আব্দুস সাত্তার খান বাংলাদেশের একজন বিখ্যাত মহাকাশ গবেষক। কর্মজীবনে তিনি নাসা, ইউনাইটেড টেকনোলজিসের প্র্যাট এন্ড হুইটনি এবং অ্যালস্টমে (সুইজারল্যান্ড) কাজ করেছেন।
আব্দুস সাত্তার ১৯৪১ ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় নবীনগর উপজেলার খাগাতুয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।[১] তিনি রতনপুর উচ্চ বিদ্যালয় এবং কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজে পড়াশোনা করেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রসায়ন বিভাগ থেকে ১৯৬২ সালে স্নাতক (সম্মান) এবং ১৯৬৩ সালে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। এরপর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রসায়ন বিভাগে প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন। তিনি ১৯৬৪ সালে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে ডক্টরেট করতে যান এবং ১৯৬৮ সালে রসায়নের উপর ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেন। এরপর তিনি দেশে ফিরে এসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রসায়ন বিভাগে সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে যোগদান করেন। ঐ বছরই তিনি ধাতব প্রকৌশল নিয়ে গবেষণা করার জন্য যুক্তরাষ্ট্র গমন করেন।
তিনি নাসা ইউনাইটেড টেকনোলজিস এবং অ্যালস্টমে কাজ করার সময়ে ৪০টিরও বেশি সংকর ধাতু উদ্ভাবন করেছেন। এই সংকর ধাতুগুলো ইঞ্জিনকে আরো হালকা করেছে, যার ফলে উড়োজাহাজের পক্ষে আরো দ্রুত উড্ডয়ন সম্ভব হয়েছে এবং ট্রেনকে আরো গতিশীল করেছে। তার উদ্ভাবিত সংকর ধাতুগুলো এফ-১৬ ও এফ-১৭ যুদ্ধবিমানের জ্বালানি সাশ্রয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। তিনি ফ্লোরিডা স্টেট ইউনিভার্সিটির যন্ত্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক হিসেবে কাজ করেছেন।
আব্দুস সাত্তারের গবেষণা এবং মহাকাশে তার প্রয়োগের জন্য তিনি নাসা, আমেরিকান বিমানবাহিনী, ইউনাইটেড টেকনোলজি এবং অ্যালস্টম থেকে অসংখ্য পুরস্কার লাভ করেন। তিনি ব্রিটেনের রয়েল সোসাইটি অব কেমিস্ট্রির একজন পেশাদার রসায়নবিদ এবং নির্বাচিত ফেলো। তিনি স্বীকৃতি হিসেবে ২০০৫ সালে যুক্তরাজ্য থেকে পেশাজীবী বিজ্ঞানী হিসেবে রয়েল সোসাইটি অব কেমিস্ট্রি এবং এর আগে ১৯৯৬ সালে যুক্তরাজ্যের রয়েল সোসাইটি অব কেমিস্ট্রি থেকে ফেলো নির্বাচিত হন। যুক্তরাষ্ট্রের সোসাইটি অব মেটালসেরও সদস্য তিনি। ১৯৮৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধবিমান এফ-১৫ ও এফ-১৬-এর ইঞ্জিনের জ্বালানি খরচ কমানোয় বিশেষ অবদান রাখার জন্য পান ইউনাইটেড টেকনোলজিস স্পেশাল অ্যাওয়ার্ড। ১৯৯৪ সালে পান উচ্চগতিসম্পন্ন জেট বিমানের ইঞ্জিন ও ক্ষেপণাস্ত্র তৈরিতে অবদানের জন্য ‘ইউনাইটেড টেকনোলজিস রিসার্চ সেন্টার অ্যাওয়ার্ড অব এক্সিলেন্স’ পদক।
১৯৯৩ সালে পান ‘প্রাট অ্যান্ড হুইটনি’র বিশেষ অ্যাওয়ার্ড। পেশাদার বিজ্ঞানী থেকে অবসর নেওয়ার পরও তাঁর বিজ্ঞানের সেবা থেমে থাকেনি।
এই সময়ে আবদুস সাত্তার ফ্লোরিডা স্টেট ইউনিভার্সিটিতে যন্ত্র প্রকৌশল বিভাগের গবেষক ও ষাণ্মাসিক অধ্যাপক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এখানে কাজ করার সময় কার্বন ন্যানো টেকনোলজি-সম্পর্কিত বস্তুগত বিজ্ঞান ও জৈব রাসায়নিক প্রযুক্তির প্রয়োগের ওপর একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেন। এ জন্যই তাঁর নাম বিশেষভাবে উচ্চারিত হয় এই বিশ্ববিদ্যালয়ে।
আবদুস সাত্তার খান যুক্তরাষ্ট্রে বিভিন্ন ধরনের সেবামূলক কাজের সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন। তিনি ফ্লোরিডায় বাংলাদেশি সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা এবং এশিয়ানদের স্থানীয় সংগঠক হিসেবে কাজ করেছেন। ১৯৯১ সালে বাংলাদেশের প্রলয়ংকরী বন্যার সময় তিনি রেডক্রসের মাধ্যমে ৬১ হাজার ডলার বাংলাদেশে পাঠান। তিনি টেক্সাসের লামার বিশ্ববিদ্যালয় ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে একটি যোগসূত্র স্থাপন করে দিয়েছেন, যার কারণে লামার বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থীরা বিশেষ সুবিধা পেয়ে থাকেন।
১৯৯১ সালে বাংলাদেশের বন্যাদুর্গতদের জন্য ৬১,০০০ মার্কিন ডলার সংগ্রহ করেন এবং রেডক্রসকে দান করেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও টেক্সাসের লামার বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে সহযোগিতা চুক্তি প্রতিষ্ঠা করেন।
আবদুস সাত্তার খান শুধু যে একজন সফল বিজ্ঞানী ছিলেন, তা-ই নয়। তিনি যুক্তরাষ্ট্রে বিভিন্ন ধরনের সেবামূলক কাজের সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন। তিনি ফ্লোরিডায় বাংলাদেশি সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা এবং এশিয়ানদের স্থানীয় সংগঠক হিসেবে কাজ করেছেন। ১৯৯১ সালে বাংলাদেশের প্রলয়ংকরী বন্যার সময় তিনি রেডক্রসের মাধ্যমে ৬১ হাজার ডলার বাংলাদেশে পাঠান। তিনি টেক্সাসের লামার বিশ্ববিদ্যালয় ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে একটি যোগসূত্র স্থাপন করে দিয়েছেন, যার কারণে লামার বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থীরা বিশেষ সুবিধা পেয়ে থাকেন।
২০০৮ সালের ৩১ জানুয়ারি এই মহান বিজ্ঞানী না ফেরার দেশে চলে যান।