জাতীয় সংসদের ৫০টি সংরক্ষিত নারী আসনেও থাকছে বড় ধরনের চমক। পুরনোদের ছাপিয়ে নতুন নারীমুখের আধিক্য থাকবে একাদশ সংসদে। আলোচনায় দেড় শতাধিক নাম থাকলেও দশম সংসদে ছিলেন এমন বেশিরভাগ নারী সদস্য এবার বাদ পড়ছেন।
জাতীয় সংসদ (সংরক্ষিত মহিলা আসন) নির্বাচন আইন-২০০৪ অনুযায়ী, নির্বাচনের ফলাফলের গেজেট প্রকাশের ৩০ দিনের মধ্যে সংরক্ষিত নারী আসনে নির্বাচনের জন্য নির্বাচন কমিশন (ইসি) দল ও জোটভিত্তিক তালিকা তৈরি করবে এবং ভোটার তালিকা ইসিতে টানিয়ে দেবে। এরপর ৩০০ আসনের বিপরীতে ৫০টি সংরক্ষিত আসনে দল কিংবা জোটের অনুক‚লে বরাদ্দ করা হবে। গেজেট প্রকাশের নব্বই দিনের মধ্যে সংরক্ষিত নারী এমপি নির্বাচন শেষ করতে হবে ইসিকে।
গত ১ জানুয়ারি এবারের নির্বাচনের গেজেট প্রকাশ করেছে ইসি। এ হিসাবে ৩১ জানুয়ারির মধ্যেই সংরক্ষিত নারী এমপি পদে নির্বাচন প্রক্রিয়া শুরু করে ২৯ মার্চের মধ্যে শেষ করতে হবে। আজ সোমবার নতুন মন্ত্রিসভা গঠন ও শপথগ্রহণের পরপরই সংরক্ষিত নারী এমপি নির্বাচন প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হবে। নতুন এমপিদের একাদশ জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশনে যোগদানের লক্ষ্যে মধ্য ফেব্রæয়ারির মধ্যেই নির্বাচন ও শপথ সম্পন্ন করার সম্ভাবনা রয়েছে। ২১ বা ২২ জানুয়ারি এই সংসদের প্রথম অধিবেশন বসতে পারে। জাতীয় সংসদে ৩০০ জন সরাসরি নির্বাচিত হন। এরপর নির্বাচিত হন ৫০ জন সংরক্ষিত নারী এমপি। সংসদে আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতিতে প্রতি আসনের বিপরীতে সংরক্ষিত নারী আসন দাঁড়ায় শূন্য দশমিক ১৬৭টি। অর্থাৎ প্রায় প্রতি ছয়টি আসনের জন্য একটি দল ও জোট একজন করে সংরক্ষিত নারী এমপি পাবে। এ পদ্ধতিতে এবার আওয়ামী লীগ তাদের নির্বাচিত ২৫৭ জন এমপির জন্য প্রায় ৪৩ জন সংরক্ষিত এমপি পাবে। জাতীয় পার্টি ২২ জন নির্বাচিত এমপির বিপরীতে চারজনের মতো নারী এমপি পাবে। এবার আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটের ২৮৮ জন নির্বাচিত সংসদের বিপরীতে ৪৮টি আসন পাওয়ার কথা। সংসদে ১৪ দল ও মহাজোটের শরিক বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, জাসদ, বিকল্পধারা, তরিকত ফেডারেশন, জাতীয় পার্টি (জেপি) এবং স্বতন্ত্র প্রতিনিধিত্বও রয়েছে। তবে তাদের কারো আসন তিনের বেশি নেই। ফলে তাদের সংরক্ষিত নারী এমপি পেতে হলে জোট থেকে পেতে হবে। এ ছাড়া জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট থেকে নির্বাচিত সাতজন এমপি রয়েছেন, যাদের পাঁচজন বিএনপির ও দুজন গণফোরামের।
সূত্র জানায়, ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের প্রয়াত ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এম এ আজিজের স্ত্রী রাবেয়া আজিজ, কক্সবাজারের সাবেক সাংসদ ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি মোস্তাক আহমেদ চৌধুরীর স্ত্রী জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি কানিজ ফাতেমা, রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটনের স্ত্রী ও রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি শাহীন আক্তার রেইনি, বঙ্গবন্ধু সৈনিক লীগের প্রয়াত সভাপতি বজলুর রহমানের স্ত্রী শিরিন আক্তার, বঙ্গবন্ধুর চাচাত ভাই শেখ হাফিজুর রহমান টোকনের স্ত্রী শেখ এ্যানি রহমান, প্রধানমন্ত্রীর প্রয়াত বিশেষ সহকারী মাহবুবুল হক শাকিলের স্ত্রী নিলুফার আঞ্জুম পপি, তাঁতী লীগের কার্যকরী সভাপতি সাধনা দাশগুপ্তা, শহীদ বুদ্ধিজীবীর সন্তান নুজহাত চৌধুরী, শমী কায়সার, ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্য মারুফা আক্তার পপি, মেরিনা জাহান, পারভীন জামান কল্পনা, কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক রোকেয়া সুলতানা, শিক্ষা ও মানবসম্পদবিষয়ক সম্পাদক শামসুন নাহার চাঁপা, মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাহমুদা খাতুন কৃক, যুব মহিলা লীগের সভাপতি নাজমা আক্তার, সহসভাপতি কেশোয়ারা সুলতানা সালমা, সহসভাপতি জাকিয়া পারভীন, পারভীন খায়ের, নারগিস মাহতাব, খায়রুন নাহার রিমি, ফৌজিয়া আক্তার পপি, ইসরাত জাহান নাসরিন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শাহনাজ পারভীন ডলি, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন ঝুমা, সাধারণ সম্পাদক নিলুফার রহমান, উত্তরের সাধারণ সম্পাদক তাহেরা জামান লুৎফা, ডেইজি সারোয়ার, রাশেদা পারভীন, শামীমা রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শামসুর নাহার রমা, খোদেজা নাসরিন, নাদিয়া পারভীন, ঢাকা মহানগর (উত্তর) আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা বিষয়ক সম্পাদক ও নির্বাচন পরিচালনা টিমের সদস্য লে. কর্নেল (অব.) ডা. কানিজ ফাতেমা সুলতানা, সাভার উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি হাসিনা দৌলা, বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের প্রয়াত সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা হেমায়েত উদ্দিন আহমেদের মেয়ে মহিলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও বরিশাল জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি মোরশেদা বেগম লিপি, মহিলা আওয়ামী লীগের সংস্কৃতিবিষয়ক সম্পাদক রোকেয়া প্রাচী, সিরাজগঞ্জ থেকে মহিলা আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জান্নাত আরা হেনরী, পটুয়াখালী জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি কাজী হেলেন, খাগড়াছড়ি জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বাসন্তী চাকমা, ঝিনাইদহ জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক খালেদা খানম, মহিলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শিখা চক্রবর্তী, অভিনেত্রী জ্যোতিকা জ্যোতি, তারিনের নাম রয়েছে আলোচনায়। তবে বিশেষ বিবেচনায় সংসদে আবারো দেখা যেতে পারে আমাতুল কিবরিয়া কেয়া চৌধুরী, সানজিদা খানম ও মাহজাবীন খালেদ বেবীকে। এ ছাড়া ঢাকা মহানগর উত্তর যুব মহিলা লীগের সভাপতি সাবিনা আক্তার তুহিন ও যুব মহিলা লীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট ফজিলাতুন নেসা বাপ্পি সংসদে থাকতে চেষ্টা তদবির করছেন।