সাইবারকীল নামের একটি সাইবার সিকিউরিটি ফার্ম একটি মাঝারি সাইজের শিপিং কোম্পানির ই মেল চালাচালি তদন্ত করে দেখছিল। তদন্তে তারা একটি বিরাট জালিয়াতি উদঘাটন করলো।
কেউ একজন এই কোম্পানির কম্পিউটার সিস্টেমে একটা ভাইরাস ঢুকিয়ে দিয়েছে। ফলে কোম্পানির ফাইন্যান্স ডিপার্টমেন্টের যে কোন ইমেল তারা মনিটর করতে পারে। এই শিপিং কোম্পানি যাদের কাছ থেকে জ্বালানি কেনে, তারা যখন জ্বালানির বিল পরিশোধ করছে, সেই বিল যে একাউন্ট নাম্বারে যাওয়ার কথা, ভাইরাসটি সেটি পরিবর্তন করে অন্য একাউন্ট নম্বরে পাঠিয়ে দিচ্ছে।
এভাবে কয়েক মিলিয়ন ডলার হ্যাকাররা সরিয়ে নেয়ার পর বিষয়টি কোম্পানির নজরে আসে। কেবল মাঝারি সাইজের শিপিং কোম্পানি নয়, বিশ্বের সবচেয়ে বড় শিপিং কোম্পানিগুলোর একটি, মায়েস্কও এখন এরকম হ্যাকিং নিয়ে উদ্বিগ্ন।
তারা বুঝতে পেরেছে, হ্যাকাররা চাইলে জাহাজ চলাচলের মতো ব্যাপারেও হ্যাকিং এর মাধ্যমে বিঘ্ন ঘটাতে পারে।
একটা জাহাজ কোম্পানির কম্পিউটার সিস্টেমে হ্যাক করতে পারলে বিস্তর স্পর্শকাতর তথ্য হাতিয়ে নেয়া সম্ভব। একটা ঘটনার কথা জানাজানি হয়েছে ইতোমধ্যে। জলদস্যুরা একটা বিরাট বড় শিপিং কোম্পানির নেটওয়ার্ক হ্যাক করে জানার চেষ্টা করছিল যে জাহাজে তারা ডাকাতি করার পরিকল্পনা করছে সেটাতে কি মালামাল পরিবহন করা হচ্ছে।
একজন সাইবার সিকিউরিটি বিশেষজ্ঞ বলেন, জলদস্যুরা একটি জাহাজে উঠে বারকোড দেখেই তখন বুঝতে পারবে কোন কনটেইনারে কি মাল আছে। তখন তারা কেবল সেই মালামাল নিয়ে কেটে পড়বে। কিন্ত কেবল মালামাল ভর্তি কনটেইনার নয়, পুরো জাহাজই এখন আসলে ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ জাহাজ চলে এখন পুরোপুরি কম্পিউটার ব্যবস্থার ওপর নির্ভর করে। একটি জাহাজের কম্পিউটার ব্যবস্থা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পর সেটিকে আর চালানো যাচ্ছিল না। ইলেকট্রনিক চার্ট ডিসপ্লের মতো স্পর্শকাতর নেভিগেশন সিস্টেম করাপ্ট হয়ে পড়েছিল।
এমন আশংকা বাড়ছে যে হ্যাকাররা কম্পিউটার সিস্টেমে ভাইরাস ঢুকিয়ে দিয়ে পুরো জাহাজের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিতে পারে। এমনকি হ্যাকাররা নেভিগেশন সিস্টেমের নিয়ন্ত্রণ দখল করে একটি জাহাজ যেখানে আছে, সেখান থেকে অনেক দূরবর্তী কোন স্থানে এটি অবস্থান করছে বলে দেখাতে পারে।
বিশ্বে প্রায় ৫১ হাজার বাণিজ্যিক জাহাজ আছে, যেগুলো বিশ্ব বাণিজ্যের ৯০ শতাংশ পরিবহন করে। কাজেই হ্যাকাররা যে এই জাহাজ চলাচল খাতকে টার্গেট করেছে তাতে অবাক হওয়ার কিছু নেই।