রোজায় কেমন হবে খাদ্যাভ্যাস?

রোজায় কেমন হবে খাদ্যাভ্যাস?

আমাদের দেশে মানুষের মধ্যে রমজানে যে খাদ্যাভ্যাস লক্ষ্য করা যায়, তা পুরোপুরি স্বাস্থ্যসম্মত নয়। সেহরি ও ইফতারে খাওয়া নিয়ে একটা হুলস্থুল পড়ে যায়। সবারই পছন্দের খাবারটি খেতে ইচ্ছে করে। কিন্তু রমজান মাসে আমাদের খাবারের প্রতি বিশেষ লক্ষ্য রাখতে হবে। রমজানের সেহরি ও ইফতারে কী খেলে স্বাস্থ্য খারাপ হবে আর কিভাবে সব কিছু নিয়ন্ত্রণে রেখে খেতে হবে এ নিয়ে  কথা বলেন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের প্রধান পুষ্টি কর্মকর্তা অধ্যাপক আনিসুর রহমান বাদল।

রোজায় সেহরি ও ইফতার কেমন হওয়া উচিত?

অধ্যাপক আনিসুর রহমান বাদল: রমজানের খাবারের প্রধান পর্যায় দুটি সেহরি ও ইফতার। প্রথমে সেহরির প্রসঙ্গে আসা যাক। মূলত বছরের ১১ মাস স্বাভাবিক নিয়মে খাওয়া-দাওয়া ও ঘুম হয়। তারপর হঠাৎ করেই সেহরি খাওয়ার নিয়মটি শুরু হয়। তাই এদিকে বিশেষ যত্ন না নিলে স্বাস্থ্য বিপর্যয় ঘটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। স্বাভাবিকভাবে যে কোনো ধরনের খাবারই সেহরিতে খাওয়া যায়। তবে খেয়াল রাখতে হবে খাবারটা যেন সহজপাচ্য ও স্বাস্থ্যসম্মত হয়। ভাত বাঙালির মুখ্য খাবার। তাই সেহরিতে অবশ্যই সাদা ভাত রাখবেন। তবে ভাতের সঙ্গে রাখতে হবে উচ্চ প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার যেমন মাছ, মাংস ও ডিম। খরচ কমাতে চাইলে ভাতের সঙ্গে শুধু ডিম ও ডাল। ডাল উদ্ভিজ প্রোটিন বলে এতে ক্ষতিকর চর্বি নেই। সেহরির খাবার তালিকায় যে কোনো একটি সবজি থাকা বাঞ্ছনীয়। ফুলকপি, বাঁধাকপি, শিম, পেঁপে, করলা, আলু, টমেটো এর কয়েকটি বা যে কোনো একটি রাখলে চলবে।

এবার আসি ইফতার প্রসঙ্গে, বেশির ভাগ লোকই মনে করেন, সারা দিন না খাওয়ার অভাবটুকু ইফতারে পুষিয়ে নেবেন। কিন্তু এটা একটা ভুল ধারণা। ইফতার শুরু করবেন শরবত দিয়ে। বাজারে অনেক কৃত্রিম রঙ মেশানো শরবত পাওয়া যায়, সেসব অবশ্যই পরিহার করবেন। ইফতারে ফলের রস বেশ উপকারী। বুট, ছোলা ও মুড়ি খেতে পারেন এ সময়। দই, চিঁড়া ও কলা খেলে ভালো। তবে প্রচলিত বেগুনি ও পেঁয়াজু সর্বদা পরিহার করবেন। তেলে ভাজা এসব খাবার স্বাস্থ্য বিপর্যয় ঘটাতে পারে। ইফতারে খেজুর ও বিভিন্ন ফল রাখা ভালো। সেহরি এবং ইফতারির সময় প্রচুর পানি পান করবেন।

রোজা রাখলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে এ কথা কি ঠিক?

অধ্যাপক আনিসুর রহমান বাদল: কিছুটা ঠিক। বিশেষ করে যারা রোজার বাইরে অসংযত জীবনযাপন করছেন। রোজায় এক ধরনের শৃঙ্খলাবোধ কাজ করে। সময়মতো আহার গ্রহণ, বিশ্রাম, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, ধূমপান ও মদ্যপান বর্জন প্রভৃতি বিষয় প্রকারান্তরে শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর সহায়ক উপাদান হিসেবে ভূমিকা রাখে।

রোজা রাখলে হৃদরোগীদের কোনো অসুবিধা হবে কি-না

অধ্যাপক আনিসুর রহমান বাদল: সাধারণত অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। তা ছাড়া এ সময়ে খাদ্য নিয়ন্ত্রণে রাখার একটা সুযোগ সৃষ্টি হয় বলে তাদের রক্তের কোলেস্টেরলের মাত্রাও ঠিক থাকে। রোজায় পানিশূন্যতায় আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে কি-না হ্যাঁ, থাকে যদি আপনি সেহরি ও ইফতারে পর্যাপ্ত পানি পান না করেন। সেহরি ও ইফতারে পর্যাপ্ত পানির সঙ্গে শাকসবজি ও ফলমূল খাবেন। তাহলে পানিশূন্যতার পাশাপাশি কোষ্ঠকাঠিন্য থেকেও রেহাই পাওয়া যাবে।

দিনের শেষে মাথা ব্যথা করলে ইফতারের সঙ্গে সঙ্গেই ব্যথানাশক ওষুধ খাওয়া যাবে কি-না?

অধ্যাপক আনিসুর রহমান বাদল: ব্যথানাশক ওষুধ খাবার কারণে পেটে তীব্র ব্যথা এবং অন্ত্র ফুটো হয়ে যাওয়া সমস্যার সৃষ্টি হয়। মূলত মাথাব্যথা করলে ইফতারের সঙ্গে সঙ্গেই ব্যথানাশক ওষুধ যেমন এসপিরিন বা ডাইক্লোফেনাক সোডিয়াম খাওয়া উচিত নয়। কিছু খেয়ে তারপর এসব ওষুধ খেতে হবে। যাদের পেপটিক আলসারের ইতিহাস আছে, তারা এন্টাসিড ও রেনিটিডিন খেয়ে এসব ওষুধ খাবেন।