..শুনে নিন লিওনেল মেসির জীবন কাহিনী..
"আমাকে কেউ খেলায় নিত না" -- লিওনেল মেসি আমার জন্ম রোজারিও শহরে। এই শহরটি আর্জেন্টিনার সান্তা ফে প্রদেশের সবচেয়ে বড় শহর। আমরা এই শহরের উত্তর দিকের ব্যারিও লাস হেরাসে খুব সাধারণ কিন্তু সুন্দর একটি বাড়িতে বাস করি। আমার থেকে বয়সে বড় পাঁচ ভাই আর কাজিনদের সঙ্গে আমি ছোটবেলায় খেলতাম। আমার এখনো মনে পড়ে, আমাদের
ছেলেদের সেই ছোট দলটি প্রতি সপ্তাহের শেষে নিয়ম করে ফুটবল খেলত। আমি অনেক ছোটবেলায় প্রথম ফুটবল উপহার পেয়েছিলাম। তখন আমি অনেক ছোট; আমার বয়স মনে হয় তিন কিংবা চার হবে। সেটি আমার জন্য সবচেয়ে বড় উপহার ছিল। তার পর থেকে ক্রিসমাস
হোক আর জন্মদিনই হোক না কেন, আমি সব সময়ই একটি উপহার চাইতাম সবার কাছে; সেটি হলো ফুটবল। আমি আমার উপহারগুলো জমিয়ে রাখতাম। আমি ফুটবল নিয়ে রাস্তায় খেলতে যেতাম না। যদি ফুটবল ফেটে যায় বা ফুটবলের গায়ে ময়লা পড়ে; এই ভয় ছিল আমার। মাঝেমধ্যে বল নিয়ে মাঠে যেতাম, তখন থেকেই আমি ফুটবলের প্রেমে পড়ি। আমাদের বাড়ির চারপাশে সবুজ উদ্যান ছিল। কিন্তু ফুটবল
খেলার জন্য কোনো মাঠ ছিল না। আমাদের বাড়ি থেকে খুব কাছেই একটি পরিত্যক্ত সামরিক ক্যাম্প ছিল, যেটি আমাদের কাছে ব্যাটালন নামেই পরিচিত ছিল। সেই ক্যাম্পে বেশ কটি বড় সবুজ ঘাসের উদ্যান ছিল। আমরা তারের বেড়া ডিঙিয়ে চুপি চুপি চোরের মতো সেই ক্যাম্পে চলে যেতাম। তারপর সারা দিন ফুটবল নিয়েই পড়ে থাকতাম।
আমরা বেশির ভাগ সময়ই রাস্তায় ফুটবল খেলতাম। বাড়ির বাইরে যেখানেই সুযোগ পেতাম, সেখানেই আমরা ফুটবল খেলতাম। যদিও
সে সময় রাস্তাঘাট এবড়োখেবড়ো ছিল। আমরা খুব ছোট একটি পরিবেশের মধ্যে থাকতাম। যার
কারণে সেখানে আমরা একে অন্যকে বেশ ভালোভাবেই চিনতাম। আমরা বাড়ির সামনেই ফুটবল খেলতাম বলে আমার মা আমাকে নিয়ে তেমন চিন্তা করতেন না। আমি পাঁচ বছর বয়স থেকে ফুটবল খেলা শুরু করি। প্রথম
দিকে আমি বড়দের সঙ্গে খেলার অনুমতি পেতাম না। এটা আমার জন্য ছিল সত্যিই হতাশার। আমার পাড়ার বড় ভাইয়েরা আমাকে রাস্তার সেই
ফুটবল ম্যাচে নিতে চাইত না। আমি ছোট ছিলাম বলেই তারা আমাকে নিত না, ব্যাপারটা আসলে এ রকম ছিল না। বড় ভাইয়েরা বলত, তারা নাকি শুধু বড়দের সঙ্গেই ফুটবল ম্যাচ খেলতে চায়। আমার বড় ভাই আমাকে নিয়ে বেশ চিন্তা করতেন। আমার কাছ থেকে অন্য ছেলেরা যখন বল নিতে পারত না, তখন যদি সেই ছেলেরা রেগে গিয়ে আমাকে মারধর করে। এই নিয়েই ছিল তাদের যত
দুশ্চিন্তা। আমি যখন রাস্তায় ফুটবল খেলা শুরু করি, তখনই আমি আমাদের এলাকার ছোট ফুটবল ক্লাব গ্র্যান্ডোলিতে যোগ দিই। শুধুই আমি না, আমাদের পুরো পরিবার সেই ক্লাবে খেলত। মা ছাড়া বাসার সবাই বয়স অনুসারে সেই ক্লাবে খেলতাম আমরা। আমার বাবা তো সেই
