবেন আপনার শরীর এখনও বেশ ফিট রয়েছে। কারণ কয়েক কেজি ওজন নিয়ে অনায়াসে হাঁটাচলা করা কখনই সম্ভব হবে না, যদি না আপনি শারীরিকভাবে চাঙ্গা থাকেন!
২. গাড়িতে ওঠা-নামার সময় কষ্ট হয় না তো?
বেশ কিছু কেস স্টাডি করে দেখা গেছে যাদের গাড়িতে ওঠার বা নামার সময় কোনও সমস্যা হয় না, তাদের জয়েন্ট মুভমেন্ট খুব সুন্দরভাবে হয়। সেই কারণেই তো তাদের এই কাজটি করার সময় কোনও ধরনের কষ্টের সম্মুখীন হতে হয় না। প্রসঙ্গত, আমাদের শরীরের সচলতা অনেকাংশেই নির্ভর করে আমাদের জয়েন্টের স্বাস্থ্যের উপর।
তাই জয়েন্ট সচল থাকলে শরীরও যে বেজায় কর্মক্ষম থাকবে, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
৩. লাইনে বেশিক্ষণ দাঁড়াতে পারেন তো?
অনেকক্ষণ বসে কাজ করতে করতে আমাদের শরীরের নিচের অংশ দুর্বল হতে শুরু করে। সেই কারণেই তো দীর্ঘক্ষণ লাইনে একভাবে দাঁড়াতে অনেকের কষ্ট হয়। এমনকি এমনও অনেকে আছেন যারা দাঁড়িয়ে থাকার সময় মাঝে মাঝেই বডি ওয়েট এক পা থেকে আরেক পায়ে ট্রান্সফার করে থাকেন। এমনটা যদি আপনাকেও করতে হয়, তাহলে কিন্তু খুবই চিন্তার বিষয়! সেক্ষেত্রে নিয়মিত শরীরচর্চা করতে হব, সেই সঙ্গে পায়ের ব্যায়াম করাও মাস্ট!
৪. বেড়াতে যাওয়ার সময় নিজের লাগেজ নিজেই তোলেন তো?
আপনি কতটা ফিট তা জানতে এটা একটা দারুন উপায়। বিশেষজ্ঞদের মতে যারা ভারি সুটকেস নিজেরাই তুলতে পারেন, তাদের পেশীর গঠন যে বেশ মজবুত হয়, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। আর এমনটা হওয়া মানেই আপনার শরীরে এখনও জং পড়েনি। তাই দীর্ঘদিন যদি শরীরকে সচল রাখতে চান, তাহলে নিজের লাগেজ সব সময় নিজে তুলবেন। যেদিন এই কাজটা কুলি দিয়ে করাতে হবে, জানবেন আপনার শরীর ভাঙতে বসেছে।
৫. অনেকক্ষণ ধরে বাজার করতে পারেন তো?
সপ্তাহের বাজার যখন করেন তখন ব্যাগ কার হাতে থাকে? আপনার তো? তাহলে আর কোনো চিন্তা নেই। কারণ একাধিক কেস স্টাডিতে দেখা গেছে যাদের ভারি ব্যাগ হাতে টানা কয়েক ঘন্টা বাজার করার অভ্যাস রয়েছে, তাদের শরীরের অবস্থা এখনও যে খারাপ হয়নি, সে কথা হলফ করে বলা যেতে পারে। এক্ষেত্রে আরেকটা বিষয়ও খেয়াল করে দেখতে পারেন। ধরুন পাড়ার মুদির দোকানে কিছু কিনতে গেছেন। কেনার পর রিক্সা করে না ফিরে ভারি ব্যাগটা হাতে নিয়েই বাড়ি ফিরেছেন। এমনটা যতদিন করতে পারবেন, জানবেন আপনি একেবারে ফিট আছেন।
৬. বাচ্চাদের কোলে নিতে পারেন তো?
শুনতে একটু আজব লাগলেও একথা প্রমাণিত হয়ে গেছে যে যারা খুব সুন্দরভাবে ছোট বাচ্চাদের কোলে নিতে পারেন, তাদের শরীর এখনও ভেঙে যায়নি। কারণ বাচ্চাদের কোলে নেওয়ার সময় আমাদের হাতের এবং কোমরের পেশীর উপর মারাত্মক চাপ পড়ে। তাই যারা শারীরিকভাবে দুর্বল, তাদের পক্ষে এই কাজটা করা মোটেও সম্ভব হয় না।
৭. বাচ্চাদের সঙ্গে সমান তালে খেলতে পারেন তো?
বয়স যত বাড়তে থাকে, তত ব্যস্ততা এত বেড়ে যায় যে খেলাধুলো ছাড়তে হয়। ফলে শরীর হারাতে থাকে তার সচলতা। তাই ৩০ পেরুনোর পরেও আপনি ফিট কিনা বিচার করতে যে কোনও দিন কিছুটা সময় বাচ্চাদের সঙ্গে কাটান। ওদের পিছু পিছু দৌড়াতে দৌড়াতে যদি দেখেন অল্পতেই ক্লান্ত হয় পড়ছেন, তাহলে জানবেন চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করার সময় এসে গেছে।