বাংলাদেশ ছাত্রলীগকে আরও গতিশীল ও বেগবান করার লক্ষ্যে সকল সাংগঠনিক ইউনিটের অন্তর্গত মাধ্যমিক স্কুলে ‘ছাত্রলীগের স্কুল কমিটি’ গঠন করার নির্দেশ প্রদান করেছেন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় সংসদ । প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জনসম্মুখে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় সংসদ ।
‘ছাত্রলীগের স্কুল কমিটি’ গঠন করার নির্দেশ প্রদানের পর থেকে সোশ্যাল মিডিয়াতে এ বিষয়টি নিয়ে বেশ আলোচনা সমালোচনা হচ্ছে । এরই পরিক্রমায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম সাধারন সম্পাদক (১) এইচ এম আল আমিন আহমেদ ‘ছাত্রলীগের স্কুল কমিটি’ নিয়ে তাঁর ভাবনা তুলে ধরেছেন ।
ছাত্রলীগের সাবেক উদীয়মান এই নেতা , ‘স্কুলে ছাত্রলীগের কমিটি’ গঠনের তীব্র বিরোধীতা করে বেশ কিছু যুক্তি আরোপ করেন । তাঁর ভাবনাটি নিম্নে আপনাদের জ্ঞাতার্থে তুলে ধরা হলোঃ
বাংলাদেশ ছাত্রলীগের নতুন পদক্ষেপ স্কুল পর্যায়ে ছাত্রলীগের কমিটি গঠনের সিদ্ধান্তের আমি তীব্র বিরোধিতা করছি।শুধু তীব্র বিরোধিতা বললে ভুল হবে,এই পদক্ষেপ কে ধিক্কার জানাই।
কেন তার ব্যাখ্যা দিচ্ছি, দয়া করে পুরোটা না পড়ে কোন ধারনা মনে পোষন করবেন না।
আমরা সকলেই অবহিত আছি যে বর্তমান ছাত্র রাজনীতি অতীতের ইতিহাস ঐতিহ্যকে ম্লান করে বর্তমানে কলুষিত হয়েছে(কলুষিত হয়েছে তা নয়;কলুষিত করা হয়েছে)।যদিও ছাত্র রাজনীতির ফলে দেশের জাতীয় ইস্যু গণতন্ত্র রক্ষা, সার্বভৌমত্ব রক্ষার ইস্যুতে ছাত্রনেতাদের ভুমিকা থাকলেও সামগ্রিকভাবে যদি ছাত্র রাজনীতির ফলাফল নির্ণয় করি তাহলে দেখা যাবে ছাত্ররাজনীতিকে অসুস্থ পর্যায়ে নিয়ে যাওয়াতে এবং জাতীয় রাজনীতিতে দেশপ্রেমের অবক্ষয়ের কারণে আজকে মেধাবী হাজার হাজার ছাত্রনেতার ভবিষ্যৎ অন্ধকারের দিকে, এমনকি জীবনের ছন্দপতন হয়ে আজকে অনেকেই বিপথগামী হবার ইতিহাস ও রয়েছে !
তারপর ও আমি বলবো দেশের গণতন্ত্র চর্চা, দেশপ্রেম, দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা, স্বাধীনতা বিরোধী অপশক্তিকে প্রতিরোধ করতে ছাত্ররাজনীতির বিকল্প নাই।৫২, ৭১, ৬৬, ৬৯, ৯০, ১/১১, ০৫ই জানুয়ারি নির্বাচন,যুদ্ধ অপরাধীদের বিচার বাস্তবায়ন এসব ইস্যুতে ছাত্ররাজনীতির রয়েছে দেশের স্বার্থে গৌরব উজ্জ্বল ইতিহাস।
তারপর ও মাধ্যমিক পর্যায়ে ছাত্র রাজনীতি প্রবেশ করানোর চিন্তা কে আমি ধিক্কার জানাই।
আমি বঙ্গবন্ধুর আদর্শের রাজনীতিতে বিশ্বাস করি,আমার কাছে দলের চেয়ে দেশ বড়,মাধ্যমিক পর্যায়ে ছাত্ররাজনীতি চালু করার মাধ্যমে এদেশের যুব সমাজ নিশ্চিত ধ্বংসের পথে যাবে,আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে দেশের সম্পদ হিসেবে গড়ে তোলার সম্ভাবনা কে ধ্বংস করবে বলে আমি আশংকা করছি।কেননা প্রাথমিক বিদ্যালয়,মাধ্যমিক বিদ্যালয় এগুলো হলো শিক্ষা ব্যবস্থার ভিত্তি,সেখানে ছাত্ররাজনীতি প্রবেশ করিয়ে দিলে দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের প্রতিভা বিকাশে বাধাগ্রস্ত হবে,শুধু তা ই নয় বরং আমাদের জনসম্পদ বোঝা হয়ে দাঁড়াবে!