ক্লাবের কোচদের একজন ছিলেন। আমরা প্রতি রোববার সারা দিন ক্লাবের মাঠে দৌড়াদৌড়ি করতাম। ক্লাবে যোগদানের শুরু থেকেই আমরা সেভেন-অ্যা সাইডের ম্যাচ খেলতাম। আমাদের শহরের উত্তর অংশের দল রোজারিওর ছোট দলের বিপক্ষে আমরা নিয়মিত খেলতাম। আমি আমার দাদির জন্য প্রথম সেই বড়দের ম্যাচে খেলার সুযোগ পাই। গ্র্যান্ডোলি ক্লাবে আমার বয়সী ছোট ছেলেদের নিয়ে ফুটবল দল ছিল না। এক রোববার আমার
থেকে একটু বয়সে বড় দলের এক খেলোয়াড় খেলার জন্য প্রস্তুত ছিল না। আমার দাদিমা আমাকে জোর করে সেই ম্যাচে খেলতে নামিয়ে দেয়।
তার পীড়াপীড়িতে আমি মাঠে নামি। আমাদের কোচ আমাকে মাঠে নামাতে চাচ্ছিলেন না। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তিনি আমাকে পুরো খেলা খেলতে দিয়েছিলেন। সেটাই ছিল আমার
বড়দের সঙ্গে খেলা প্রথম ক্লাব ম্যাচ। আমি যখন আমার বয়সী খেলোয়াড়দের সঙ্গে মাঠে নামতাম, তখন আমাদের কোচিং করাতেন স্বয়ং আমার বাবা। আমি প্রতিদিন ঘণ্টা ধরে মাঠে ফুটবল প্র্যাকটিস করতাম। আমি প্রতিদিন স্কুলে যেতাম। কিন্তু স্কুল থেকে বাড়ি ফিরেই সোজা ফুটবল নিয়ে দৌড় দিতাম। কিছু একটা মুখে পুরেই আমি রাস্তায়
দৌড় দিতাম। আমি সব সময় রাস্তায় ফুটবল খেলার জন্য মুখিয়ে থাকতাম। প্রায় সব সময় আমার সঙ্গে একটি বল রাখতাম।
বার্সেলোনায় আসার পরেই আমার সব বদলে যায়। আমি আমার সব বন্ধু, পরিবার আর আমার দেশ থেকে দূরে চলে আসি। আমার স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্যই আমি স্পেনে পাড়ি জমাই। আমি মাত্র ১৫ বছর বয়স থেকে বার্সেলোনার যুব দলের সঙ্গে প্র্যাকটিস শুরু করি। আমি সৌভাগ্যবান যে আমি একটি সাধারণ পরিবারে জন্মেছি। কিন্তু
স্রষ্টার কৃপায় আমাদের তেমন কিছুর অভাব ছিল না। আমার বাবা সারা দিন পরিশ্রম করে আমাদের জন্য সবকিছু নিয়ে আসতেন।
আমাদের তিন ভাইয়ের যা যা লাগে তা আমার বাবাই নিয়ে আসেন। আমি কখনোই কোনো কিছুর অভাব বোধ করিনি। যখন ছোট ছিলাম তখন আমার বাবা ও চাচা সব সময় বিশ্বাস করতেন
আমি নাকি বড় ফুটবলার হব। এটা সত্যি হতে শুরু করে যখন আমি বার্সেলোনার উদ্দেশে রওনা দিই। আমি যখন রোজারিওতে বয়স্ক দলের সঙ্গে প্রথম প্র্যাকটিস করি তখন আমার
কোচ বার্সেলোনা যাওয়ার জন্য সব ব্যবস্থা করেন। তিনি তখন তাঁর মনের প্রশান্তির জন্য আমার জন্য একটি চুক্তিপত্র রেডি করেন ন্যাপকিনের ওপর লেখা সেই চুক্তিপত্রে আমি স্বাক্ষর করি। প্রথম
প্রথম বার্সেলোনায় এসে অনেক মন খারাপ করতাম। আমা একা একা লাগত। কান্নাকাটি করতাম। কিন্তু আমি তো স্বেচ্ছায়
আমার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। আমার স্বপ্ন ছিল বার্সেলোনার প্রধান
