বীমা কোম্পানির কার্যক্রম তদন্তে মাঠে নামবে আইডিআরএ

বীমা কোম্পানির কার্যক্রম তদন্তে মাঠে নামবে আইডিআরএ

দেশে এই প্রথমবারের মত সরকারি-বেসরকারি লাইফ ও নন-লাইফ বীমা কোম্পানির প্রধান কার্যালয় বা শাখা কার্যালয় পরিদর্শন করতে 'পরিদর্শন ও পরিবীক্ষণ ম্যানুয়াল' চূড়ান্ত করেছে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)। তারা চলতি মাসেই মাঠে নামবে বলে জানা গেছে।

নতুন তৈরি করা ম্যানুয়াল অনুসরণ করে বীমা প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যক্রম পরিদর্শন করতে এরই মধ্যে নিয়ন্ত্রক সংস্থা তাদের ৮টি পরিদর্শন দলকে নির্দেশনা দিয়েছে। সেই সাথে পরিদর্শন দলকে সহযোগিতা করার জন্য বীমা প্রতিষ্ঠানসমূহকে অনুরোধ জানানো হয়েছে। গত ৯ জানুয়ারি এক অফিস আদেশে এ নির্দেশনা জারি করেছে বীমা খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইডিআরএ। নির্দেশনা অনুযাই চলতি ফেব্রুয়ারি মাসেই পরিদর্শক দল মাঠ পর্যায়ে পুরোদমে কাজ করবে বলে  জানিছেন আইডিআরএ- এর সদস্য গকুল চাঁদ দাস।

পরিদর্শন ম্যানুয়েলে বলা হয়েছে, বীমা আইন ২০১০ এর ধারা ৪৯ এ বর্ণিত বিধান মোতাবেক কর্তৃপক্ষ সময় সময় বীমা প্রতিষ্ঠানের বা তার শাখা কার্যালয়ের বই, হিসাব এবং লেনদেনসমূহ পরিদর্শন করতে পারবে। আইনের ৪৮ ধারা মোতাবেক কোনো প্রয়োজন দেখা দিলে বীমা প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম তদন্তের স্বার্থে পরিদর্শন করতে পারবে আইডিআরএ।

গকুল চাঁদ দাস বলেন, আগে আমাদের কোন ম্যানুয়াল ছিল না যা দেখে আমাদের পরিদর্শন দল কাজ করবে। আমরা এবার একটি ম্যানুয়াল তৈরি করেছি যা দেখে পরিদর্শন দল মাঠ পর্যায়ে কাজ করবে।

তিনি বলেন, এরই মধ্যে পরিদর্শন দল একটি কোম্পানির কার্যক্রম পরিদর্শন করেছে। তবে পরিদর্শন দলটি এখন পর্যন্ত তাদের রিপোর্ট জমা দেয়নি। চলতি মাসেই পুরোদমে আমাদের কার্যক্রম পরিচালনা করার পরিকল্পনা আছে।

তিনি এও বলেন, প্রথম কোনোকিছু করতে গেলে একটু আদটু সমস্যা থাকে। আমরা যে ম্যানুয়াল তৈরি করেছি আশা করছি সবার জন্য ভালো হবে।

পরিদর্শনকালীন বীমা প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রক হিসেবে কোম্পানি আইন-১৯৯৪-এর বিধান মোতাবেক আরজেএসসি'তে বার্ষিক রিটার্ন দাখিল, আয়কর অধ্যাদেশ-১৯৮৪-এর বিধান মোতাবেক উৎসস্থলে কর কর্তন এবং প্রতিষ্ঠানের বার্ষিক আয়কর প্রদান, মূল্য সংযোজন কর ১৯৯১-এর বিধান মোতাবেক উৎসস্থলে মূসক কর্তন এবং বীমা সেবার ওপর প্রদেয় মূসক জমা এবং বার্ষিক মূসক রিটার্ন, স্ট্যাম্প আইন ১৮৯৯ মোতাবেক বীমা দলিলে বীমা স্ট্যাম্প ব্যবহার এবং সময়ে সময়ে সরকার বা কর্তৃপক্ষ কর্তৃক প্রদত্ত লেভি প্রদান সম্পর্কে পর্যবেক্ষণ ও পরিবীক্ষণ করার এখতিয়ার রয়েছে।

এ ছাড়াও বীমা আইনের বিধান মোতাবেক বীমা প্রতিষ্ঠানের ব্যবসা পরিচালনা; ব্যবসা সংগ্রহে ব্যয়ের শতকরা হার; ব্যবস্থাপনা ব্যয়ের হার; লাইফ ইন্স্যুরেন্সের এজেন্ট এবং এমপ্লয়ার অব এজেন্ট নিয়োগের অনুপাত; এজেন্টয়ের বাস্তবতা যাচাই; বিনিয়োগ হার; বিনিয়োগ আয়ের হার; বীমা দাবি পরিশোধের সক্ষমতা; পুনর্বীমার সাথে ঝুঁকির অংশীদারিত্ব; প্রিমিয়াম ব্যতীত ঝুঁকি গ্রহণ; এজেন্ট কর্তৃক বীমা গ্রাহকের কাছ থেকে নগদ প্রিমিয়াম সংগ্রহ করার পরও যথাসময়ে বীমা প্রতিষ্ঠানের হিসাবে জমা প্রদান না করা; ব্যাংকিং চ্যানেলের বাইরে কমিশন প্রদান; লাইফ ইন্স্যুরেন্সে এজেন্টের মাধ্যমে এক প্রতিষ্ঠানের পলিসি অন্য প্রতিষ্ঠানে স্থানান্তর এবং পলিসি তামাদির কারণ উদঘাটন ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ।

পরিদর্শন ম্যানুয়েল অনুসারে, বীমা আইন ২০১০-এর ৪৯ ধারার ক্ষমতাবলে কর্তৃপক্ষ একজন সুপারভাইজার কর্মকর্তার তত্ত্বাবধানে একজন টিম লিডারের নেতৃত্বে প্রয়োজনীয় সংখ্যক কর্মকর্তার সমন্বয়ে পরিদর্শন দল গঠন করবে। প্রয়োজনে স্টেকহোল্ডারদের সাথেও আলাপ আলোচনা করতে পারবে। পরিদর্শন দল তাদের প্রদত্ত পরিকল্পনা মোতাবেক কাজ শুরু করবে যাতে কর্তৃপক্ষ কর্তৃক নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পরিদর্শন কাজ সম্পন্ন করে সুপারভাইজার কর্মকর্তার কাছে প্রতিবেদন দাখিল করতে পারে।

পরিদর্শন প্রতিবেদনের ভিত্তিতে পরিদর্শন ও পরিবীক্ষণ শাখা কর্তৃপক্ষের অনুমোদনক্রমে আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্য অনিয়ম ও আইন লঙ্ঘনের দায়ে কারণ দর্শানোর নোটিস প্রদানসহ কর্তৃপক্ষের উপস্থিতিতে শুনানির আয়োজন করবে পরিদর্শন ও পরিবীক্ষণ শাখা। শুনানির পর কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত কারণসহ বীমা প্রতিষ্ঠানসমূহকে জানিয়ে দেবে। বীমা প্রতিষ্ঠান সংক্ষুব্ধ হলে বীমা আইনের বিধান মোতাবেক রিভিউয়ের আবেদন করতে পারবে। রিভিউ আবেদনের প্রেক্ষিতে কর্তৃপক্ষের উপস্থিতিতে রিভিউ শুনানি আয়োজন করবে। রিভিউ শুনানি সম্পন্নের পর কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত বীমা প্রতিষ্ঠানকে জানিয়ে দেবে।

 

উল্লেখ্য, দেশের বীমা কোম্পানিগুলোর অনিয়ম দূর করে এ খাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে সর্বশেষ ২০১৪ সালের ১ সেপ্টেম্বর পরিদর্শক দল গঠন করে আইডিআরএ। সে সময় ৪ সদস্যবিশিষ্ট দু'টি দল গঠন করা হয়। এর আগে ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ সালে দু'সদস্যবিশিষ্ট ৫টি টিম গঠন করেছিল আইডিআরএ। আইডিআরএ গঠনের পর ২০১১ সালে প্রথম পরিদর্শক দল গঠন করে সংস্থাটি। সে সময়ে ৬টি পরিদর্শক দল গঠন করা হয়।

 

বীমা খাতের সংশিষ্টরা মনে করছেন, আগে কোম্পানিগুলোকে পর্যবেক্ষণ করার কোনো গাইড লাইন ছিল না। এবার নতুন এই গাইড লাইন বা ম্যানুয়াল এ খাতে বিরাজমান অনিয়মকে দূর করতে সহায়ক হবে। তবে ম্যানুয়ালের প্রয়োগ যথাযথভাবে হবে। অন্যথায় কাজের কাজ হবে না বলেও তারা সংশয় প্রকাশ করেন।