ব্যাংক খাত নিয়ে অস্বস্তিতে সরকার

ব্যাংক খাত নিয়ে অস্বস্তিতে সরকার

বাংলাদেশের বড় অংশের মধ্যে ব্যাংকের বিষয়ে নেতিবাচক ধারণা রয়েছে। মানুষের ধারণা ব্যাংক মানেই অনিয়মের আখড়া। ব্যাংক খাত নিয়ে সাধারণের মধ্যে এমন ধারা থাকায় সরকার এক ধরনের অস্বস্তির মধ্যে রয়েছে। মন্ত্রী, এপিদের নানা জবাবদিহির মধ্যে পড়তে হচ্ছে। শনিবার রাজধানীর হোটেল লা মেরিডিয়ানে অগ্রণী ব্যাংকের বার্ষিক ব্যবসায়িক সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তরা এসব কথা বলেন।

অগ্রণী ব্যাংকের ব্যাবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও মোহম্মদ শামস-উল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। বিশেষ অতিথি ছিলেন অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান, বংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভিাগের সিনিয়র সচিব মো. ইউনুসুর রহমান, অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যান ড. জায়েদ বখত। এছাড়াও বক্তব্য রাখেন আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের অতিরিক্ত সচিব ফজলুল হক, অগ্রণী ব্যাংকের পরিচালক মাহমুদা বেগম, সঙ্গীতা আহমেদ প্রমুখ।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে আর্থিক খাতের অবস্থা ভালো কি-না সে ব্যাপারে প্রশ্ন আছে উল্লেখ করে চলতি বছরের ডিসেম্বর মাসে অবসর নেয়ার ঘোষণা দেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। তিনি বলেন, আমাদের দেশে ব্যাংকিং সার্ভিস ততোটা প্রসারিত হয়নি। ব্যাংকের শাখা আরও বাড়ানো উচিত। ব্যাংকে যত বেশি লোককে জড়িত করা যাবে, ততোই আর্থিক কর্মকাÐ শক্তিশালী হবে। আর্থিক কর্মকাÐ শক্তিশালী হলে দেশের উন্নয়ন হয়।

কেওয়াইসি (গ্রাহকের পূর্ণাঙ্গ পরিচিত) ব্যাংকের ক্ষেত্রে অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে ব্যাংকারদের উদ্দেশ্যে মুহিত বলেন, কে আপনার সেবা নিচ্ছে, সেই লোকটাকে, সেই প্রতিষ্ঠানকে চিনতে চেষ্টা করেন। সেই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে একটা আত্মার সম্পর্ক সৃষ্টি করেন। কারণ সেখান থেকেই অপনি অনেক সমৃদ্ধ হবেন, ঠিক তেমনি প্রতিষ্ঠানটিও সমৃদ্ধ হতে পারে এবং এ উদ্যোক্তার সমৃদ্ধি জাতীয় সমৃদ্ধিতে ব্যপক ভ‚মিকা রাখতে সক্ষম হবে।

ব্যাংকারদের উদ্দেশ্যে তিনি আরও বলেন, যখন কোনো প্রকল্প আসে, সেটাকে ভালো করে দেখেন। সেটা মূল্যায়ন করেন যথার্থভাবে। তার কী দোষ-ত্রæটি আছে সেগুলো বের করেন। তাকে সেই দোষ-ত্রæটি মেটানোর চেষ্টা করতে বলেন।

অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, ব্যাংকিং খাত নিয়ে আমরা যথেষ্ট অস্বস্তির মধ্যে আছি। এ খাত নিয়ে অনেক জবাবদিহিতার মধ্যে পড়তে হয়। এ অবস্থা থেকে ওঠে আসতে আমাদের অনেক পরিশ্রম করতে হবে।

তিনি বলেন, আমাদের রেগুলেটরি অত্যান্ত দুর্বল। পুরস্কারের পাশাপাশি তিরস্কারের ব্যবস্থা থাকা উচিত। আপনারা (ব্যাংকার) যেভাবে পুরস্কৃত হয়েছেন, সেই হারে সেবাটা আমরা পাচ্ছি না।

বংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির বলেন, লক্ষ্য করছি ডিপোজিট রেট (আমানতের সুদ হার) বেড়ে যাচ্ছে। ডিপোজিট যাদের আছে, এটি তাদের জন্য সুখবর। কারণ ডিপোজিট রেট দীর্ঘদিন নেগেটিভ ছিল। ডিপোজিটররা এখন ভালো রেট পাচ্ছেন, তাতে আমাদের কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু ল্যান্ডিং রেটটা বৃদ্ধি পাচ্ছে, সেটা ব্যবসার জন্য ভালো না, দেশের জন্য ভালো না।

বেসরকারি ব্যাংকগুলো তথ্য ঋণ আমানত অনুপাত (এডিআর) নিয়ে তথ্য লুকাচ্ছে উল্লেখ করে গভর্নর বলেন, এডিআর ৮৩.৫ শতাংশ হওয়ার কারণে তারা বলছে ডিপোজিট অনেক বেশি ফল করছে। ডিপোজিট অনেক বেশি বাড়াতে হবে রেশিও (অনুপাত) ঠিক করার জন্য। সেটাও ঠিক নয়। কারণ ১১ হাজর কোটি টাকার মতো এডি রেশিও’র ওপরে আছে। তার মধ্যে কৃষি, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন, বেসিক এবং ফারমার্স এ চারটি ব্যাংকের প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকা।

আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভিাগের সিনিয়র সচিব মো. ইউনুসুর রহমান বলেন, সেবার দিক থেকে সরকারি ব্যাংকগুলো মারাত্মক খারাপ অবস্থায় আছে। সারাদেশ থেকে সরকারি ব্যাংকগুলো আমানত সংগ্রহ করে। সেই টাকা ঢাকা ও চট্টগ্রামে বড় বড় লোন দেয়, সেই লোন আদায় হয় না।

নতুন পে-স্কেলের কারণে সরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তাদের কাজে অলসতা এসেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, নতুন পে-স্কেলে বেতন-ভাতা বাড়ার কারণে সরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তারা তেমন কাজ করতে চাই না। লোন প্রপোজাল (প্রস্তাব) গেলে তা ফেলে রাখেন। আমি সোনালী ব্যাংকের এমডির কাছে একজনকে পাঠালাম। তিনি তাকে ডিএমডির কাছে পাঠালেন। সেই ডিএমডি তাকে এমন সব কথা বললেন, ওই গ্রাহক বাধ্য হয়ে পরে একটি বেসরকারি ব্যাংক থেকে লোন নিলেন।

অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যান ড. জায়েদ বখত বলেন, বাংলাদেশের বড় অংশের মধ্যে ব্যাংকের বিষয়ে নেতিবাচক ধারণা রয়েছে। মানুষের ধারণা ব্যাংক মানেই অনিয়মের আখড়া।

ব্যাংক খাতের প্রতি মানুষের আস্থা বাড়ানোর উপায় হিসেবে তিনি বলেন, আমাদের সবার আগে নজর দিতে হবে খেলাপি ঋণ কমানোর দিকে। ঋণ খেলাপি হয়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ আইনি দীর্ঘসূত্রিতা। উচ্চ আদালতে আর্থিক বিষয়ে আলাদা বেঞ্চ করলে সুফল পাওয়া যেতে পারে। বিষয়টির ওপর সংশ্লিষ্টদের মনোযোগ দেয়া উচিত।