দলের হয়ে ফুটবল খেলা। আমি শিশুদের বলব, তোমরা ফুটবল খেলাকে উপভোগ করার জন্য
খেলো। #ফুটবল খেলা সত্যিই আনন্দদায়ক। এর মাধ্যমে তুমি নতুন নতুন অনেক বন্ধু বানাতে পারবে। ফুটবল
তোমাকে ব্যক্তি হিসেবে দায়িত্ব বুঝে নিতে সহায়তা করবেই। কিন্তু
সবার আগে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো
#খেলাধুলার আগে পড়াশোনা। তোমার পড়াশোনা শেষ করতে হবে। - (বর্তমান বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় ফুটবলার #আর্জেন্টিনার লিওনেল মেসি। ক্লাব পর্যায়ে মেসি ও #বার্সেলোনা আজ মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ। তিনি ১৯৮৭ সালের ২৪ জুন জন্মগ্রহণ করেন। মাত্র ২১
বছর বয়সে মেসি তাঁর প্রথম ব্যালন ডি’অর পুরস্কার জয়লাভ করেন।
ইতিমধ্যে মেসি প্রথম ফুটবলার হিসেবে চারবার ব্যালন ডি’অর পুরস্কার
লাভ করেছেন। বার্সেলোনার হয়ে তিনি গত ফেব্রুয়ারি মাসে ৩০০তম
গোল করেন। মেসি এখন পর্যন্ত (১ জুলাই ২০১৩) বার্সেলোনার
হয়ে ৩৭৯ ম্যাচে ৩১৩টি গোল করেন ও আর্জেন্টিনার জাতীয় দলের হয়ে 90 ম্যাচে 36 গোল করেছেন।)
চুক্তিপত্রটি ছিল কাগজের ন্যাপকিনের। সেটাতেই স্বাক্ষর করেছিলেন আজকের কিংবদন্তি ফুটবলার লিওনেল মেসি। এটি ছিল বার্সেলনার সাথে তো বটেই এমনকি জীবনের প্রথম কোন ফুটবল ক্লাবের সাথে চুক্তি। তখন বয়স ছিল ১১। মাঝখানে মাত্র কয়েকটি বছরের ব্যবধান এর মধ্যেই ভেঙেছেন ফুটবল দুনিয়ার প্রায় সকল রেকর্ড, নিজের করে নিয়েছেন ফিফার চার চারটি ব্যালন ডি’অর। নিজেই রেকর্ড সৃষ্টি করেছেন আবার নিজের রেকর্ড নিজেই ভেঙেছেন। ২০১২ সালে জার্মান ফুটবলার গার্ড মুলারের এক বছরে ৮৫টি গোলের রেকর্ড ভেঙে মেসি ৯১টি গোলের অবিশ্বাস্য রেকর্ড সৃষ্টি করেন। “আমার করা একবছরে ৮৫টি গোলের রেকর্ড টিকে ছিল প্রায় ৪০ বছর-এখন বিশ্বের শ্রেষ্ঠ খেলোয়াড় এই রেকর্ড ভেঙেছে এবং অবশ্যই আমি তার জন্য আনন্দিত। সে অবিশ্বাস্য একজন খেলোয়াড়, অতিমানবীয়”- মেসিকে নিয়ে এভাবেই নিজের অভিব্যক্তি প্রকাশ করেন মুলার।
মেসির এই মেসি হয়ে ওঠার গল্পটি কিন্তু এত মধুর ছিলনা। ১৯৮৭ সালের ২৪ জুন আর্জেন্টিনার এক শ্রমজীবী পরিবারে জন্মগ্রহন করেন মেসি।
তার বাবা একটি স্টিল কারখানায় কাজ করতেন এবং তার মা ছিলেন একজন পরিচ্ছন্নতা কর্মী। শৈশব থেকেই মেসির ফুটবল খেলার ঝোঁক এবং ভিন্নধর্মী খেলার ধরণ সবার দৃষ্টি আকর্ষন করে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে বাঁধা হয়ে দাঁড়ায় তার বৃদ্ধি হরমোন ঘাটতিজনিত রোগ। এ রোগের প্রভাবে মানুষের স্বাভাবিক শারীরিক বিকাশ ব্যাহত হয়। ওই মুহুর্তে মেসির পরিবারের ব্যয়বহুল এ চিকিৎসা