নগরীর মস্য আড়তগুলো এখন তরমুজের দখলে। যেখানে ট্রলারে প্রতিদিন শত শত মণ ইলিশ আসতো এখন সেখানে আসছে তরমুজ। ইলিশের মোকাম পরিণত হয়েছে তরমুজের মোকামে। পোর্টরোডের মত্স্য আড়তগুলো থেকে ইলিশের মতই তরমুজ ট্রাকে তুলে পাঠানো হচ্ছে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলসরকারি নিষেধাজ্ঞার কারণে বর্তমানে নদীতে ইলিশ শিকার বন্ধ তাই মত্স্য আড়তগুলোতে ইলিশের তেমন সরবরাহ নেই। একই সময় তরমুজ উত্পাদন হওয়ায় কৃষক ও পাইকাররা বিক্রয় কেন্দ্র হিসেবে বেছে নিয়েছে মত্স্য আড়তগুলো। গত বছরের চেয়ে এ বছর ১১ হাজার হেক্টর কম জমিতে তরমুজ চাষ হয়েছে। তবে উত্পাদন হয়েছে বাম্পার। আর দাম ভালো হওয়ায় লাভবান হচ্ছে কৃষক। কৃষি সমপ্রসারণ অধিদপ্তরের আঞ্চলিক কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, চলতি বছর এ বিভাগের ৬ জেলায় ১৯ হাজার হেক্টর জমিতে তরমুজ আবাদ করা হয়েছে। মৌসুম শেষে মোট উত্পাদন দাঁড়াবে এবার ৯ লাখ ১৭ হাজার ৪৭ টন। বর্তমানে বাজারে আসা তরমুজ আগাম ফসল হিসাবেই ধরা হচ্ছে। আর এ পর্যন্ত কোনো প্রকার বাধা-বিপত্তি ছাড়াই কৃষক তরমুজ ঘরে তুলতে পারছেন। মৌসুমের শেষ পর্যন্ত কোনো প্রকার প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে বিপুল পরিমাণ তরমুজ কৃষক বিক্রি করতে পারবে। গত বছর শেষ দিকে আবহাওয়া অনুকূলে না থাকায় কৃষকরা লাভবান হতে পারেনি। তাই এবার কম জমিতে চাষাবাদ করেও লোকসান কাটিয়ে উঠছে কৃষকআঞ্চলিক কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক ওমর আলী জানান, মৌসুমের শেষ সময় পর্যন্ত কোনো প্রকার প্রাকৃতিক দুর্যোগ কিংবা লবণাক্ত পানি প্রবেশ না করলে বিপুল পরিমাণ তরমুজ বিক্রি করে কৃষকরা লাভবান হবেন। এ বছর কোনো প্রকার প্রাকৃতিক দুর্যোগ ছাড়াই পটুয়াখালীর কলাপাড়া, গলাচিপা ও রাঙ্গাবালী, বরগুনার পাথরঘাটা, পিরোজপুরের মঠবাড়ীয়া, ভোলা, চরফ্যাশন, দশমিনা, আমতলী, তালতলী, বামনা ও ঝালকাঠীসহ উপকূলীয় এলাকায় তরমুজের বাম্পার ফলন হয়েছে।মৌসুম পুরো শুরু হওয়ার সাথে সাথে ভালো মানের তরমুজ বাজারে আসতে শুরু করেছে। দিন-রাত একের পর এক ট্রলার বোঝাই করে তরমুজ আসছে পোর্ট রোডের মত্স্য আড়তগুলোতে। ফলে ইলিশ মৌসুমের মতই চরম ব্যস্ততা মত্স্য আড়তগুলোতে। ঘাটের শ্রমিক থেকে পরিবহন শ্রমিক সকলেই ব্যস্ত তরমুজ নিয়ে।মাত্র এক যুগ আগেও এ অঞ্চলে তরমুজের কোনো ফলন হতো না। নাটোরসহ উত্তরাঞ্চল থেকে আসা তরমুজ এ অঞ্চলের মানুষ ক্রয় করে খেতো। এখন প্রতি বছরই তরমুজের ফলন বৃদ্ধি পাচ্ছে। কৃষকরা ধান ও রবিশস্যের চেয়ে তরমুজ চাষে বেশি লাভবান হচ্ছেন।কৃষকরা জানান, তাদের প্রতি হেক্টর জমিতে তরমুজ চাষ করতে খরচ হচ্ছে ৮৫ থেকে ৯০ হাজার টাকা। প্রতি হেক্টরের উত্পাদিত তরমুজ বিক্রি করে কৃষকরা পাচ্ছেন প্রায় দেড় লাখ টাকানগরীর মত্স্য আড়ত ছাড়াও পোর্টরোড, বাজার রোডসহ সবকটি মোকামের খোলা জায়গা থেকে পথঘাট পর্যন্ত সর্বত্র তরমুজের ছড়াছড়ি। কীর্তনখোলা নদীর বুক চিরে পাড়ি দিয়ে একের পর এক তরমুজ বোঝাই ট্রলার এসে ভিড়ছে নগরীর পোর্টরোডের মোকামে। শত শত শ্রমিক ট্রলার থেকে তরমুজ আড়তে তুলে আনছেন। মোকামে চলছে দরাদরি আর কেনাবেচা।পোর্টরোড আড়তদার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি কার্তিক দত্ত বলেন, পোর্টরোড মোকামে প্রতিদিন গড়ে তরমুজ বোঝাই এক’শ ট্রলার আসছে। প্রতি ট্রলারে ২ থেকে ৩ হাজার পিস তরমুজ থাকে। আগামী কয়েকদিনের মধ্যে তরমুজের আমদানি আরো বাড়বে বলে জানান ব্যবসায়ীরা।