এক সময় মনে করা হতো, যার ওজন যত বেশি তার স্বাস্থ্য তত ভালো। কিন্তু এখন এ ধারণাটা সম্পূর্ণ বদলে গেছে। বরং বাড়তি ওজন নিয়ে অনেকেই দুশ্চিন্তাই ভোগেন। ডায়াবেটিস. উচ্চ রক্তচাপ থেকে শুরু করে অনেক জটিল রোগের জন্য অতিরিক্ত ওজন বেশ দায়ী। তাই ডাক্তারের কাছে গেলেই এখন ওজন কমানোর বা নিয়ন্ত্রণে রাখার পরামর্শ শুনতে হয়। কিন্তু কিভাবে ওজন কমানো যায়?
চলুন জেনে নেই ওজন কমানোর কয়েকটি সাধারণ টিপস-
১. খাওয়া বন্ধ না করে সঠিক খাদ্যাভ্যাস গড়ে তুলুন
অনেকেরই ধারনা দৈনিক খাবারে পরিমাণ কমিয়ে দিলে বা এক বেলা কম খেলে ওজন কমানো সম্ভব। তবে ধারণাটি সম্পূর্ণ ভূল। না খেয়ে থাকলে ওজন না কমে বরং উল্টা বেড়ে যাবার সম্ভাবনা বেশি। কারন স্বাভাবিকভাবেই একবেলা না খেয়ে থাকলে বাড়তি ক্ষুধা লাগে। যা মেটাতে পরের বেলায় মনের অজান্তেই বেশি খাওয়া হয়ে যায়। তাই খাবার বাদ দিয়ে নয় বরং সঠিক সময়ে পরিমিত আহার গ্রহণই ওজন নিয়ন্ত্রনে ভূমিকা পালন করে।
২. প্রচুর পরিমানে পানি পান করুন
প্রতিদিন অন্তত ৮-১০ গ্লাস পানি পান করার অভ্যাস করুন। পানি হজম প্রক্রিয়া বাড়ায়। ফলে দেহ হতে ক্ষতিকর উপাদান প্রস্রাবের মাধ্যমে বের হয়ে যায়। এছাড়াও হজম প্রক্রিয়া বাড়ার দরুন শরীরে চর্বি জমতে বাধাপ্রাপ্ত হয় এবং বাড়তি চর্বি ঝরে পড়ে।
৩. চিনিযুক্ত খাবার পরিহার করুন
মিষ্টি ও চিনিযুক্ত খাবার, কোমল পানীয় ইত্যাদিতে রয়েছে উচ্চমাত্রার গ্লুকোজ ও ফ্রুক্টোজ। গ্লুকোজ আমাদের শরীরের প্রত্যেকটি কোষের জন্যে জরুরী। কিন্তু ফ্রুক্টোজ লিভারের মাধ্যমে পরিবর্তিত হয়ে ফ্যাট (চর্বি) এ রূপান্তরিত হয়ে রক্তে ছড়িয়ে পড়তে পারে। ফলে শরীরে চর্বির পরিমান বেড়ে যায় এবং শরীরের বিভিন্ন অংশে বিশেষ করে পেট ও ঊরুতে দ্রুত মেদ জমে যায়।
৪. খাদ্যতালিকায় পর্যাপ্ত ফলমূল ও শাক-সবজি রাখুন
অনেকেরই শাক-সবজির প্রতি অনীহা থাকে। কিন্তু ওজন কমানোর ক্ষেত্রে শাক-সবজির কার্যকর ভূমিকা রয়েছে। তাজা শাকসবজি ও ফলে রয়েছে এন্টি অক্সিড্যান্ট, ভিটামিন, উদ্ভিজ্জ প্রোটিন, মিনারেল ও পরিমিত আঁশ। এগুলো খাবারের হজম বাড়িয়ে চর্বির পরিমান কমাতে সাহায্য করে।
৫. কার্বোহাইড্রেট বা শর্করাজাতীয় খাবার কম খান
ওজন কমাতে কার্বোহাইড্রেট বা শর্করাজাতীয় খাবার কম খান। ভাতের পরিবর্তে লাল আটার রুটি অথবা ব্রাউন ব্রেড খেতে পারেন। এগুলো শরীরে ভাতের তুলনায় কম ক্যালরি তৈরী করে। ফলে ওজন কমবে।
৬. বেশি করে সালাদ খান
বেশি করে সালাদ খেলে ক্যালরির পরিমাণ কমে। অর্থাৎ সালাদ ওজন কমাতে সাহায্য করে।
৭. মাংসের বদলে মাছ খাওয়ার অভ্যাস করুন
খাদ্য তালিকায় মাংসের তুলনায় মাছ বেশি রাখুন। কারন মাছে আছে ওমেগা থ্রি যা ওজন কমাতে ভূমিকা রাখে। এছাড়া রেডমিট, ভাজাপোড়া খাবার, আইসক্রিম, চকলেট ও ফাস্ট ফুড যতটা সম্ভব বাদ দিন।
৮. চিনির পরিবর্তে মধু খান
মধুতে থাকা এন্টি অক্সিডেন্ট চর্বি কমাতে সাহায্য করে। প্রতিদিন সকালে খালি পেটে লেবুর রস ও মধু গরম পানিতে মিশায়ে খেলে ওজন কমে। কেননা লেবুতে থাকা ভিটামিন সি ও গরম পানি দুটোই চর্বি পোড়াতে সাহায্য করে।
৯. রাতজাগা বন্ধ করুন ও সময়মত ঘুমাতে যান
অতিরিক্ত রাত জাগার কারনে শরীরের খাদ্যের চাহিদা বেড়ে যায়। ফলে বারবার খাওয়া হয়। এতে শরীরে চর্বির পরিমান অনেকাংশে বেড়ে যায়। এছাড়া রাত জাগাতে শরীরে হরমোনের ভারসাম্য বিনষ্ট হয়। এটাও মুটিয়ে যাবার কারন। আবার ৬-৮ ঘন্টার বেশিও ঘুমানো উচিত নয়। কারন বেশি ঘুমালেও ওজন বাড়ে।
১০. দ্রুত না খেয়ে আস্তে আস্তে ভালো করে চিবিয়ে খান
আস্তে আস্তে সময় নিয়ে খান। এতে ক্ষুধার তীব্রতা কমে যায় ও কম খাওয়া হয়। এছাড়া খাবার আগে হাফ গ্লাস পানি খেয়ে নিতে পারেন। এতে পেট ভরা ভরা লাগবে এবং খাবার কম খাওয়া হবে। সকালের নাস্তায় ডিম খেতে পারেন। কেননা ডিমের প্রোটিন অনেকক্ষণ পর্যন্ত পেট ভরিয়ে রাখে। ফলে ক্ষুধা কম লাগে।
১১. কম তেলে, বেশি মসলা ব্যবহার করে রান্না করুন
মাত্র ১ চামচ তেলে রান্না করলে আমরা ১২৪ ক্যালরি বাঁচাতে পারি। এছাড়া রান্নায় গোলমরিচ, আদা ও দারুচিনির ব্যাবহার বাড়াতে পারেন। এসব মসলা রক্তে গ্লুকোজ লেভেল কমাতে ভূমিকা পালন করে।
১২. নিয়মিত গ্রিন টি পান করুন
সবুজ চা বা গ্রিন টিতে রয়েছে পলিফেনল ও ক্লোরোজেনিক এসিড। এটা শরীরে খাদ্যবস্তুর পরিপাক ও শোষণ বাড়ায়। ফলে দেহ চর্বিমুক্ত থাকে।