করানোর মতো সামর্থ্য ছিলনা। স্থানীয় একটি ফুটবল ক্লাব, রিভার প্লেট, মেসিকে দলে নিতে আগ্রহী থাকলেও চিকিৎসার ব্যয়ভার বহন করতে সম্মত ছিলনা। এরই মধ্যে মেসি স্পেনের ফুটবল ক্লাব বার্সেলনায় পরীক্ষা দিয়ে শুধু উত্তীর্ণ হন তাই নয় বরং কোচ কার্লস রেক্সাচের মন জয় করে নেন। এরই ধারাবাহিকতায় মেসি বার্সেলনার সাথে চুক্তিপত্র স্বাক্ষর করে বাবার সাথে পাড়ি জমান সুদূর বার্সেলনায় এবং অচিরেই মর্যাদাপূর্ণ এফসি বার্সেলনা তরুন একাডেমীর অপরিহার্য অংশ হয়ে ওঠেন তিনি। এই বার্সেলনায় মেসির চিকিৎসার সার্বিক ব্যায়ভার বহন করে।
মেসি তার স্বরূপ চিনিয়েছেন অনেক আগেই তবে বিশ্ববাসীর সামনে বিস্ময় হয়ে দেখা দিতে শুরু করেন ২০০৪/০৫ মৌসুমে। এই মৌসুমে মেসি সর্বকনিষ্ঠ খেলোয়াড় হিসেবে লিগে গোল করে তাক লাগিয়ে দেন সবাইকে। ২০০৬ সালে মেসি একই মৌসুমে লা লিগা ও চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জয়ী টিমের গুরুত্বপূর্ন সদস্য ছিলেন। পরবর্তী মৌসুমেই (২০০৬-০৭) মাত্র ২০বছর বয়সে মেসি বার্সেলনার হয়ে লিগে ২৬ ম্যাচে ১৪ গোল করে স্ট্রাইকার হিসেবে বার্সেলনার প্রথম পছন্দ হয়ে ওঠেন । এরপরেই ২০০৯-১০ মৌসুমে ৪৭টি গোল করে স্পর্শ করেন রোনাল্ডকে। এরপর শুধুই রেকর্ড ভাঙার গল্প। ২০১২সালে সর্বকালের সব রেকর্ড ভেঙে সকল রেকর্ড নিজের করে নেন একবছরে ৯১টি গোল করার মাধ্যমে। ২০১৩ সালের শুরু পর্যন্ত মেসি ক্লাব ফুটবলে ২৯২ টি ও আন্তর্জাতিক ফুটবলে ৩১টি গোল করেন। ইতোমধ্যে সকল নামকরা ফুটবল ক্লাবের লক্ষ্যে পরিনত হলেও মেসি ২০১২সালে বিশ্বের অন্যতম দামি ফুটবলার হিসেবে বার্সেলনার সাথে ২০১৮সাল পর্যন্ত চুক্তি স্বাক্ষর করেন।
ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে যাওয়ার প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে মেসি বার্সেলনার সাথে তার অঙ্গীকারের কথা উল্লেখ করেন বলেন “বার্সেলনা আমার জীবন। আজ আমি যেখানে পৌঁছেছি সেখানে তারাই আমাকে নিয়ে এসেছে। আমি তাদের ছাড়তে পারবনা এবং ছাড়তেও চাইনা। যদিও আমি জানি প্রিমিয়ার লিগ খুব ভাল কিন্তু আমি আমাকে ইংল্যান্ডে খেলতে দেখতে পারবনা কারণ আমার হৃদয় সবসময় বার্সেলনার সাথে”। শুধু তাই নয় মেসির এ বিনয় আবারো প্রকাশ পায় যখন তিনি শুধুমাত্র মাতৃভূমির হয়ে খেলবেন বলে স্পেনের অনুর্ধ ২০-এ খেলার প্রস্তাব ফিরিয়ে দেন। আর এই বিনয়ের কারনেই হয়তো মেসির শ্রেষ্ঠত্বের বর্ণনা দিতে কার্পন্য করেননি কোন কিংবদন্তী ফুটবলার। ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো বলেছেন “মেসির তার নিজের মত ব্যক্তিত্ব রয়েছে আর আমার আছে আমার মত। ওর যেমন নিজের খেলা আছে তেমনি আমারো আছে। আমিও ওর মতো বড় একটি ক্লাবে খেলছি। আসলে আমরা সব দিক দিয়েই ভিন্ন। তবে এখন পর্যন্ত ওই সেরা”। একইভাবে ফুটবল কিংবদন্তী ম্যারাডোনা বলেছেন “আমার ক্যারিয়ারে আমি অনেক বড় মাপের ফুটবলার দেখেছি। কিন্তু মেসির মত বল নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা আজও কারো দেখিনি”।
ব্যক্তিজীবনে এক পুত্রের পিতা মেসি যে শুধু খেলা নিয়েই ব্যস্ত তা নয় বরং নিজের অবস্থানের সামাজিক দায়বদ্ধতা উপলব্ধি করেই মেসি ইউনিসেফ এর শুভেচ্ছা দূত হিসেবে কাজ করছেন। এছাড়াও শিশুদের শিক্ষা ও খেলাধুলার সুযোগ সৃষ্টি করতে চালিয়ে যাচ্ছেন নিজের দাতব্য সংস্থা, অবদান রাখছেন আর্জেন্টিনার চিকিৎসা ক্ষেত্রেও।
গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ড এ সর্বোচ্চ গোলদাতার খাতায় মান উঠলেও রয়ে গেছে বিশাল এক অতৃপ্তি, এখনো মেসি স্বাদ পাননি বিশ্বকাপ ট্রফির। আর তাই বলায় যায়, মেসি সাফল্যের শিখরে অবস্থান করলেও বিশ্বকাপ ট্রফিই হবে মেসির মুকুটে বিশালতার শ্রেষ্ঠ চিহ্ন। এখন অপেক্ষা মাত্র কয়েকটি দিনের, দেখা যাক এই বিশ্বকাপেই সেই সেরা মুহুর্তের দেখা বিশ্ববাসী পান কিনা।
লিওনেল মেসির সংক্ষিপ্ত ক্যারিয়ার:
নামঃ লিওনেল আন্দ্রেস মেসি
জন্মঃ ২৪জুন ১৯৮৭
জন্মস্থানঃ রোসারিও, আর্জেন্টিনা
উচ্চতাঃ ৫ ফুট ৭ ইঞ্চি
খেলার অবস্থানঃ ফরোয়ার্ড
অর্জন: অলিম্পিক গোল্ড মেডেল ২০০৮, ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপ ২০১১, ফিফা ব্যালন ডি’অর ২০০৯, ২০১০, ২০১১,২০১২। চ্যাম্পিয়ন্স লিগ শিরোপা ৩ বার, লা লিগা প্লেয়ার ফ দ্যা ইয়ার ২০০৯,১০,১১।
রেকর্ড: অফিশিয়াল ম্যাচে সবচেয়ে বেশি হ্যাটট্রিক ২৬ টি,লা লিগায় সবেচেয়ে বেশি হ্যাটট্রিক ১৯ টি। এক মৌসুমে সবচেয়ে বেশি গোল ৯১টি। জাতীয় দলের হয়ে এক বছরে সবচেয়ে বেশি গোল ১২ , লা লিগায় এক মৌসুমে সবচেয়ে বেশি হ্যাটট্রিক ৮ টি। এক ক্লাবের হয়ে সবচেয়ে বেশি গোল ৩৫৪*
গোল: আর্জেন্টিনার হয়ে ৮৩ ম্যাচে ৩৭ গোল।
আর্জেন্টিনার হয়ে অর্জন: ফিফা অনূর্ধ্ব ২০ বিশ্বকাপ শিরোপা, অলিম্পিক গোল্ড মেডেল ২০০৮, কোপা আমেরিকা রানার আপ ২০০৭
লিওনেল মেসি, ফুটবলীয় সংবিধানের অনন্য এক নাম। অসাধারণ সব কীর্তি গড়ে নিজেকে নিয়ে গেছেন অনন্য উচ্চতায়। প্রায় দুই দশক আগে ফুটবলে যাত্রা শুরু করেছিলেন তিনি। ক্রমেই রেকর্ড আর রেকর্ডের পাশে জায়গা করে নিয়েছেন নিজেকে। লা লিগার ইতিহাসে সর্বোচ্চ গোলস্কোরার। ইতিহাসের একমাত্র ফুটবলার হিসেবে টানা চারবার ফিফা ব্যালন ডি’অর জয়। বিশ্বাস করতে গিয়েও চমকে যাওয়ার মতো মেসির জীবনের সাত তথ্য নিয়েই আজকের এই আয়োজন।