এর স্বপক্ষে আমি শত শত যুক্তি উপস্থাপন করতে পারবো~~~~~
তার মধ্যে অন্যতম কিছু কারন উল্লেখ্য করছি।
১। বাংলাদেশের আইনে আমার জানা মতে ১৬ বছর বয়স পর্যন্ত শিশু।আর একটা ছাত্র SSC পাশ করে নুন্যতম ১৫ বছর বয়সে।তাহলে কোন যুক্তিতে শিশুদের ছাত্ররাজনীতিতে সম্পৃক্ত করা হবে?
২। মাধ্যমিক পড়ুয়া একটা ছেলে নেতৃত্ব দিবে নাকি পড়াশোনা করবে? তাছাড়া ৭/১০/১২/১৫ বছরের একটা ছাত্র কিভাবে নেতৃত্ব দেয়ার মতো সক্ষমতা অর্জন করবে? এটা কি বাচ্চার হাতে অস্ত্র তুলে দেয়ার সামিল নয় ?
৩। মাধ্যমিক পর্যায়ে ১টা ছাত্রকে ১০টি বিষয় পাঠ করতে হয়, ছাত্ররা কি পড়াশোনা করবে নাকি ছাত্র রাজনীতির নামে নেতার চামবাজি, মিটিং মিছিল করবে?
৪। সবচেয়ে বড় ক্ষতিকারক বা বিপদজনক যে বিষয়টি হবে বলে আমি আতংকিত এবং যার প্রতিক্রিয়ায় আমার এই বিরোধিতা তা হলো ছাত্রলীগ এই কার্যক্রম শুরু করলে পাশাপাশি অন্য সংগঠন গুলোও শুরু করবে।যার ফলে শিবির তাদের আদর্শ মাধ্যমিক পর্যায়ের কোমলমতি ছাত্রছাত্রীদের মাঝে প্রতিস্থাপন করতে উঠে পড়ে লাগবে এবং সফল ও হবে।এতে করে ভিন্ন ভিন্ন দলের মতাদর্শ সৃষ্টি হবে, আবার একই সংগঠনের নেতৃত্ব পাবার আশায় অভ্যন্তরীণ সংঘাত সৃষ্টি হবে।যার ফলে পড়াশোনার ক্ষতি হবে, শুধু পড়াশোনার ক্ষতি -ই নয়, বলতে গেলে একটি সম্ভাবনাময় অবুঝ শিশুর ভবিষ্যৎ কে নিশ্চিত অন্ধকারের দিকে নিয়ে যাবে।
৫। বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, বাংলাদেশে ক্রিকেট খেলা আবির্ভাবের ফলে আমার দেখা অনেক মেধাবী সহপাঠী পড়াশোনা থেকে পিছিয়ে পড়েছে, অনেকেই ঝরে পড়েছে। যেখানে বর্তমান আওয়ামীলীগ সরকার, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা ঝড়ে পড়া ছাত্র ছাত্রীদের সংখ্যা রোধ করে শিক্ষার হার বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন উপবৃত্তি,উচ্চমাধ্যমিক পর্যন্ত বিনামুল্যে বই বিতরণ সহ বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহন করেছেন, সেখানে মাধ্যমিক পর্যায়ে ছাত্রলীগের শাখা খোলা মানে প্রধানমন্ত্রীর ভালো উদ্যোগ গুলোকে পরোক্ষভাবে অবমাননা করা,শুধু অবমাননা ই নয় পরোক্ষভাবে বাঁধাগ্রস্ত করা।
৬। আমরা যারা বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ পর্যায়ে রাজনীতি করি, সেখানে আমাদের পিতা মাতা পরিবার, শিক্ষকদের কতটুকু সম্মতি থাকে ? ১০% পিতা মাতা কিংবা শিক্ষকদের ও সমর্থন থাকেনা । আমাদের পরিবার সব সময় আমাদের কে নিয়ে একটি আতংকে থাকেন।সেখানে মাধ্যমিক স্কুল পর্যায়ে ছাত্রলীগের রাজনীতি চালু করার পদক্ষেপের সিদ্ধান্তটিকে এদেশের পিতা, মাতা, পরিবারবর্গ, শিক্ষকবৃন্দ নেতিবাচক হিসেবে দেখবেন এবং ছাত্রলীগের এই কার্যক্রমের ফলে বর্তমান সরকার তথা বঙ্গবন্ধুর আদর্শ, এবং তার কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার যে দেশপ্রেমের নিদর্শন তার ব্যাঘাত ঘটবে।
সাধারন জনগনের কাছে এই পদক্ষেপের জন্য সকল অর্জন বিসর্জন ও হতে পারে।!
