একাত্তর জন সন্তানের মা বিলকিছ আরা বানু। এরকম কোটি সন্তানের মা হতে চান কুড়িগ্রামের এই নারী। গর্ভজাত সন্তান না হলেও, মায়ের মমতায়ই এতিম শিশুদের সুন্দর জীবন উপহার দেয়ার ইচ্ছায় প্রতিষ্ঠা করেন ‘গোলাপ খাঁ শিশু সদন’। যেখানে দীর্ঘ ৯ বছর ধরে অনাথ শিশুদের উন্মুক্ত আশ্রয়স্থল প্রতিষ্ঠায় নিভৃতে কাজ করে চলেছেন বিলকিছ আরা বানু।
কুড়িগ্রাম শহর থেকে ২৫ কি. মি. দূরে নাগেশ্বরী উপজেলায় ‘গোলাপ খাঁ শিশু সদন’ – ৭১জন এতিমের আশ্রয়স্থল। এখানেই বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা পরিচয়হীন বা এতিম শিশুরা পাচ্ছে তাদের পরিচয়, মাতৃস্নেহ। কিছুটা আনন্দময় শৈশব-কৈশোরই তারা পাচ্ছে এখানে।
শুরুটা সেই ১৯৯৮ সালে। বাজারের রাস্তার পাশে ঝর্ণা পাগলীর কোলে জন্ম নেয় পিতৃ পরিচয়হীন এক শিশু। নভেম্বরের এক কনকনে ঠান্ডায় শিশুটির জরাজীর্ণ অবস্থা দেখে তুলে নেন বিলকিছ আরা বানু। শিশুটির নাম দেন ‘প্রীতিলতা’। এই খবরে অনেকেই আগ্রহী হয়ে এরকম শিশুর সন্ধান দিতে থাকে। এদের সংখ্যা বাড়তে থাকলে ২০০৯ সালে ১৩জন অনাথ শিশুকে নিয়ে শুরু হয় এর আনুষ্ঠানিক যাত্রা।
দেড় বিঘা জমির উপর প্রতিষ্ঠিত গোলাপ খাঁ সদন। রয়েছে একটি প্রশাসনিক, একটি আবাসিক, একটি স্কুল ভবন। বর্তমানে রুমের সংকটসহ কিছু সমস্যায় দিনাতিপাত করতে হচ্ছে শিশুদের।
এই সদনে আবাসিক ৭১জন এতিম শিশু আর অনাবাসিক ভাবে প্রায় আড়াইশ’ শিশুকে নুন্যতম বেতনে পড়াশুনার করান শিক্ষকরা। শিশু সদনে শিশু শ্রেণি থেকে ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা দেবার জন্য বর্তমানে ১৩জন শিক্ষক এবং ৫জন সহকারী রয়েছে।
শিশু সদনটির মাসিক ব্যয় প্রায় তিন লাখ টাকা। এর আয়ের উৎস শিশুসদন প্রীতিলতা সুপার মার্কেটের মাসিক ভাড়া আর বন্ধু-বান্ধব এবং সমাজের সচেতন মানুষের সহায়তা। জেলা প্রশাসক জানালেন, সদনটি ট্রাস্টের আওতায় আনা গেলে এর সাময়িক সমস্যাগুলো দূর হয়ে যাবে।