মহাশূন্যের নানা রহস্যের সমাধানের পথে দেখিয়েছিলেন সদ্য প্রয়াত বিজ্ঞানী স্টিফেন হকিং। কৃষ্ণ গহ্বর থেকে শুরু করে ভিনগ্রহী, বিভিন্ন বিষয়ে যুগান্তকারী সব গবেষণা করেছেন তিনি। এমনকি শেষ সময়েও এমনই এক রহস্য উন্মোচনের ইঙ্গিত দিয়ে গেলেন তিনি। বলে গেলেন, পৃথিবীর আয়ু ফুরোলেও বেঁচে থাকবে আরও একটা মহাবিশ্ব। অস্তিত্বের সম্ভাবনাও আছে সেখানে।
হকিংয়ের সেই শেষ গবেষণাপত্রের নাম- ‘আ স্মুদ এক্সিট ফ্রম ইটার্নাল ইনফ্লেশন?’। বেলজিয়ামে ল্যুভেঁ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট ফর থিয়োরিটিক্যাল ফিজিক্সের অধ্যাপক টমাস হের্টগকে সঙ্গে নিয়ে লেখা তাঁর এই গবেষণাপত্রটির কাজ হকিং শেষ করেছিলেন গত জুলাইয়ে। কিন্তু, তার পরও সন্তুষ্ট হননি। নিজের শেষ গবেষণাপত্র নিয়ে চলেছে কাটাছেঁড়া। এমনকি তাঁর বিশ্বাসের সত্যতা বুঝতে পারার পরও গবেষণা পত্রের শিরোনামে প্রশ্ন চিহ্নও রেখে গিয়েছেন। গবেষণা পত্রটি শেষ বারের মতো সংশোধন করেছিলেন দিন পনেরো আগে। গত ৪ মার্চ, তাঁর মৃত্যুর ঠিক দশ দিন আগে।
হকিং লিখেছেন, এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের সব নক্ষত্রের জ্বালানির ফুরিয়ে গেলে, একদিন এই ব্রহ্মাণ্ড ধ্বংস হয়ে যাবে। কিন্তু, তার পরও সব শেষ হয়ে যাবে না। কারণ, এই ব্রহ্মাণ্ড শুধুই একটা নয়। এমন ব্রহ্মাণ্ড বা ইউনিভার্স আরও আছে। সেটাও খুব একটা দূরে নয়।
আজ থেকে ৩৫ বছর আগে ১৯৮৩ সালে প্রথম ‘নো বাউন্ডারি’ নামে থিয়োরি দিয়েছিলেন হকিং। বলা হয়েছিল, ১৩৭০ কোটি বছর আগে বিগ ব্যাং বা মহা বিস্ফোরণের পর সব কিছু অন্ধকার হয়ে গিয়েছিল। তার পরের তিন লক্ষ সত্তর হাজার বছর ধরে ওই রকম একটা অদ্ভুত অবস্থা ছিল। আলোর কণা ফোটনও সেই সময় বেরিয়ে আসতে পারেনি। ফলে বিগ ব্যাংয়ের পর তিন লক্ষ সত্তর হাজার বছরের মধ্যে কী কী ঘটেছিল, সে সম্পর্কে এখনও কিছুই জানা যায়নি।
কিন্তু, তার পরে হঠাত্ই একটা বিন্দু থেকে বেলুনের মতো হু হু করে ফুলে ফেঁপে উঠে চার পাশে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করেছিল আমাদের এই ব্রহ্মাণ্ড। যা এখনও ফুলে ফেঁপে উঠে চার পাশে প্রসারিত হয়ে চলেছে। আর সেই প্রসারিত হওয়ার গতি আগের চেয়ে অনেকটাই বেশি। বিজ্ঞানের পরিভাষায় এটাকে বলা হয় ‘ইনফ্লেশন’। ফুলতে ফুলতে বেলুন যখন এক সময় ফেটে যায়, এই ব্রহ্মাণ্ডেরও দশা এক দিন হবে সে রকমই। সেভাবেই ধ্বংস হয়ে যাবে পৃথিবী।