চারটি আঙুলে একটু উঁচুতে মুঠো করে ধরা বিমান দুর্ঘটনায় নিহত এক তরুণীর তিনটি আঙুল। নিহত তরুণী হাতে সদ্য দেয়া মেহেদীর রঙ। হাতের দুই আঙুলে পাথর বসানো দুটি আংটি ঝলমল করছে। আগুনে ঝলসে কুঁচকে গেছে হাতের চামড়া।
গতকাল সোমবার (১২ মার্চ) দুপুরে নেপালের কাঠমান্ডুর ত্রিভুবন বিমানবন্দরে বাংলাদেশের বেসরকারি বিমান সংস্থা ইউএস বাংলা বিমান দুর্ঘটনায় নিহত এক তরুণীর এমনই একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঘুরপাক খাচ্ছে। কেউ কেউ বলছেন, মাত্র এক সপ্তাহ আগেই বিয়ে করেছিলেন এই তরুণী। নেপালে যাচ্ছিলেন হানিমুনে।
শুধু এই তরুণীই নন, তার মতো অনেক হতভাগ্যে যাত্রীর মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনা বাংলাদেশও নেপালসহ বিশ্বের লাখ লাখ মানুষকে শোকাহত করেছে। এ পর্যন্ত পাইলট ও কো-পাইলটসহ অর্ধশতাধিক বিমানযাত্রী নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। তবে পুড়ে যাওয়ায় সবার মরদেহ এখনও শনাক্ত করা যায়নি। ইতোমধ্যে নিহতদের মরদেহ শনাক্ত করতে অনেকেই নেপালে গেছেন।
তবে বিমান দুর্ঘটনায় পর বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হতাহতদের ছবিতে দেখা যায়, কোনো কোনো মরদেহ বেশি পুড়ে যাওয়া তাদের চেনা যাচ্ছে না।
এ বিষয়ে মালয়েশিয়ার ইউনিভার্সিটি টেকনোলজি মারা’র ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের প্রধান অধ্যাপক মোহাম্মদ নাসিমুল ইসলাম বলেন, ‘শনাক্তকরণের বিষয়টি নির্ভর করবে লাশ কতটুকু দগ্ধ হয়েছে তার উপর। দগ্ধের পরিমাণ কম হলে শরীরের অন্যান্য মার্কের (যেমন- কাটা দাগ, তিল, টাট্টু মার্ক ইত্যাদি) মাধ্যমে শনাক্ত করা যাবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘তবে পুড়ে অঙ্গার হয়ে গেলে মৃতদেহ থেকে দাঁত, চুল ও নখসহ শরীরের বিভিন্ন অংশ থেকে ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করে তা পরীক্ষার মাধ্যমে পরিচয় শনাক্ত করা হবে।’
উল্লেখ্য, গতকাল (সোমবার) নেপালের স্থানীয় সময় দুপুর ২টা ২০ মিনিটে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের বিমানটি বিধ্বস্ত হয়। বিধ্বস্ত হওয়ার আগে বিমানটিতে আগুন ধরে যায়। নেপাল সেনাবাহিনীর একজন মুখপাত্রের বরাত দিয়ে বার্তাসংস্থা রয়টার্স জানায়, বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় ৫০ জনের নিহত হয়েছেন।
ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের মুখপাত্র প্রেম নাথ ঠাকুর বলেছেন, দুই ইঞ্জিন বিশিষ্ট টার্বোপ্রোপ বিমানটি ৬৭ আরোহী ও ৪ জন ক্রু নিয়ে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা থেকে কাঠমান্ডুর উদ্দেশে যাত্রা শুরু করেছিল। যাত্রীদের মধ্যে ৩৭ পুরুষ, ২৭ নারী ও দুই শিশু ছিল। তাদের মধ্যে ৩৩ জন নেপালের নাগরিক।