ভিশন-২০৪১-এর আলোকে নির্বাচনী ইশতেহার তৈরির কাজ প্রায় চূড়ান্ত করেছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। আগামী ইশতেহারে জাতিকে টেকসই উন্নয়ন, দারিদ্র্য বিমোচন, দুর্নীতি-সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখাবে দলটি। সেই সঙ্গে থাকবে ২০৪১ সালের মধ্যে দেশকে উন্নত দেশে পরিণত করার অঙ্গীকার। অর্জন ও ব্যর্থতার পাশাপাশি শুধরে নেওয়ার লক্ষ্যে তুলে ধরা হবে ভুলগুলোও। শুধু স্বপ্ন নয়, বাস্তবায়নের রূপরেখাও থাকবে নির্বাচনী ইশতেহারে। কিছুদিনের মধ্যেই ঠিক করা হবে মূল স্লোগানও। আওয়ামী লীগের উচ্চপর্যায়ের একাধিক সূত্র এই তথ্য নিশ্চিত করেছে। দলীয় সূত্রমতে, দলের সভানেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে ইশতেহার তৈরির দায়িত্বে রয়েছেন চারজন নেতা। তারা হলেন— দলের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য ও অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম, অর্থ উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান এবং দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক খাদ্যমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক। তারা দলের বিগত নির্বাচনী ইশতেহারে সরকারের অর্জন ও ব্যর্থতা এবং বর্তমান ও ভবিষ্যতের বাংলাদেশের সময়োপযোগী চাহিদার ওপর বেশি প্রাধান্য দিয়ে নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিগুলো তৈরি করছেন। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রাকে গুরুত্ব দিয়ে ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত, সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে সরকারের করণীয় সম্পর্কে বিস্তারিত দিকনির্দেশনা থাকবে ইশতেহারে।
সূত্র জানায়, ইশতেহার তৈরির কাজ চলছিল দলের ২০তম সম্মেলনের আগে থেকেই। ২০১৬ সালের ২২ ও ২৩ অক্টোবর অনুষ্ঠিত দলের জাতীয় সম্মেলনের ঘোষণাপত্রের আলোকেই প্রস্তুত হচ্ছে দলটির নির্বাচনী ইশতেহার। নেতাদের দাবি, ‘দিন বদলের সনদ’ স্লোগানে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের নির্বাচনী ইশতেহারে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ জাতিকে স্বপ্ন দেখিয়েছিল ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার। দলের ১৯তম সম্মেলনের ঘোষণাপত্র ভিশন-২০২১ আলোকে ওই প্রতিশ্রুতিতে ছিল স্বাধীনতার সূবর্ণজয়ন্তীর মধ্যেই দেশকে একটি মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করা। এবারও ভিশন-২০৪১-এর আলোকেই চূড়ান্ত করা হচ্ছে একাদশ নির্বাচনী ইশতেহার। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল হক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ঘোষণাপত্রের আলোকেই নির্বাচনী ইশতেহার প্রস্তুত হচ্ছে। টেকসই উন্নয়নের জন্য পঞ্চম বার্ষিকী পরিকল্পনা, বিভিন্ন মেগা পরিকল্পনা বাস্তবায়ন, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন, আবাসন প্রকল্পগুলো অগ্রাধিকার পাবে। আর আগের অসমাপ্ত কাজগুলোকেও প্রাধান্য দেওয়া হবে। তিনি জানান, দুর্নীতি, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্সের ঘোষণাও থাকবে আওয়ামী লীগের ইশতেহারে। দেশের উন্নয়ন ও সুশাসনের জন্য ১০ অগ্রাধিকারের পাশাপাশি আর্থ-সামাজিক ২১টি খাতে চলমান অগ্রযাত্রার চিত্র তুলে ধরা হবে। পাশাপাশি দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ভবিষ্যৎ করণীয়ও স্পষ্ট করা হবে। দলীয় নেতারা জানান, এবারের ইশতেহারে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার পাবে উন্নয়ন ও সুশাসন। এর মধ্যে রয়েছে— দারিদ্র্য বিমোচন, স্বাস্থ্য ও শিক্ষা, সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ-সাম্প্রদায়িকতামুক্ত বাংলাদেশ গড়া, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি, তথ্যপ্রযুক্তির সম্প্রসারণ ও আইসিটি, মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন, ব্লু ইকোনমির উন্নয়ন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা, গণতন্ত্র ও কার্যকর সংসদ এবং গণমুখী দক্ষ জনপ্রশাসন। কৃষি ও শিল্পাঞ্চল গড়ে তোলা, ডিজিটাল বাংলাদেশ, বেকারত্ব দূরীকরণ, প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধি, দক্ষ ও স্বল্পদক্ষ শ্রমশক্তি বিদেশ পাঠানোর সুযোগ সৃষ্টি করার ওপর অগ্রাধিকার দেওয়া হবে আগামী ইশতেহারে। এ ব্যাপারে ইশতেহার তৈরির দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা ও দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. আবদুর রাজ্জাক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ইশতেহারে সরকারের বিগত দিনের অগ্রাধিকার খাতের কাজের অগ্রগতি এবং ভবিষ্যৎ করণীয় সম্পর্কে সুস্পষ্ট উল্লেখ থাকবে। একটি নতুন পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা থাকবে। ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার কথা পুনরুল্লেখ থাকবে। ইতিমধ্যে ৫৬টি (সরকারি খাতে ৪২টি এবং বেসরকারি খাতে ১৪টি) অর্থনৈতিক জোনের অনুমোদন দেওয়াসহ বাস্তবায়িত সাতটির অর্থনৈতিক অঞ্চলের কথা বলা হবে। ১৫ বছরের মধ্যে বাকিগুলো গড়ে তুলে অতিরিক্ত ৪০ বিলিয়ন ডলার আয় বৃদ্ধি ও এক কোটি মানুষের কর্মসংস্থানের আশাবাদ থাকবে ইশতেহারে। তিনি বলেন, ভিশন-২০৪১-এর ঘোষণাপত্রের আলোকেই ইশতেহার তৈরি হচ্ছে। আওয়ামী লীগের লক্ষ্য ২০৪১ সালের মধ্যে দেশকে শান্তিপূর্ণ সমৃদ্ধ সুখী ও উন্নত জনপদে পরিণত করা। আর এ লক্ষ্য পূরণের ধাপগুলো থাকবে এবারের ইশতেহারে।