এস এম আসলাম তালুকদার যিনি মান্না নামেই অধিক পরিচিত বাংলাদেশের একজন জনপ্রিয় চলচ্চিত্র অভিনেতা ও চলচ্চিত্র প্রযোজক ছিলেন। তিনি ৩৫০ এর বেশি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন ও ২০০৬ সালে "সেরা অভিনেতা" হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরষ্কার লাভ করেন।
প্রারম্ভিক জীবন ঃ
১৯৬৪ সালে টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার এলেঙ্গায় জন্মগ্রহণ করেন মান্না। তার আসল নাম এস এম আসলাম তালুকদার। উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় পাস করার পরই ১৯৮৪ সালে তিনি নতুন মুখের সন্ধানের মাধ্যমে চলচ্চিত্রে আসেন। এরপর থেকে একের পর এক চলচ্চিত্রে অভিনয় করে নিজেকে সেরা নায়ক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন এবং চলচ্চিত্র অঙ্গনে তাঁর শক্ত ভিত্তি গড়ে তোলেন। সমগ্র চলচ্চিত্র জীবনে তিনি মোট ২৪৫ টি ছবিতে কাজ করেছেন। এর মাঝে নাম মাত্র অভিনেতা হিসাবে ১০০ ছবিতে কাজ করেছেন। আর বাকী গুলা মেইন নায়ক ২য় নায়ক হিসাবে কাজ করেছেন।[২] মান্না বঞ্চিত মানুষের কথা সিনেমার পর্দায় সুনিপুণভাবে তুলে ধরেছেন।
কর্মপরিধি ঃ
নব্বই দশকে অশ্লীল চলচ্চিত্র নির্মাণের ধারা শুরু হলে যে কজন প্রথমেই এর প্রতিবাদ করেছিলেন,তাদের মধ্যে নায়ক মান্না ছিলেন অন্যতম। যদিও মাত্রা অতিরিক্ত " ফায়ার' ছবিটি ছিল তার। এর প রেও রীতিমতো যুদ্ধ করেছেন অশ্লীল চলচ্চিত্রের বিরুদ্ধে। এসব চলচ্চিত্রের নির্মাতাদের সঙ্গে লড়াই করে শেষ পর্যন্ত জয়ী হয়েছিলেন। দাঙ্গা, লুটতরাজ, তেজী, আম্মাজান, আব্বাজান প্রভৃতি চলচ্চিত্রে চমৎকার অভিনয় এর মাধ্যমে জনপ্রিয়তার চূড়া ছুঁয়েছিলেন মান্না। তাঁর অভিনীত আম্মাজান চলচ্চিত্রটি বাংলাদেশের সর্বাধিক ব্যবসাসফল ও জনপ্রিয় চলচ্চিত্রগুলোর মধ্যে অন্যতম।
তাঁর প্রথম অভিনীত ছবির নাম তওবা কিন্তু প্রথম মুক্তি পায় 'পাগলি' ছবিটি। ১৯৯১ সালে মোস্তফা আনোয়ার পরিচালিত 'কাসেম মালার প্রেম' ছবিতে প্রথম একক নায়ক হিসেবে সুযোগ পেয়েছিলেন। এর আগে সব ছবিতে মান্না ২য় নায়ক হিসেবে অভিনয় করেছেন । কাসেম মালার প্রেম ছবিটি দর্শকের মাঝে সাড়া ফেলার কারনে মান্না একের পর এক একক ছবিতে কাজ করার সুযোগ লাভ করেন। এরপর কাজী হায়াত পরিচালিত দাঙ্গা ও ত্রাস ছবির কারনে তাঁর একক নায়ক হিসেবে প্রতিষ্ঠা পাওয়া সহজ হয়ে যায়। এরপর মোস্তফা আনোয়ার এর অন্ধ প্রেম, মনতাজুর রহমান আকবর এর প্রেম দিওয়ানা, ডিস্কো ড্যান্সার, কাজী হায়াত এর দেশদ্রোহী, আকবরের বাবার আদেশ ছবিগুলো মান্নার অবস্থান শক্তভাবে প্রতিষ্ঠিত করে। এটিই তার প্রথম একক ছবি। ৯৯ সালে মুক্তি পায় আকবরের 'কে আমার বাবা', কাজী হায়াত এর আম্মাজান রায়হান মুজিব ও আজিজ আহমেদ বাবুল এর খবর আছে, মালেক আফসারী পরিচালিত এবং তার প্রযোজিত ২য় ছবি লাল বাদশা মতো সুপারহিট ছবি। মান্না শুধু চলচ্চিত্র অভিনেতাই ছিলেন না, তাঁর প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান থেকে যতগুলো ছবি প্রযোজনা করেছেন, প্রতিটি ছবি ব্যবসাসফল হয়েছিল। ছবিগুলো হচ্ছে লুটতরাজ, লাল বাদশা, আব্বাজান, স্বামী স্ত্রীর যুদ্ধ, দুই বধূ এক স্বামী, মনের সাথে যুদ্ধ, মান্না ভাই ও পিতা মাতার আমানত।
মৃত্যুর পূর্বপর্যন্ত তিনি বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।
সম্মাননা ঃ
জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার
শ্রেষ্ঠ অভিনেতা - বীর সৈনিক (২০০৩)
বাচসাস পুরস্কার
শ্রেষ্ঠ অভিনেতা - আম্মাজান (১৯৯৯)
মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কার
শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র অভিনেতা - (১৯৯৯), (২০০০), (২০০৭)
মৃত্যু ঃ
২০০৮ সালের ১৭ই ফেব্রুয়ারি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মাত্র ৪৪ বছর বয়সে মান্না মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুর পর তার জানাজা এফ'ডিসিতে হয়। ২য় জানাজা স্মৃতিসৌধে হওয়ার কথা ছিল, কিন্তু দর্শকরা তাকে এতোই ভালবাসে এবং শ্রদ্ধা করে যে ভক্তকুলের ভিড় এবং পুরো ঢাকায় অত্যন্ত জ্যাম থাকায় তাকে সেখানে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়নি। টাঙ্গাইল জেলায় অবস্থিত তার নিজ গ্রাম এলেঙ্গায় তাঁকে সমাহিত করা হয়।
 
                             
  
  
                                             
                                        
										
									 
                                        
										
									 
                                        
										
									 
                                        
										
									 
                                        
										
									 
                                        
										
								 
                                                
																					 
                                                
																					 
                                                
																					 
                                                
																					 
                                                
																					 
                                                
																					 
                                                
																					