আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক, বর্তমান প্রেসিডিয়াম সদস্য ও জনপ্রশাসনমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের মরদেহ দেশে আনা হচ্ছে আজ শনিবার।
সন্ধ্যা সাড়ে পাঁচটায় বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইটে তার মরদেহ ঢাকার হযরত শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছবে। সেখানে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে জাতীয় নেতারা তার মরদেহ গ্রহণ করবেন।
আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়- সন্ধ্যা সাতটায় সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের মরদেহ ২১ বেইলি রোডে তার সরকারি বাসভবনে নিয়ে যাওয়া হবে। সেখান থেকে মরদেহ সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালের হিমাগারে রাখা হবে।
পরদিন রোববার সকাল সাড়ে ১০টায় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় মরহুমের প্রথম নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। এরপর হেলিকপ্টারে মরদেহ কিশোরগঞ্জে নিয়ে যাওয়া হবে এবং দুপুর ১২টায় কিশোরগঞ্জ পুরাতন স্টেডিয়াম মাঠে দ্বিতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। মরহুমের তৃতীয় জানাজা দুপুর ২টায় ময়মনসিংহের আঞ্জুমান ঈদগাহ মাঠে অনুষ্ঠিত হবে। বাদ আসর বনানী কবরস্থানে চিরনিদ্রায় শায়িত হবেন আদর্শবান-ত্যাগী-নিবেদিতপ্রাণ ও সর্বজনস্বীকৃত এই নেতা।
২০১৭ সালের ২৪ অক্টোবর স্ত্রী মারা যাওয়ার পর থেকেই সৈয়দ আশরাফ অসুস্থ হয়ে পড়েন। তিনি ফুসফুসের ক্যান্সারে ভুগছিলেন। অসুস্থতার কারণে তিনি গত বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর সংসদ থেকে ছুটি নেন। এ অবস্থাতেই একাদশ সংসদ নির্বাচনে কিশোরগঞ্জ-১ আসনে নৌকা প্রতীকে জয়ী হন সৈয়দ আশরাফ।
দেশে ফিরে শপথ নিতে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর কাছ থেকে সময় চেয়ে নিয়েছিলেন মুজিবনগর অস্থায়ী সরকারের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলামের ছেলে সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। কিন্তু তা আর হল না। অগণিত নেতাকর্মী আর শুভানুধ্যায়ীদের কাঁদিয়ে না ফেরার দেশে চলে গেছেন সবার প্রিয়ভাজন আশরাফ। বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে নয়টায় থাইল্যান্ডের ব্যাংককের বামরুনগ্রাদ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
এদিকে সৈয়দ আশরাফের মৃত্যুর খবরের সঙ্গে সঙ্গে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের মধ্যে শোকের ছায়া নেমে আসে। নিমিষেই ফেসবুক পোস্টে ভাইরাল হতে থাকে সৈয়দ আশরাফের মৃত্যুর খবর। বৃহস্পতিবার রাতেই শোক জানান রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, স্পিকার, ডেপুটি স্পিকারসহ মন্ত্রিপরিষদ সদস্যরা।
অন্যদিকে তার দল আওয়ামী লীগ ছাড়াও দেশের প্রায় সব রাজনৈদিক দল, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন ও বিশিষ্ট ব্যক্তিরা সৈয়দ আশরাফের মৃত্যুতে গভীর শোক ও সমবেদনা জানান।
শুক্রবার দেশের বিভিন্ন মসজিদে মরহুমের রুহের মাগফিরাত কামনা করে দোয়া করা হয়। এছাড়া অন্যান্য ধর্মের মানুষও সৈয়দ আশরাফের আত্মার শান্তি কামনায় আয়োজন করে বিশেষ প্রার্থনা সভা। সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনায় ছাত্রলীগ এক বিশেষ দোয়া মাহফিলের আয়োজন করে।
শুক্রবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে জুমার নামাজের পর এই দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। দোয়া পরিচালনা করেন মসজিদের ইমাম ড. হাফেজ মোহাম্মদ এমদাদুল হক। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক আখতারুজ্জামান, ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সংসদের সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীসহ ছাত্রলীগের অন্য নেতাকর্মীরা।
এদিকে সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের মৃত্যুতে শোক জানিয়েছে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ। শুক্রবার এক যৌথ বিবৃতিতে তারা বলেন, সৈয়দ আশরাফের মৃত্যুতে জাতির বিরাট ক্ষতি হয়েছে। বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেন কামাল আহমেদ মজুমদার এমিপ, কাজী শহিদ ইসলাম পাপুল এমপি ও মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক মহাসচিব সফিকুল বাহার মজুমদার টিপু। সৈয়দ আশরাফের মৃত্যুতে গণমাধ্যমে পাঠানো এক শোকবার্তায় সাবেক প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি বলেছেন, সৈয়দ আশরাফের মৃত্যুতে রাজনৈতিক অঙ্গনে যে শূন্যতার সৃষ্টি হল- তা কোনোভাবেই পূরণ হওয়ার নয়।