(মানুষের যন্ত্রণা নিবারণে, যুগান্তকারী এক সহজ পথ, যা অঙ্কের মতো সত্য।)
বুকের ব্যথাটা আজকাল বড় বাড়ছে আমার! আকাশের দিকে চেয়ে ছুটছে মানুষ। অথচ পায়ের নীচে মাটি? সেটা ক্রমশ দূরে সরে যাচ্ছে। মানুষ কি জানে না-আকাশ কেবল উড়ার জন্য, বাসের জন্য নয়?
জীবন ক্ষণস্থায়ী, জীবনের যা কিছু-তাও ক্ষণস্থায়ী। কিন্তু মানুষের জীবনের ভঙ্গুরতা, দিন দিন দ্রুত গতিতে বাড়ছে। ক্ষণস্থায়ী সুখ আরও বেশি ক্ষণস্থায়ী হচ্ছে। ক্ষণস্থায়ী প্রেম আরও বেশি ক্ষণস্থায়ী হচ্ছে। প্রাচুর্য্যের সাধনা করতে গিয়ে মানুষ, সব কিছু স্বল্প করে দিচ্ছে। সুখের সাধনা করতে গিয়ে মানুষ, আরও বেশি অসুখ ডেকে আনছে। প্রেমের সাধনা করতে গিয়ে মানুষ, আরও বেশি ঘৃণা বুকে ভরছে।
মানুষ যা চাইছে, ঠিক তার উল্টোটা ঘটছে। তবুও মানুষ স্বীকার করতে চায় না- সে ভুল পথে হাঁটছে! মানুষ বইয়ে পড়ছে এক, ব্যবহারিক জীবনে প্রয়োগ করছে তার ঠিক উল্টো। মানুষ মুখে বলছে এক, জীবনে প্রয়োগ করছে তার ঠিক উল্টো।
মানুষ প্রথমে লোককে মিথ্যে বলতে শিখে। তারপর সে নিজেকে মিথ্যে বলে। মানুষ প্রথমে অন্যকে ঠকাতে শিখে, তারপর সে নিজেকে ঠকায়। এই মিথ্যে আর ঠকানোর অভ্যাস এতো গভীরে শিকড় গাড়ে যে, মানুষ বুঝতে পারে না-সে নিজে, নিজেকে ঠকাচ্ছে, নিজের গলা টিপে খুন করছে। এইভাবেই-তার ক্ষণস্থায়ী জীবন আরও বেশি ক্ষণস্থায়ী হয়। তার ক্ষণস্থায়ী সুখ, আরও বেশি ক্ষণস্থায়ী হয়।
নিজের যন্ত্রণা নিজে বয়ে আনি আমি, কিন্তু আমার যন্ত্রণার জন্য-আমার স্ত্রীকে দোষারোপ করি আমি, পুত্রকে গালি করি আমি, প্রতিবেশীকে গালমন্দ করি আমি, সরকারকে খিস্তি খেউর করি আমি। সকলকে বদলাতে বলি আমি, কেবল নিজেকে বদলাতে চাই না আমি। প্রত্যেকেই অন্যকে বদলাতে চায়, কিন্তু কেউই নিজেকে বদলাতে চায় না। ফলে-এই পৃথিবীর কোন কিছুই বদল হয় না।
আজ প্রায় দুই দশক হয়ে গেলো, অরুণ মাজী মানুষের যন্ত্রণা নিয়ে গবেষণা করছে। তার গুরুত্বপূর্ণ একটা উপলব্ধি, তোমাদেরকে খুব ছোট্ট করে আজ বলব।
বল তো-মানুষ অন্যকে মিথ্যে বলে কেন? মানুষ সেই মিথ্যে থেকে, বেশি লাভ পেতে চায় বলে। বেশি লাভের আশা, আসলে কি? লোভ।
মানুষ প্রথমে লোককে মিথ্যে বলতে শিখে। তারপর সে নিজেকেই মিথ্যে বলে। এর অর্থ হল- আমি যা ভাবি, বাস্তবে আসলে সেটা মিথ্যে। এর অর্থ হল-আমি যখন ভাবি, কোন কিছু আমি আমার ভালর জন্য করছি, প্রকৃতপক্ষে আমি কিন্তু আমার খারাপের জন্য করছি। এইভাবে আমি আমার নিজেকে, ক্রমশ ধ্বংস করছি। এজন্যই মানুষ-সুখ খুঁজতে গিয়ে অসুখ ডেকে আনে। প্রেম করতে গিয়ে ঘৃণা বুকে ধরে। লোভের জন্য, মিথ্যে ঘটে। মিথ্যের জন্য, সব কিছু উল্টো ঘটে।
মানুষকে যদি আত্মহত্যা থেকে বাঁচাতে হয়, তাহলে মানুষকে-
1. লোভ কমাতে হবে। 2. মিথ্যে বলা বন্ধ করতে হবে।
লোভ কমলে মিথ্যে অটোমেটিক কমবে। কিন্তু মানুষের লোভ কমবে কি করে? সরল সাধারণ জীবনে ফিরে যাও হে মানুষ, সরল জীবনে ফিরে যাও।
তোমার ড্রয়ারে কতগুলো শাড়ি? কুড়িটা। শেষ এক বছরে, তোমার স্ত্রী তার কটা শাড়ি ব্যবহার করেছে? পাঁচটা। তাহলে বাকি পনেরোটা শাড়ি কি? অপচয়।
এর সার্বিক অর্থ কি? তোমার চার হাজার টাকা আয়ের, তিন হাজার টাকা তুমি অপচয়ের উপর খরচ করছো। ওই এক্সট্রা তিন হাজার টাকা রোজগার করতে গিয়ে তুমি কি কি করছো?
