নিজ বাসার শোবার ঘরে লাশ পাওয়া গেছে মা ও ছেলের । মিতালী আবাসিক এলাকার অর্ধনির্মিত তিনতলা ভবনের নিচ তলার একটি বাসা থেকে তাদের লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। নিহতরা হলেন— রোকেয়া বেগম (৪০) ও তার ছেলে রবিউল ইসলাম রূপম (১৬)। এদিকে, রোকেয়ার মেয়েশিশু রাইসা বেগমকে (৫) জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে। পুলিশ ধারণা করছে, রাইসাকেও হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। সে জ্ঞান হারিয়ে ফেললে মারা গেছে মনে করে খুনিরা। পুলিশ জানায়, রোকেয়া বেগমকে ছুরিকাঘাত ও রূপমকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে থাকতে পারে খুনিরা।
নিজ বাসার শোবার ঘরে পাওয়া গেছে মা ও ছেলের লাশ। গতকাল রবিবার সকালে মিরাবাজারস্থ খাড়পাড়ার
নিহত রোকেয়া বেগম বারুতখানা নিবাসী প্রবাসী হেলাল আহমদের স্ত্রী। তার পার্লার রয়েছে বলে জানা গেছে। একটি সূত্র জানায় রোকেয়ার বাড়ি কুমিল্লায়। তিনি তার স্বামীর দ্বিতীয় স্ত্রী। নিহত রূপম এসএসসি পরীক্ষার্থী। ঘটনার পর থেকে বাসার কাজের মেয়ে পলাতক রয়েছে।উদ্ধার শিশু রাইসাকে ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পুলিশের তত্ত্বাবধানে চিকিত্সা দেয়া হচ্ছে। রাইসার মুখে কোন কথা নেই। হাসপাতালে সারাক্ষণই সে কাঁদছে। সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের (এসএমপি) কমিশনার গোলাম কিবরিয়া গতকাল সন্ধ্যায় ইত্তেফাককে বলেন, তিনি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। পুলিশের সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তারা হত্যাকান্ডের ক্লু বের করার চেষ্টা করছেন।মা ও ছেলে খুনের ঘটনার খবর পেয়ে পুলিশ গতকাল সকাল ১০ টার দিকে ওই বাসায় যায়। ঘটনাস্থল থেকে সোবহানীঘাট ফাঁড়ির এসআই বিষ্ণুপদ রায় ইত্তেফাককে জানান, তারা সেখানে গিয়ে দেখেন ঘরের দরজা বন্ধ। জানালা দিয়ে দেখতে পান একটি শিশু কাঁদছে। সে দরজা খুলতে পারছে না বিধায় পুলিশ ঘরের দরজা ভেঙ্গে ভিতরে ঢুকে শিশুটিকে উদ্ধার করে। পরে দেখা যায় মা ও ছেলের লাশ পড়ে আছে।এসএমপির উপ-কমিশনার (মিডিয়া) মুহাম্মদ আব্দুল ওয়াহাব বলেন, রোকেয়া বেগম তার ছেলে-মেয়ে ও কাজের মেয়ে নিয়ে ওই বাসায় ভাড়া থাকতেন। তবে তার স্বামী অসুস্থ থাকায় তিনি অন্যখানে তার নিজ বাড়িতেই থাকতেন।নিহত রোকেয়ার ভাই জাকির হোসেন জানান, গত শুক্রবার সন্ধ্যা থেকে তিনি তার বোনের মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়ায় গতকাল বোনের বাসায় আসেন। বোনকে অনেক ডাকাডাকির পরও সাড়া না পেয়ে তিনি উপরতলায় ভবনের মালিক সালমান হোসেনকে খবর দেন। পরে পুলিশ এসে তাদের মরদেহ উদ্ধার করে। এসএমপির অতিরিক্ত কমিশনার পরিতোষ ঘোষ জানান, ধারণা করছি শুক্রবার বিকালে এ হত্যাকাণ্ডটি ঘটে থাকতে পারে। রোকেয়া বেগমের শরীরের বেশ কয়েকটি স্থানে ছুরিকাঘাত রয়েছে। রূপমকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। ওই পুলিশ কর্মকর্তা জানান, রাইসাকেও তারা সম্ভবত মারার চেষ্টা করে। পরে মৃত ভেবে তাকে ফেলে রেখে পালিয়ে যায় খুনিরা। ঘটনা তদন্তের পরই নিশ্চিত হওয়া যাবে।পুলিশ নিহত রোকেয়ার ব্যবহূত কমিপউটারটি জব্দ করেছে। স্থানীয় সূত্র জানায়, রোকেয়ার স্বামী বা তার আত্মীয়স্বজন কাউকে ঘটনাস্থলে দেখা যায়নি।জোড়া খুনের ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়লে খাড়পাড়ার মিতালী আবাসিক এলাকার ১৫/জে নম্বর বাসার সামনে দিনভর অসংখ্য মানুষের ভিড় জমে উঠে। কারো মুখে কথা নেই। বিকাল পৌনে ৬ টায় দুটি অ্যাম্বুলেন্সে করে লাশ দুটি সিলেট ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়।