১. আর্জেন্টিনার রোজারিও শহরে ১৯৮৭ সালের ২৪ জুন জন্মগ্রহণ করেছিলেন লিওনেল মেসি। মাত্র ১১ বছর বয়সেই গ্রোথ হরমোনের অভাবজনিত কারণে খর্বাকৃতি জটিলতায় আক্রান্ত হন তিনি। কিন্তু এতোসব জটিলতা সত্বেও দমে যাননি মেসি। সব বাধা দূরে ঠেলে ফুটবলীয় কৌশল এবং দক্ষতার বিকাশ ঘটিয়ে বিশ্বের সেরা ফুটবলারে পরিণত হন। তার দ্রুততা এবং কৌশলগত কারণে সবার প্রিয় ফুটবলারে পরিণত হন মেসি।
২. বিশ্ব ফুটবলের সম্ভাব্য সেরা তারকা লিওনেল মেসির মাঝের নামটি আন্দ্রেস। যা হয়তো খুব কম মানুষই জানেন। ফুটবল বিশ্বে এই আন্দ্রে নামটি খুবই পরিচিত। মেসির বাবা-মা ফুটবল থেকেই অনুপ্রেরণা পেয়ে মেসির নাম রেখেছিলেন লিওনেল আন্দ্রেস মেসি। যে নামে বর্তমানে খুব কম মানুষই মেসিকে চিনবে।
৩. বিশ্বফুটবলের খর্বকার স্ট্রাইকারদের একজন মেসি। তার উচ্চতায় ১.৬৯ মিটার। আশ্চর্য তার বল দখলের ক্ষমতা এবং আশ্চর্য তার ক্ষীপ্রতা। যার সৌজন্যেই ফুটবল দুনিয়ায় বিস্ময় সৃষ্টি করেছেন তিনি। লিওনেল মেসি এমন একজন খেলোয়াড় যার আক্রমণে প্রতিপক্ষের রক্ষণভাগের চোখ দিয়ে রীতিমতো পানি পড়তে শুরু করে।
৪. বার্সেলোনায় যোগ দেয়ার আগে নিওয়েলস ওল্ড বয়েজের হয়ে ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন মেসি। সেখানে ১৯৯৫ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত খেলেন ফুটবলের এই ক্ষুদে যাদুকর। নিওয়েলস ওল্ড বয়েজ থেকেই বার্সেলোনায় যোগ দেন তিনি।
এদিকে ২০১২ সালের ২ নভেম্বর জন্ম হয় থিয়াগোর। জন্মের ৭২ ঘণ্টা পরই তাকে সই করিয়ে নেয় নিওয়েলস ওল্ড বয়েজ সাপোর্টার্স ক্লাব। ক্লাবের পক্ষ থেকে থিয়েগোর মাপের জার্সিও দেয়া হয়েছে। বাবার মতোই ছেলের জার্সি নাম্বারও ১০।
৫. ২০০৮ সালে ফিফার বর্ষসেরার সংক্ষিত তিনের তালিকায় জায়গা করে নিয়েছিলেন লিওনেল মেসি। অথচ তখন তার বয়স মাত্র ২১। সেবার ব্যালন ডি’অর জিততে পারেননি বার্সেলোনার এই আর্জেন্টাই স্ট্রাইকার। তবে এর পরের চার বছর ইতিহাসের একমাত্র ফুটবলার হিসেবে টানা চারবার ফিফা ব্যালন ডি’অর জয়ের অসাধারণ কীর্তি গড়েন লিওনেল মেসি।
৬. ২৪ বছর বয়সেই লা লিগার ইতিহাসের সর্বোচ্চ গোলস্কোরারের স্থানটি দখল করে নেন মেসি। এই মেসিই ক্লাব ইতিহাসের সবচেয়ে বেশি হ্যাটট্রিক করার রেকর্ড গড়েন।
অবিশ্বাস্য গতি এবং ক্ষিপ্রতার কারণেই লিওনেল মেসির গোল করার দারুণ ক্ষমতা। ডান এবং বা উভয় পায়েই গোল করার কৌশল জানা। শুধু তাই নয়, শুন্যে ভাসিয়ে হেডের সাহায্যে গোল করার ক্ষমতাও ঈর্ষণীয়।
৭. মাত্র ২৫ বছর বয়সে সবচেয়ে কম বয়সী ফুটবলার হিসেবে মেসি ২০০তম লিগ গোল করেন। এক ক্যালেন্ডারে সবচেয়ে বেশি গোল করার রেকর্ডটাও তার দখলে। মেসিই ইতিহাসের প্রথম ফুটবলার যিনি তিনটি ইউরোপিয়ান ‘গোল্ডেন শু’ জেতার রেকর্ড গড়েন।