দুই কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ এনে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে কারাগারে পাঠানোর ঘটনায় আওয়ামী লীগ অথবা বর্তমান সরকার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে মনে করেন কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর আবদুল কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তম। এ কারণে বিএনপিও নড়াচড়া করার একটা পথ পেয়েছে বলে তার ধারণা।
খালেদা জিয়ার সাজা-পরবর্তী রাজনীতি নিয়ে দেশের একটি সুনাম ধন্য দৈনিক পত্রিকার সঙ্গে আলাপকালে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম শীর্ষ নেতা কাদের সিদ্দিকী বলেছেন, ছোট চোরও চোর; বড় চোরও চোর। কিন্তু বর্তমানে নানাভাবে হাজার হাজার লাখ লাখ কোটি কোটি টাকার তসরুপ হচ্ছে। সেখানে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে ২ কোটি টাকার মামলায় সাজা দেওয়ার বিষয়টিকে মানুষ খুব একটা গুরুত্ব দিচ্ছে না।
বর্ষীয়ান এই রাজনীতিকের ভাষায়, গত ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া এতিমখানা ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার রায় ঘোষণার পর যখন খালেদা জিয়াকে কারাগারে পাঠানো হয়েছিল, তখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বরিশালে নির্বাচনী জনসভায় ভাষণ দিচ্ছিলেন। খালেদা জিয়ার শাস্তি সম্পর্কে ওই জনসভায় প্রধানমন্ত্রী যে মন্তব্য করেছিলেন, সাধারণ মানুষ তা ভালোভাবে গ্রহণ করেনি। ওই মন্তব্যের কারণে আওয়ামী লীগের বেশি ক্ষতি হয়েছে।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে সশস্ত্র প্রতিরোধ গড়ে তোলা বঙ্গবীর আবদুল কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তম বলেছেন, খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে রুজু করা মামলাটি একটি সাধারণ দুর্নীতির মামলা। এই মামলাটিকে ফৌজদারি চরিত্রে থাকতে দিলে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে সাধুবাদ পাওয়া যেত। কিন্তু রাজনৈতিক চরিত্র দেওয়ায় বিচার ব্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
কাদের সিদ্দিকীর প্রশ্ন- যে বিচারক খালেদা জিয়াকে জেলে পাঠিয়েছেন, আদেশের সময় তিনি কেন ডিভিশন দেননি? এটা নিয়ে তো কোনো প্রশ্নই হওয়ার কথা ছিল না। আর নাজিমুদ্দিন রোডের কারাগারে কেন খালেদা জিয়াকে রাখা হলো? সাব-জেল ঘোষণা করে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীকে তার বাড়িতেই রাখা যেত। এ সবকিছুই সাধারণ মানুষের কথা, তাদের ভাবনা।
কাদের সিদ্দিকীর মূল্যায়ন- খালেদা জিয়াকে একটি সাধারণ দুর্নীতির মামলায় দণ্ড দেওয়ায় আইন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিচারালয় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর কারণ একটাই। বিচারের আগে যদি এ নিয়ে তেমন কোনো আলোচনা না হতো, তাহলে সাধারণ মানুষের মধ্যে বহুল আলোচিত মামলাটির বিচার নিয়ে কোনো ধরনের সন্দেহ দেখা দিত না। কেউ কোনো প্রশ্নও তুলত না।
কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বলেছেন, বিগত দিনের কিছু কিছু কর্মকাণ্ডের কারণে মানুষ অনেকটাই বিএনপি থেকে সরে গিয়েছিল। এ দেশের মানুষ আর হাওয়া ভবন দেখতে চায় না বলেই অনেক পেছনে পড়ে ছিল বিতর্কিত নেতা তারেক রহমান। কিন্তু বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে দণ্ড দিয়ে নির্জন কারাগারে পাঠানোর পর তাদের প্রতি সাধারণ মানুষের সহানুভূতি অনেকটাই বেড়ে গেছে।
কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তমের সোজা-সাপটা কথা- মানুষ এক বেলা না খেয়ে থাকলে যতটা কষ্ট বোধ করে, ভোট দিতে না পারলে তার চাইতে বেশি ব্যথিত হয়। তারা গণতন্ত্রের কিছু বুঝুক আর না বুঝুক, ভোট বোঝে। ১৯৪৭ সালে তারা ভোটের মাধ্যমে সিলেটকে পূর্ব পাকিস্তানে এনেছিল। ১৯৫৪ সালে ভোট দিয়ে পাকিস্তানিদের স্তম্ভিত করে দিয়েছিল। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে ভোট দিয়েই তারা স্বাধীনতার সূচনা করেছিল। পরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আমরা অস্ত্র হাতে রক্ত ঢেলে বাংলাদেশের স্বাধীনতা এনেছি।
চলমান রাজনীতিতে বিরাজমান সংকট সমাধানের পথও বাতলে দিয়েছেন আবদুল কাদের সিদ্দিকী। তিনি বলেছেন, অবাধ-সুষ্ঠু-নিরপেক্ষ অর্থাৎ সরকারি প্রভাবমুক্ত সাধারণ নির্বাচনই সমস্যা থেকে উত্তরণের প্রধান উপাদান হতে পারে। এর কোনো বিকল্প নেই। প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বহু ঝড়-তুফান পাড়ি দিয়ে আজকের অবস্থানে এসেছেন। সামনে একটি ভালো সাধারণ নির্বাচন করাতে না পারলে তিনি অবশ্যই প্রশ্নবিদ্ধ হবেন।
সাবেক জাতীয় সংসদ সদস্য কাদের সিদ্দিকী আরও বলেছেন, বর্তমানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারি খরচে নির্বাচনী প্রচার কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। ভবিষ্যতে যদি দেশে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা পায়, বিচার বিভাগ সাহসী হয়, আইনের দ্বারা বিচার হয়, সেদিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা খুব অসুবিধায় পড়বেন। কাদের সিদ্দিকী স্মরণ করিয়ে দেন, দেশের অনেক মানুষ আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট অথবা দল অথবা এই দুই ধারায় বিভক্ত হয়ে আছে। তবে তার অর্থ এই নয় যে, দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ তাদের সঙ্গে রয়েছে। কিংবা ওই দুই ধারায় বিভক্ত হয়ে পড়েছে। আসল বাস্তবতা হলো, নিষ্ফ্ক্রিয় থাকলেও দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ এখনও অন্ধকারেই আছে। জাতিও বিভক্ত হয়নি।
সূত্র: সমকাল