সকাল ঠিক নয়টা ৪০ মিনিট। আর ২০ মিনিট পরেই শুরু হবে এসএসসি পরীক্ষা। ইতিমধ্যে হলে ঢুকে গেছে অধিকাংশ পরীক্ষার্থী। ভুল কেন্দ্রের সামনে দাঁড়িয়ে হতবিহ্বল একজন ছাত্রী। তার আসন এই কেন্দ্রে নয়। বিষয়টি শুনে হাউমাউ করে কাঁদতে থাকে এই পরীক্ষার্থিনী।
বিষয়টি নজরে আসে কেন্দ্রটি যে প্রতিষ্ঠানে অবস্থিত সেখানকার প্রধান শিক্ষিকার। তিনি ছাত্রীটির প্রবেশপত্র দেখে সঠিক কেন্দ্রের নাম জানান এবং মেয়েটির সহায়তার জন্য শরণাপন্ন হন কেন্দ্রের সামনে থাকা একজন পুলিশ কর্মকর্তার। নিজের মোটরসাইকেলে করে ওই পুলিশ কর্মকর্তা কান্নারত ছাত্রীটিকে নিয়ে যান তার সঠিক কেন্দ্রে। ফলে পরীক্ষা দেয়ার সুযোগ পায় সে।
আজ বৃহস্পতিবার এসএসসি পরীক্ষার প্রথম দিন ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর থানার অন্নদা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে এ ঘটনা ঘটে। আজ ছিল বাংলা প্রথম পত্রের পরীক্ষা।
হতবিহ্বল মেয়েটিকে কয়েক কিলোমিটার দূরে অবস্থিত নিয়াজ মোহাম্মদ উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে পৌঁছে দিয়ে প্রশংসা কুড়ানো পুলিশ কর্মকর্তার নাম মো. শরিফুল ইসলাম। তিনি পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের এটি এসআই পদে কর্মরত।
মেহেদী হাসান শাওন নামের একজন কলেজ শিক্ষার্থীর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করা এমন একটি ছবি ভাইরাল হয়েছে। পুলিশ সদস্যের এমন কাজের প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়েছে মানুষ। সবাই সাধুবাদ জানিয়েছেন ওই পুলিশ সদস্যকে।
মেহেদী হাসান শাওনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘আমার এক কাজিনসহ অন্নদা স্কুলের সামনে দিয়ে যাচ্ছিলাম। দেখলাম একটি মেয়ে হাতে কাগজপত্র নিয়ে ছোটাছুটি করছে। পরীক্ষা শুরু হতে আর বেশি সময় বাকি নেই। পরে স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা ফরিদা নাজনীনের বিষয়টি নজরে আসে। তখন তিনি প্রবেশপত্রে দেখেন মেয়েটির পরীক্ষা নিয়াজ মোহাম্মদ উচ্চ বিদ্যালয়।’
‘খবরটা শুনে মেয়েটি কান্না শুরু করলে ম্যাডামসহ আমরা সবাই সেখানে দায়িত্ব পালনকারী একজন পুলিশ সদস্যকে অনুরোধ করি মেয়েটিকে ওর কেন্দ্রে পৌঁছে দিতে। পরে ওই পুলিশ সদস্য তাকে কেন্দ্রে নিয়ে যান।’
কেন আপনি ছবি তুলে রাখলেন- জানতে চাইলে শাওন বলেন, ‘আমি ছবিটা তোলার সময় চিন্তা করেছি যদি এটা দেখে অন্যরাও ভালো কাজে উৎসাহিত হয়।’
শাওন ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি কলেজে ম্যানেজমেন্ট বিভাগে অনার্স দ্বিতীয় বর্ষে পড়ছে। তিনি সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের নিয়ে কাজ করা ‘শতকুঁড়ি ফাউন্ডেশন’ নামের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সহসভাপতি। স্বেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচি পালনকারী সংগঠন ‘বিং টুগেদার’-এর সঙ্গেও জড়িত আছেন শাওন।
পুলিশ কর্মকর্তা শরিফুল ইসলাম ব্রাহ্মণবাড়িয়া পুলিশের ট্রাফিক বিভাগে কর্মরত। তার গ্রামের বাড়ি খুলনার তেরখাদা উপজেলায়। ২০০০ সালে তিনি কনস্টেবল পদে ট্রাফিক বিভাগে যোগ দেন।
আজকের ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে শরিফুল ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘আমি অন্নদা স্কুলের সামনে যানজট নিরসনের দায়িত্বে ছিলাম। হঠাৎ স্কুলের ফরিদা ম্যাডাম আমাকে অনুরোধ করেন।’
‘ও ভুল করে এখানে চলে আসছে। অন্য অভিভাবকরাও অনুরোধ করায় দ্রুত মেয়েটিকে নিয়ে ওর কেন্দ্রে পৌঁছে দিই।’
কেন্দ্রে পৌঁছে দিয়েই দায়িত্ব শেষ হয়নি ওই পুলিশ কর্মকর্তার। তিনি বলেন, ‘প্রথমে নিয়াজ মোহাম্মদ স্কুলের লাইব্রেরিতে মেয়েটিকে নিয়ে গিয়ে সমস্যার কথা বলি। পরে অন্য শিক্ষকের মাধ্যমে মেয়েটিকে পরীক্ষার রুমে নিয়ে যাই। এরপর আমি চলে আসি।’
আপনার তো যানজট নিরসনের দায়িত্ব ছিল। মেয়েটিকে না নিতেও পারতেন- এমন প্রশ্নে শরিফুল ইসলাম বলেন, ‘হ্যাঁ, আমি না করলেও পারতাম। কিন্তু চিন্তা করলাম এটা মানবিক বিষয়। মেয়েটি হয়তো পরীক্ষা দিতে পারবে না। তাই ওকে নিয়ে ছুটে যাই। পরীক্ষার হলে ওকে বসিয়ে দিয়ে স্বস্তি পেলাম। খুব ভালো লাগছে।’
ছবিটি ফেসবুকের জনপ্রিয় গ্রুপ "ডু সামথিং এক্সেপশনাল" DSE এ পোস্ট করেন এডমিন জেবিন ইসলাম। ক্যাপশনে তিনি লিখেছেন, ‘নিঃসন্দেহে এটি একটি এক্সেপশনাল কাজ। যারা পুলিশের মধ্যে ভালো গুণ খুঁজে পান না.. তাদের জন্য এই মানবসেবা অনুপ্রেরণা হোক। পুলিশের এমন সেবাকে স্যালুট জানাই।ফেসবুক যে ভালো কাজে ব্যবহৃত হয় সেটিও এমন খবরের উদাহরণ ও দৃষ্টান্ত ।’
প্রযুক্তিবিদ তানভীর হাসান জোহা লিখেছেন, ‘নিঃসন্দেহে পুলিশের প্রতি শ্রদ্ধা অনেক বেড়ে গেল। ধন্যবাদ বাংলাদেশ পুলিশ।’