1. তুমি অনাবশ্যক গাধার খাটুনি খেটেছো।
2. তোমার স্ত্রী পুত্র বাবা মা ইত্যাদিকে, কম সময় দিয়েছো।
3. তুমি নিজে একটু রিল্যাক্স করতে পারো নি।
4. তুমি হয়তো ওই এক্সট্রা তিন হাজার টাকা রোজগার করতে গিয়ে তোমার গরীব কাস্টমারকে ঠকিয়েছো। তোমার বন্ধুকে অন্যায় ভাবে ঠকিয়ে, তার প্রাপ্য থেকে তাকে বঞ্চিত করেছো। ইত্যাদি।
তার অর্থ-ওই এক্সট্রা তিন হাজার টাকা রোজগার করতে গিয়ে, তুমি নিজেকে যন্ত্রণা দিয়েছো, অন্যকে যন্ত্রণা দিয়েছো। এত মূর্খ আর ঘৃণ্যের মতো কাজ করে তুমি কি লাভ করলে? “জানিস? আমার বৌয়ের ড্রয়ারে কুড়ি খানা শাড়ি! “ছিঃ ছিঃ শুধু এতো টুকু মিথ্যে গর্বের জন্য-তুমি এতো হীন আর জঘন্য হতে পারলে?
পাক্কা পাঁচ বছর- আমি নিজের উপর একটা পরীক্ষা করেছি। আমি এই পাঁচ বছর কেবল নীচের জিনিসগুলো দিয়ে জীবন কাটিয়েছি-
1. ল্যাপটপ আর মোবাইল ফোন
2. তিনটে জিন্স, তিনটে টি শার্ট, তিনটে শার্ট, দু জোড়া জুতো, দুটো টাওয়েল, টয়লেটের কিছু জিনিস। ব্যাস।
এ সব কিছুই আমি, একটা সুটকেসে ঢুকিয়ে রাখতে পারতাম। কেবল একটা সুটকেস নিয়ে, এই পাঁচ বছর আমি-অস্ট্রেলিয়ার পাঁচটা বিভিন্ন শহরে থেকেছি, আর কাজ করেছি। এই পাঁচ বছর ছিল- আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ সময়। যেহেতু আমার খুব স্বল্প জিনিস ছিল-আমার কোন টেনশন ছিল না।
আজই- তোমার ঘরের সব জিনিস গুলোকে নিয়ে, তুমি হিসেবে কর। কোন কোন জিনিস তুমি- শেষ এক বছরে, অন্তত দুবার ব্যবহার করেছো? সেগুলো- তোমার প্রয়োজনীয়। বাকি সব জিনিস অনাবশ্যক। সেগুলো গরীবকে বিলিয়ে দাও, নইলে আজই পুড়িয়ে দাও। দেখবে- তোমার ঘরের 90% জিনিস সব হাওয়া। তোমার ঘরটা তখন বেশি সুন্দর লাগবে। তোমার মনটাও তখন অনেক বেশি হাল্কা হাল্কা লাগবে।
আমি আইনস্টাইনের চেয়েও, বেশি মূল্যবান এক সূত্র আবিষ্কার করেছি। কি সেটা-
তোমার একটা গাড়ি থাকলে, তোমার একটা টেনশন। তোমার দুটা গাড়ি থাকলে, তোমার দুটা টেনশন। যত বেশি থাকবে, তত বেশি যন্ত্রণা। যত কম থাকবে, তত বেশি তুমি মুক্ত আর সুখী। সূত্রটাকে প্রকাশ করতে, ইংরেজীতে আমি একটা ছোট্ট কবিতা লিখেছি-
“more shit you have, more shit you have”
এর অর্থ-
“more shit (belongings)you have, more shit (pain)you have”
জীবনে হাল্কা হও হে মানুষ, জীবনে হাল্কা হও। গাধার মতো বোঝাই যদি বইবে, গলা ছেড়ে গাইবে কখন?