ফেসবুকে BFF লিখলে কি হয়? আসল কাহিনী জানুন

ফেসবুকে BFF লিখলে কি হয়? আসল কাহিনী জানুন

ভুয়ো খবর রুখতে ফেসবুক যতই পদক্ষেপেরই আশ্বাস দিক না কেন, আদতে যে সেই সব প্রচারই ঢক্কানিনাদ- সেটা গত ৪৮ ঘণ্টা ধরে ফেসবুক খুললেই বুঝতে পারছেন নিশ্চয়? বিশ্বের এক নম্বর জনপ্রিয় সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটের গায়ে এসে লেগেছে তথ্য চুরির  কলঙ্কের ঢেউ। আর তার পরই দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়ছে BFF সিকিউরিটি টেস্টের ভুয়ো খবর। ইংরাজিতে ‘BFF’ লেখার পর যদি দুটি রঙিন হাতের অ্যানিমেশন দেখতে পান- তাহলেই নাকি আপনার অ্যাকাউন্ট সুরক্ষিত রয়েছে, নচেৎ পাসওয়ার্ড বদলে ফেলার ‘সু-পরামর্শ’ দিচ্ছেন কেউ কেউ। কিন্তু আসল সত্যিটা কী?

আসলে এও হল ফেসবুকে আর পাঁচটা ভুয়ো খবরের মতোই ভুয়ো। ফেসবুকের তথ্য চুরি করে মার্কিন নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করা হয়েছে বলে যে অভিযোগ উঠেছে, তারই প্রেক্ষিতে ছড়িয়েছে এই ভুয়ো খবর। আদতে এরকম কোনও সিকিউরিটি টেস্টই মার্ক জুকারবার্গের সংস্থা শুরু করেনি, একবাক্যে জানিয়েছে সবকটি প্রযুক্তি সংক্রান্ত ওয়েবসাইট। BFF লিখলে যে অ্যানিমেশনটি দেখা যাচ্ছে সেটির পোশাকি নাম Text Delight। কেউ কেউ বলছেন, BFF লেখার পর যদি লাল-সবুজ হাতের অ্যানিমেশন দেখতে না পান তাহলে বুঝতে হবে আপনার অ্যাকাউন্ট নিরাপদ নয়, পাসওয়ার্ড বদলে ফেলতে হবে। এর চেয়ে বড় মিথ্যা আর কিছু হতে পারে না। আসলে যাঁদের স্মার্টফোনে ফেসবুক অ্যাপটি ‘আপডেটেড’ নয়, তাঁরা এই ফিচারটি পাচ্ছেন না। আর ফেসবুক অ্যাকাউন্টকে নিরাপদ করতে চাইলে নির্দিষ্ট সময় অন্তর পাসওয়ার্ড পালটান। তাহলেই হবে। ফেসবুক কর্তৃপক্ষ ইঙ্গিত দিয়েছে, ভবিষ্যতে তথ্য চুরি না রুখতে পারলে হয়তো ব্যবসাই গুটিয়ে নেবে। এমনিতেই ‘কেমব্রিজ অ্যানালিটিকা’র বিতর্কের ঢেউ এসে লাগার পর মার্ক জুকারবার্গের ক্ষতি হয়েছে প্রায় ৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এমনকী কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী তো তাঁকে সতর্কও করেছেন।

 

যাই হোক, মোদ্দা কথা ভবিষ্যতে এরকম ভুয়ো খবর দেখে প্রভাবিত হওয়ার আগে কোনও বিশ্বাসযোগ্য ওয়েবসাইট ভিজিট করে খবরটি একবার খতিয়ে দেখে নিন। Text Delight ফিচারটি শুধু BFF নয়, আরও বেশ কয়েকটি শব্দ লিখলেও আপনি রঙিন অ্যানিমেশন দেখতে পাবেন। যেমন, xoxo, Best Wishes, Congratulations, You Got This। বিশ্বাস না হয়, নিজেই দেখে নিন। আর এভাবে ইনবক্সে, হোয়াটসঅ্যাপে যা মেসেজ আসছে, সেই সব মেসেজকে অমোঘ সত্য বলে ধরে নিয়ে অন্যকে পাঠাবেন না! এতে ভুয়ো খবরের একটা ‘চেন’ তৈরি হয়। সেই ভুয়ো খবর আবার ঘুরে আপনার কাছেই আসতে পারে। কখনও কখনও এরকম ভুয়ো খবর যথেষ্ট বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। আর একটা কথা! আগের জন্মে কেমন দেখতে ছিল বা দাড়ি রাখলে কেমন দেখতে লাগবে- এই জাতীয় অ্যাপগুলিতে ক্লিক করবেন না। এরাই তথ্য চুরির আসল কারিগর। এরা থার্ড পার্টি অ্যাপ। ফেসবুকের প্ল্যাটফর্মকে কাজে লাগিয়ে এরাই আপনার তথ্য চুরি করে। প্লে স্টোর থেকে ‘ভেরিফায়েড’ তকমা ছাড়া অ্যাপ নামাবেন না। ফেসবুকে সবাই শেয়ার করছে বলে আমাকেও নাম-ধাম না জানা কোনও অ্যাপ ব্যবহার করতে হবে- এই বিপজ্জনক প্রবণতায় গা ভাসাবেন না। আজ যেভাবে আপনি BFF লিখে একটু ভুয়ো খবরকে ছড়াচ্ছেন, সেভাবেই পরে হয়তো আপনি নিজেই কোনও এক ভুয়ো খবরের পাল্লায় পড়ে সমস্যায় জড়াবেন। তাই সবসময়, ‘Share with Care’ নীতি মেনে চলুন।