বিজ্ঞানীরা মানবত্বকের কোষগুলোর বয়স একলাফে তিন যুগ কমিয়ে আনার ক্ষেত্রে এক পদ্ধতির বিকাশ ঘটিয়েছেন তারা। ৫৩ বছর বয়সী মানুষের ত্বকে যৌবন ফিরিয়েছেন বিজ্ঞানীরা! ৫০ পেরোনো সেই ত্বক এখন দেখলে মনে হবে যেন সবে তা ২৩-এ পা রেখেছে।ত্বকের কোষগুলোর কার্যক্রম অটুট রেখে বয়সের ঘড়িটাকে অতীতে ফিরিয়ে নেওয়ার উপায় নিয়ে এর আগেও গবেষণা চালিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। তবে এবারের নয়া উপায়টি আগের চেয়ে অনেক বেশি বয়স কমিয়ে আনতে দারুণ কার্যকর বলে প্রমাণ মিলেছে।
গবেষকরা বলছেন, তারা মূলত পুরনো বা বয়স্ক কোষগুলোর ক্রমশ বন্ধ হয়ে আসা স্বাভাবিক ক্রিয়াকলাপ আংশিকভাবে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে নিতে সক্ষম হয়েছেন। সেই সঙ্গে মানুষের জৈবিক বয়সটারও নবায়ন করেছেন।
এ গবেষণার তথ্য মতে, ত্বকের ক্ষতের অনুরূপ তৈরি করা হয়েছে। সেই ক্ষতে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়ে দেখা গেছে, এতে আংশিকভাবে পুনর্জীবন ফিরে পাওয়া কোষের আচরণ অনেকটা তারুণ্যদীপ্ত কোষগুলোর মতোই।
গবেষণার প্রাথমিক অবস্থায় বিশেষজ্ঞরা আশাবাদী ছিলেন যে, এই আবিষ্কার শেষ অবধি আলঝেইমার্স কিংবা চোখে ছানি পড়ার মতো বয়স-সংশ্লিষ্ট রোগের চিকিৎসাপদ্ধতি গড়ে দিতে পারে।
এই এপিজেনেটিক গবেষণার দলনেতা প্রফেসর উল্ফ রাইখ এ আবিষ্কারের 'খুবই তাৎপর্যপূর্ণ ব্যবহার' রয়েছে বলে মন্তব্য করেন। তবে সম্প্রতি তিনি নেতৃত্বের দায়িত্ব নিয়ে আলটস ল্যাবস ক্যামব্রিজ নামের এক গবেষণা প্রতিষ্ঠানে চলে গেছেন। তিনি জানান, শেষ পর্যন্ত আমরা হয়তো এমন জিন চিহ্নিত করতে পারবো যা কিনা পুনর্গঠন ছাড়াই পুনর্যৌবন লাভ করতে পারে। পাশাপাশি বয়সের ছাপ হ্রাসের জন্যও তাদের নিয়ে কাজ করা যাবে।
'এ গবেষণার অগ্রগতি গুরুত্বপূর্ণ সব আবিষ্কারের আশাব্যঞ্জক প্রতিশ্রুতি দেয়, যেগুলো থেরাপির জগতে নয়াদিগন্তের উন্মোচন ঘটাতে পারে', যোগ করেন প্রফেসর রাইখ।
ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণাকেন্দ্র বাবরাহাম ইনস্টিটিউটে প্রফেসর রাইখের গবেষণাগারে পোস্টডক্টোরাল গবেষক হিসেবে কর্মরত ড. দিলজিৎ গিল। পিএইচডি শিক্ষার্থী হিসেবে এ গবেষণায় কাজ করছেন তিনি।
তিনি বলেন, 'কোষের পুনর্গঠন বিষয়ে আমাদের জানার গণ্ডিকে বহুদূর এগিয়ে নেবে নতুন এই গবেষণালব্ধ জ্ঞান। আবার রোগ-সংশ্লিষ্ট জিনে বয়স নির্ধারনী সূচকের বিপরীত আচরণও দেখে গেছে, যা কিনা এই গবেষণাক্ষেত্রেকে ভবিষ্যতে এগিয়ে নিতে আশার সঞ্চার করে। '
বয়সের সঙ্গে মানবদেহের কোষের কর্মক্ষমতা কমে আসতে থাকে এবং ডিএনএ ব্লপ্রিন্টে বয়সের ছাপ যেন ক্রমশ পূঞ্জীভূত হয়। জীববিজ্ঞানের যে অংশটি যৌবন ধরে রাখা বা পুনর্যৌবন লাভের উপায় নিয়ে মাথা ঘামায়, পুরনো কোষসহ ক্ষতিগ্রস্ত কোষের সারাই বা প্রতিস্থাপনই তাদের লক্ষ্য বিবেচিত হয়। 'রিজেনেরেটিভ বায়োলজি'র সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অস্ত্রগুলোর একটি হলো- 'ইনডিউসড' স্টেম সেল (প্ররোচক সস্য কোষ) তৈরিতে সক্ষম হয়ে ওঠা। এ পদ্ধতি মূলত কোষগুলোর সুনির্দিষ্ট কার্যক্রম মুছে দেয়। তারপর তাদের অন্য যেকোনো কোষ হয়ে ওঠার পর্যাপ্ত রসদ সরবরাহ করা হয়। নয়া গবেষণায় কোষের নবযৌবন ফিরিয়ে আনার পদ্ধতিটা শস্য কোষ সৃষ্টিতে বিজ্ঞানীদের ব্যবহৃত নোবেলজয়ী কৌশলের ওপর ভিত্তি করেই বিকশিত হয়েছে। গোটা প্রক্রিয়ার মাঝে পুনর্গঠন রুখে দিয়ে কোষের সমস্ত পরিচয় অর্থাৎ তার সুনির্দিষ্ট নিয়মিত কার্যক্রম সম্পূর্ণরূপে মুছে ফেলার সমস্যা উতরানো গেছে নয়া পদ্ধতির মাধ্যমে। এতে করে বিজ্ঞানীরা কোষকে তার বিশেষায়িত কার্যক্রম পুনরুদ্ধারে সক্ষম রেখেই পুনর্গঠন ও জৈবিকভাবে আরো কমবয়সী করে তোলার মাঝে এক অনবদ্য ভারসাম্য আনতে সক্ষম হয়েছেন।
গবেষকরা বলেন, এই সম্ভাবনাময় পদ্ধতি কেবল কোষগুলোকে কমবয়সীই করে তোলে না, তাদের কার্যক্রমও যৌবনোদীপ্ত কোষের মতোই হয়ে থাকে।