এমন অসংখ্য নেতিবাচক দিক রয়েছে,,যার সব উল্লেখ্য করতে গেলে লেখা অনেক বৃদ্ধি পাবে, তাই সংক্ষিপ্তভাবে কিছু তথ্য উল্লেখ্য করলাম ।
আমি মনে প্রানে বিশ্বাস করি, এই সিদ্ধান্ত যে বা যারা নিয়েছে তারা আমার নেত্রী, বঙ্গবন্ধুর কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার মতামত না নিয়েই নিয়েছেন। মিডিয়া কাভারেজ কিংবা নিজেদের অতিরিক্ত ছাত্ররাজনীতি বান্ধব প্রমানের চেষ্টা না করে ছাত্রলীগের সভাপতি সাধারন সম্পাদকের নিকট বিনীত অনুরোধ থাকবে এই ধরনের সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে জননেত্রী শেখ হাসিনার সাথে একবার আলোচনা করে নিবেন। অন্যথায় আপনাদের ভুলে, খেসারত দিতে হতে পারে বিশ্বের ৫জন সৎ প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে তৃতীয় স্থান অধিকারী, মাদার অব হিউম্যানিটি, আমার আস্থার শেষ ঠিকানা জননেত্রী শেখ হাসিনার।
তাই প্লিজ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের আগে একবার ভাবুন ??
আপনাদের দুজনের প্রতি সম্মান রেখেই বলছি, আপনারা দুজন মাধ্যমিক পর্যায়ে রাজনীতি না করলেও আমি করেছি। আমি ২০০৩ সালে ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলাম।
আমার কিছু বাস্তব অভিজ্ঞতা আছে মাধ্যমিক পর্যায়ে রাজনীতি করতে একটা ছাত্রের শিক্ষা জীবনে কিভাবে ব্যাঘাত ঘটতে পারে। আপনাদের কাছে বিনীত অনুরোধ থাকবে, আপনারা মাধ্যমিক পর্যায়ে ছাত্রলীগের শাখা না খোলে বরং বাংলাদেশ ছাত্রলীগের উদ্যোগে মাধ্যমিক পর্যায়ে মাঝে মধ্যে কিছু কর্মসূচি গ্রহন করতে পারেন যেসব কর্মসূচি গুলো মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, বঙ্গবন্ধুর জীবনাদর্শ নিয়ে আলোচিত হবে,যার ফলে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের শিবির বিপথগামী করতে পারবেনা।
আমার লেখায় কেউ মনঃক্ষুণ্ণ হলে আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত,ছাত্রলীগের একজন সাবেক কর্মী হিসেবে ছাত্রলীগের ভাল মন্দ নিয়ে মতামত ব্যক্ত করা, পক্ষে বিপক্ষে যুক্তি দেয়া আমার সারা জীবনের অধিকার।এই সংগঠন কারো পৈতৃক সম্পত্তি নয়,একমাত্র জননেত্রী শেখ হাসিনা ছাড়া,
কারণ উনার বাবার হাতে গড়া সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ।আমার ধৃষ্টতা দেখে যদি কারো মনে প্রশ্ন জাগে তাহলে আমি বঙ্গবন্ধুর একটি উক্তি ব্যবহার করে শেষ করবো,
“বাঙ্গালী একবার মরে, বার বার নয়।”
আমিও একবার মরবো,
কিন্তু ঈমান বিক্রি করবোনা।
আমি একটু একটু করে বলতে শিখেছি,
এই দেশ আমার, আমি আমার দেশকে মায়ের মত-ই ভালবাসি।!
তাই দেশের স্বার্থবিরোধী যে কোন কর্মকান্ডের বিরোধীতা করা আমার ঈমানি বঙ্গবন্ধুর আদর্শপন্থী দায়িত্ব।
জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু