দুই উরুতে সেফটিপিন মারা। মাথায় লম্বা চুল, মুখে লম্বা দাড়ি। সারা শরীরে শুধুমাত্র এক টুকরো কাপড়। বয়সের ভারে ঠিকমতো হাঁটতেও পারে না। কুঁজো হয়ে হাঁটেন। কথা একেবারেই বলেন না। টাকা দিলেও সবার টাকা নেন না। যাকে পছন্দ হয় শুধু তার টাকা নেন। কোথা থেকে আসেন। আবার কোথায় চলে যান। কেউ জানেন না। বলতেও পারেন না। এমন রহস্য পুরুষ তিনি। সবার কাছে তিনি সেফটিপিন বাবা হিসেবে পরিচিত।
গত বৃহস্পতিবার ঘড়ির কাঁটায় রাত আটটা। কাওরান বাজারের রাস্তার ধারে মানুষের জটলা। সেফটিপিন বাবাকে ঘিরে এখানে ভিড়। বাবা মাটিতে বসে আছেন। উদোম শরীর। দেড় হাতের মতো একটি কালো কাপড় কোমরে জড়ানো। দুই উরুতে চারটি চারটি আটটি সেপটিপিন লাগানো। সেফটিপিন মারা জায়গা লাল হয়ে গেছে। আবার কোথাও কালো হয়ে গেছে। উরুতে কেন সেফটিপিন মেরেছেন? কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি তার কাছ থেকে। বার বার প্রশ্ন করায় বিরক্ত হয়ে একটু দূরে সরে গিয়ে বসেন। লোকজন তার পিছন পিছন গিয়ে আবার তাকে ঘিরে ধরে।
কাঁচা-মাল ব্যবসায়ী মজিদ জানান, ১৬ বছর ধরে সেফটিপিন বাবাকে দেখছেন। দুই উরুর চামড়া আর মাংসের ভিতর দিয়ে বছরের পর বছর ধরে একইভাবে সেফটিপিন মারা আছে। কোথা থেকে আসেন আবার কোথায় চলে যান কেউ বলতে পারেন না। তিন মাস থেকে ছয় মাস পর পর একবার আসেন কাওরান বাজারে। রাতের বেলা আসেন আবার রাতেই চলে যান।
মজিদ বলেন, ‘এতদিন ধইরা দেখতেছি কোনোদিন তারে কথা কইতে দেখি নাই। আবার খাইতেও দেখি নাই। অনেকে অনেক রকম খাবার দেয়। কিন্তু খায় না। টাকা দিলেও সবার টাকা নেয় না। যাকে পছন্দ হয় শুধু তার টাকা নেয়। এইদিকে রিপন নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করেন সেফটিপিন বাবা তার টাকা নেয়ায়। রিপন বলেন, এত মানুষের মধ্যে বাবা আমার টাকা নিয়েছে। তিনি কামেল মানুষ। তার কোনো লোভ-লালসা নাই। আমার টাকাও প্রথমে নিতে চায়নি। আমি এক বোতল পানি এনে দিলে বাবা দোয়া পড়ে পানিতে ফুঁ দিয়ে দেন। পরে অনেক জোরাজুরির পর একশ’ টাকা নেন। তিনি সবাইকে পানি পড়ে দেন না। যখন তার ইচ্ছে হয় শুধু তখন পানি পড়ে দেন।
অন্যদিকে রফিক জানান, সেফটিপিন বাবা তার উপর চটেছেন। রফিক বলেন, তার বাড়ি কোথায় জানতে চাইলে তিনি প্রথমে উত্তর দেন নাই। পরে আবার জানতে চাইলে সেফটিপিন বাবা তার কনুই দিয়ে আমাকে আঘাত করেন। এরপর আমি কোনো প্রশ্ন না করে তার কাছে মাফ চেয়ে চলে এসেছি।