ভাসানচরে রোহিঙ্গা পুনর্বাসনে বিদেশি দাতাদের সাহায্যের কোনো আশা নেই। বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে এক সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেছেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। প্রায় এক লাখ রোহিঙ্গাকে ভাসানচরে পুনর্বাসনের পরিকল্পনার কথা সরকার ঘোষণা করেছে অনেক আগেই। তবে এ বিষয়ে কোনো সুনির্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে দেয়া হয়নি। এ বিষয়ে শাহরিয়ার আলম বলেছেন, এই বিশাল কর্মযজ্ঞে বিদেশিদের সাহায্য পাওয়ার কোনো আশা নেই। তিনি বলেন, ওই চরে বাড়িঘর নির্মাণ করতে এবং বঙ্গোপসাগরের বুকে ঘূর্ণিঝড় থেকে সুরক্ষা দিতে ওই কর্দমাক্ত দ্বীপে প্রায় ২৮ কোটি ডলারের পুরোটাই বহন করছে বাংলাদেশ।
এর পরিপ্রেক্ষিতে আন্তর্জাতিক দাতাদের কাছে সহায়তা চেয়েছি। তিনি সাক্ষাৎকারে আরো বলেছেন, সম্প্রতি যেসব রোহিঙ্গা তাদের দেশে নির্যাতিত হয়ে বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নিয়েছে তাদের কাউকে তাদের নিজেদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো হবে না। উল্লেখ্য, প্রায় ৭ লাখ রোহিঙ্গা মুসলিম গত ২৫শে আগস্টের পর পালিয়ে বাংলাদেশে আসতে বাধ্য হয়েছেন। তারা আশ্রয় পেয়েছেন কক্সবাজারে গাদাগাদি করে থাকা ক্যাম্পে। যেহেতু তাদের ফেরত পাঠানো নিয়ে দুই দেশের মধ্যে সম্পাদিত চুক্তির বাস্তবায়ন বিলম্বিত হচ্ছে তাই বাংলাদেশ তাদের ভাসানচরে পুনর্বাসনের জন্য নতুন বাড়িঘর নির্মাণ করছে। নিউ ইয়র্কে বাংলাদেশের জাতিসংঘ অফিসে শাহরিয়ার আলম বলেন, প্রচুর অর্থের প্রয়োজন। তাই এক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট কোনো সময়সীমা নেই। এখন পর্যন্ত আমরা কাজ করছি আমাদের নিজস্ব অর্থায়নে। এক্ষেত্রে কতটা অর্থ সংগ্রহে সমর্থ হবে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়- সে বিষয়ে আমি খুব আশাবাদী নই।
বাংলাদেশে আগে থেকেই প্রায় ৩ লাখ রোহিঙ্গা অবস্থান করছিল। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে নতুন করে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা। এদের তাৎক্ষণিকভাবে ত্রাণ সরবরাহের জন্য জাতিসংঘের সমন্বয়কারী শাখা নতুন করে ৯৫ কোটি ১০ লাখ ডলার অনুদানের অনুরোধ পাঠিয়েছে। রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসনের জন্য যে দ্বীপ ঠিক করা হয়েছে তা মূল ভূমি থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। তিনি জানান, একটি পরিকল্পনা সম্ভাব্য দাতাদের এখানে নিয়ে আসতে পারে। তিনি মানবাধিকার সংগঠনগুলোর উদ্বেগগুলোকে ভুল বোঝাবুঝি বলে উড়িয়ে দেন। প্রসঙ্গত, মানবাধিকার সংগঠনগুলো আশঙ্কা প্রকাশ করেছে যে, দ্বীপটিতে বন্যা হওয়ার ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। আলম বলেন, অনেকে ভাসানচর নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। কিন্তু এমন উদ্বেগের কোনো কারণই নেই। কেননা আমরা একটি বাঁধ নির্মাণ করছি।
বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষরা দ্বীপটিকে, শরণার্থীদের জন্য সাময়িক বন্দোবস্ত হিসেবে দেখছে। কিন্তু দ্বীপটিতে শরণার্থীরা কি রকম স্বাধীনতা উপভোগ করতে পারবে সে বিষয়ে পরস্পরবিরোধী ইঙ্গিত দিয়েছে। আলম বলেন, বাংলাদেশ দ্বীপটিতে নির্মিতব্য ভবনগুলোর ডিজাইন অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কো-অপারেশনকে দেখিয়েছে। এ বিষয়টি এটা প্রমাণ করে যে, তারা এই প্রকল্পে তাদের সাহায্য করার ও ভূমিকা রাখার জন্য লোকজন, দেশ ও সংগঠনকে যুক্ত করছে। তিনি বলেন, আমরা এখনো কাজ শুরু করিনি। আমরা এখনো কাজ করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে নেইনি।